ময়মনসিংহে গোসল করতে গিয়ে পুকুরে ডুবে রায়হান নামে ১০ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রায়হান নগরীর কলেজ রোড একাডেমী এলাকার শাহপরান ও শারমিন আক্তারের ছেলে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল টাউন হলে ঈদগাহ মাঠের পুকুর থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস ময়মনসিংহ ইউনিটের স্টেশন অফিসার জুলহাস উদ্দিন। ফায়ার সার্ভিস ও পরিবার সূত্র জানায়, সকাল ১ টায় নিহত রায়হান ও তার বন্ধুরা মিলে আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে খেলতে গিয়েছিল। খেলা শেষে সবাই পুকুরে নামে। গোসল শেষে সবাই উঠে এলেও রায়হানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তারা গিয়ে বিকেলে পরিবারের কাছে খবর দেয়।
পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ফায়ার সার্ভিসকে জানানো হলে, ফায়ার সার্ভিসের একটি ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে। রাত ৮টার দিকে রায়হানকে ডুবুরি দল উদ্ধার করে।
স্টেশন অফিসার জুলহাস উদ্দিন সমকালকে জানান, শিশুটির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অভিভাবকের অসচেতনতা এবং সাঁতার না জানার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
কমছে না অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, বাড়ছে দুর্ঘটনা
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। রাজধানী থেকে ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা ও হালুয়াঘাট স্থলবন্দরে যাতায়াতকারীদের একমাত্র ভরসা সড়কটি। প্রতিদিন হাজারো যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক আসা-যাওয়া করে এই পথে। ঈদ উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের শৃঙ্খলা এক রকম ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনের শিথিলতায় দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এ সড়কের পরিস্থিতি। বিশেষ করে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য চরম আকার ধারণ করেছে। অদক্ষ চালকরা কয়েকটি জায়গা থেকে যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলাচল করছে। ফলে দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। এবার ঈদুল ফিতরের সময় মহাসড়কটিতে ঘটা বেশির ভাগ দুর্ঘটনাই ছিল অটোরিকশার সঙ্গে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষ।
ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জ থেকে ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়কটি পুরোপুরি অটোরিকশার দখলে চলে গেছে। সরেজমিন গতকাল রোববার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্রিজ, ঢাকা বাইপাস, দীঘারকান্দাসহ কয়েকটি পয়েন্টে গিয়ে অটোরিকশার জট দেখা যায়। বাইপাস ও চরপাড়া মোড় থেকে ত্রিশাল অভিমুখে ছেড়ে যেতে দেখা যায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহিন্দ্রা নামে পরিচিত অটোরিকশার সারি।
ঢাকাগামী কয়েক বাসযাত্রী ও পথচারী জানান, পুলিশ এসব যানবাহন আটকে মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়। আবার তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মহাসড়কে চলে আসে। এরা বেশির ভাগই রেজিস্ট্রেশনবিহীন। এদের নেই কোনো ফিটনেস। এরা বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালায়। ফলে প্রতি মাসে এসব যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন অনেক মানুষ।
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ হয়ে বিভাগের অন্যান্য জেলায় যেতে হলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স পরিদর্শক ইফতেখারুল ইসলাম মুরাদের তথ্যমতে, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে লাইসেন্সধারী অটোরিকশা চলে প্রায় ১২ হাজার। কিন্তু বাস্তবে লাইসেন্সবিহীন অবৈধ অটোরিকশা চলে আরও ২০ থেকে ৩০ হাজার।
সূত্র বলছে, এসব অটোরিকশা নগরীর ভেতর জায়গা না পেয়ে মহাসড়কে চলে যাচ্ছে। থ্রিহুইলারগুলো নগরীর চরপাড়া থেকে ঢাকা বাইপাস হয়ে ত্রিশাল পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে। আর এ পথেই ঢাকাগামী বাস-ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশির ভাগ দুর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। বাস্তবে সিটি করপোরেশন এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব ও বর্তমানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সুমনা আল মজিদ সমকালকে বলেন, লাইসেন্স দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। লাইসেন্স নিয়ে যদি অটোরিকশাগুলো মহাসড়কে চলে যায়, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের না।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দীঘারকান্দা এলাকায় কথা হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক কামাল মিয়ার সঙ্গে। তাঁর গাড়িটি নিবন্ধিত কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, অটোরিকশা নিবন্ধন করা এত সহজ না। আমরা সবাইকে ম্যানেজ করে গাড়ি চালাই। বর্তমানে যাত্রীরা বাসের চেয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক হান্নান বলেন, শহরের ভেতরে গাড়ি চালিয়ে শান্তি নেই। যানজটের কারণে চালানো যায় না। এ জন্য আমরা মহাসড়কে গাড়ি চালাই।
এদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পুলিশের সামনে দিয়েই চলাচল করছে অবৈধ অটোরিকশা। কিন্তু তাদের কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বাসচালকদের অভিযোগ, সিএনজির দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়ে গেছে, এর যন্ত্রণায় সড়কে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। একে তো দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে, অন্যদিকে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
ময়মনসিংহ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলার প্রতিটি মিটিংয়ে অটোরিকশা বন্ধের দাবি জানাই। এরা সিন্ডিকেট করে আমাদের যাত্রী নিয়ে যায়।
মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধ করা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এম এম মোহাইমেনুর রশিদ। তিনি বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে পুলিশ একাই লড়ে যাচ্ছে। অথচ প্রশাসনে আরও অনেক বিভাগ আছে। বিআরটিএ ও সিটি করপোরেশন চাইলে অনেক কিছু করতে পারে।
জেলা বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) মোহাম্মদ আবু নাঈম জানান, অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত মার্চ মাসে তাদের বিরুদ্ধে ১৭৫টি মামলা দিয়ে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মহাসড়কে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে প্রতিদিন আট থেকে ১০টি মামলা দেওয়া হয়।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম জানান, ঈদের মধ্যে যাত্রীর চাপ অনেক বেশি ছিল। এ জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অভিযান জোরদার করা হবে। মহাসড়কের সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।