ক্ষমতায় বসার পর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে কমে ৪৩ শতাংশে
Published: 4th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমে ৪৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পর তাঁর জনপ্রিয়তা কখনো এতটা কমেনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ইপসসের করা এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। এমন সময় ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার এ চিত্র উঠে এল, যখন আমদানি শুল্ক নিয়ে তাঁর প্রশাসনের পদক্ষেপ এবং ইয়েমেনে সামরিক হামলার তথ্য ফাঁস নিয়ে মার্কিনদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
রয়টার্স/ইপসসের এই জরিপটি তিন দিন ধরে চালানো হয়েছে। জরিপের কাজ শেষ হয় গত বুধবার। এর আগে গত ২১ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা নিয়ে আরেকটি জরিপ চালানো হয়। তখন ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ছিল ২ শতাংশ বেশি—৪৫ শতাংশ। আর ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পরপরই করা একটি জরিপ অনুযায়ী, তখন ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ছিল ৪৭ শতাংশ।
আরও পড়ুনট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কি পিছিয়ে পড়বে৮ ঘণ্টা আগেএর আগে ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় ছিলেন ট্রাম্প। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় বসার পরপরই তাঁর জনপ্রিয়তা সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ ছিল। প্রথম মেয়াদে তাঁর জনপ্রিয়তা সবচেয়ে তলানিতে পৌঁছায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে—৩৩ শতাংশ। সে হিসাবে প্রথম মেয়াদের বেশির ভাগ সময়ের তুলনায় বর্তমানে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেশি।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন। তাঁর সবচেয়ে কম জনপ্রিয়তা ছিল ৩৫ শতাংশ। গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগে করা এক জরিপে ওই চিত্র উঠে এসেছিল।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক ইস্যুর ইতিবাচক সমাধান হবে: প্রধান উপদেষ্টা৫ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে এবারের জরিপে ট্রাম্পকে কম নম্বর দিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। এ ক্ষেত্রে তিনি ৩৭ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন। আর যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি–সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে ট্রাম্প যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে ৩০ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন তিনি। জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয় নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন বাইডেনও।
যাঁরা জরিপে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই (৫২ শতাংশ) এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত যে বুধবার ট্রাম্প যে নতুন শুল্কনীতি ঘোষণা করছেন, তার একটি অংশে যানবাহন ও যানবাহনের যন্ত্রাংশের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে তাঁদের কাছের মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আর বাকিরা বলেছেন, শুল্ক বাড়ানোর ফলে ভালোর চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে।
তবে জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মার্কিন এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তাঁদের বেশির ভাগই ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির সমর্থক। ওই অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতি হবে—এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন তাঁরা।
আরও পড়ুনবাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র২২ ঘণ্টা আগেসিগন্যাল নিয়ে উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গোপনীয়তা রক্ষায় ট্রাম্প প্রশাসনের ত্রুটি আছে বলে মনে করেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। গত সপ্তাহে ইয়েমেনে হামলার একটি পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুলে ফাঁস হয়ে যায়। মেসেজিং গ্রুপ সিগন্যালে তাঁদের এ–সংক্রান্ত বার্তা আদান–প্রদানের সময় ফাঁসের এ ঘটনা ঘটে। গ্রুপটিতে একজন সাংবাদিককে যুক্ত করা হয়েছিল।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৭৪ শতাংশ ব্যক্তি মনে করেন, মেসেজিং অ্যাপে ইয়েমেনে হামলার পরিকল্পনা এভাবে আলোচনা করাটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড। এমন ধারণা জরিপে অংশ নেওয়া ৯১ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ও ৫৫ শতাংশ রিপাবলিকানেরও। অপর দিকে মাত্র ২২ শতাংশের মতে এটি কোনো ক্ষতিকর বিষয় নয়। আর ৭০ শতাংশ এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত যে ওই ঘটনার দায়ভার ট্রাম্পের নেওয়া উচিত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণ অধিকার পরিষদ। আজ বুধবার বিকেল সোয়া চারটায় গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বৈঠক শেষে পৃথক বক্তব্যে এ বিষয়ে মতৈক্যের কথা জানান দল দুটির শীর্ষ নেতারা।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদ তাদের সঙ্গে একমত হয়েছে।
আরও কয়েকটি বিষয়ে দুই দল একমত হয়েছে বলে জানান মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে নারীর অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ‘ইসলাম ধর্মবিরোধী’ প্রস্তাব বাতিল, গণহত্যা, খুনসহ টাকা পাচারকারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, ফ্যাসিবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঠেকাতে আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত একটি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র গঠন এবং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের আয়োজন ইত্যাদি।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘গত ৫৩ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের মাধ্যমে দেশে কোনো সুন্দর রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা পায়নি। পেশিশক্তি প্রয়োগ করে নির্বাচনের মাধ্যমে অযোগ্য লোকজন ক্ষমতায় বসে দেশকে বিভিন্ন কায়দায় অশান্ত করেছিল। সে জন্য আমরা পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে একমত হয়েছি।’
এ সময় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, কিছু মৌলিক সংস্কার না হলে দেশে আবার স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট সৃষ্টিসহ নানা ধরনের সংকট তৈরি হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নির্মম গণহত্যা পরিচালনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাচ্ছি। তাদের রাজনীতিও এ দেশে হওয়া উচিত নয়। তাদের বিচারের বিষয়ে গতি আনার ক্ষেত্রে (ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে) একমত হয়েছি।’
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদ অনেক আগে থেকেই একমত বলে জানান নুরুল হক। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে যাঁরা জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও নির্বাচন বাতিল করা দরকার।
নুরুল হক বলেন, ‘গত আট মাসে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় সেবা পেতে মানুষ ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কিছু মানুষ জোর করে আধিপত্য বিস্তার করছে। সে জন্য স্থানীয় নির্বাচন মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কারে কিছু সময়ের প্রয়োজন। আবার জাতীয় ঐকমত্যেরও প্রয়োজন। অন্তত তার আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে পারে।’
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ভৌগোলিক কারণে বিদেশি আগ্রাসন যাতে এ দেশের রাজনীতির কলকাঠি নাড়াতে না পারে, সে জন্য আধিপত্যবাদমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র তৈরির বিষয়ে বৈঠকে মতৈক্য হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি এমন রাষ্ট্র হবে, যেখানে ইসলামী আদর্শবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করা হবে না।’
এর আগে বেলা তিনটায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন দুই দলের নেতারা। বৈঠকে গণ অধিকার পরিষদের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের মুখপাত্র ফারুক হাসান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, উচ্চতর পরিষদের সভাপতি হাসিবুর রহমান, আইনজীবী নুরে এরশাদ ও সাকিব হোসেন।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাইউম প্রমুখ।