৩৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও জ্ঞান ফেরেনি প্রেমার
Published: 3rd, April 2025 GMT
দুর্ঘটনার পর ৩৮ ঘণ্টা কেটে গেলেও জ্ঞান ফেরেনি কলেজ পড়ুয়া তাসনিয়া ইসলাম প্রেমার। আর মাঝে মাঝে চোখ খুললেও এখনও মুখে কথা বলতে পারছে না শিশু আরাধ্য। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণে বাঁচলেও মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রেমার। দুই পা ভেঙে গেছে আরাধ্যর। শরীরের বিভিন্ন অংশে তৈরি হয়েছে রক্ত জমাটও। এক দুর্ঘটনায় তারা দুজনই হারিয়েছে মা-বাবাকে। আর এখন নিজেরাও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। শেষবারের মতো মা-বাবাকে দেখার সুযোগও কপালে ধরল না প্রেমা-আরাধ্যর। দুজনই এখনও শঙ্কামুক্ত নয় বলে পরিবারকে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের এমন করুণ পরিণতিতে তাই মন ভালো নেই কারও। এই অবস্থায় প্রেমা-আরাধ্যর একটু ভালো খবরের জন্য অধীর অপেক্ষায় হাসপাতালে সময় কাটছে স্বজনদের।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার জাঙ্গালিয়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে গত বুধবার দুই দম্পতিসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকার মিরপুরের রফিকুল ইসলাম শামীম ও লুৎফুন নাহার সুমি দম্পতি ও তাদের দুই মেয়ে আনীসা আক্তার (১৪) ও লিয়ানা (৮) এবং শামীমের ভাগনি তানিফা ইয়াসমিনের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত হয়ে শামীম-সুমি দম্পতির বড় মেয়ে তাসনিয়া ইসলাম প্রেমা (১৮) এখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে শিশু আরাধ্য বিশ্বাস (৬) ও তার মামাতো ভাই দুর্জয় কুমার বিশ্বাস (১৮)। আরাধ্যর বাবা দিলীপ বিশ্বাস আর মা সাধনা রাণীও চলে গেছেন পরপারে। গত বুধবার প্রেমাকে ও আজ বৃহস্পতিবার আরাধ্যকে ওয়ার্ড থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
সরেজমিনে আইসিইউ’র সামনে যেতেই চোখে পড়ে জেসমিন রহমান এর চোখে-মুখের বিষণ্ণতা। তিনি সম্পর্কে তাসনিয়া ইসলাম প্রেমার ছোট মামী। প্রেমার জন্য কান্না করতে করতে চোখ-মুখে ফুলে গেছে তার। বাকরুদ্ধ জেসমিন রহমান বলেন, ‘এ কি হয়ে গেল? মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই পরপারে চলে গেছে। সেও এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি। আল্লাহ’র কাছে প্রেমার জীবনটি ভিক্ষা চাই।’
শিশু আইসিইউ’র সামনে যেতে না যেতেই দুই চোখ কান্নায় টলমল করতে দেখা যায় আরাধ্যর কাকা অসিত কুমার বাড়ইকে। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পরও শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি আরাধ্যর। অসিত কুমার বাড়ই সমকালকে বলেন, ‘আরাধ্যর জীবনে এমন কঠিন দিন আসবে তা আমরা কেউ কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। লম্বা সময় পর চোখ খুলে তাকালেও সে এখনও মুখে কথা বলতে পারছে না। আজ মা-বাবার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান হয়েছে। অথচ শেষবারের মতো মা-বাবার চেহারাটাও দেখার সুযোগ পেল না মেয়েটি। কিভাবে কি হবে বুঝতে পারছি না।’ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
হাসপাতালের আইসিইউর এক চিকিৎসক বলেন, ‘প্রেমার জ্ঞানের মাত্রার অবস্থা বেশি খারাপ। একদিন পরও তার জ্ঞান ফেরেনি।’ আরেক চিকিৎসক বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আরাধ্যের দুই পা ভেঙ্গে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মাথা, মুখ, হাতসহ বিভিন্ন অংশ। শরীরের নানা অংশে তৈরি হয়েছে রক্ত জমাট। মাঝে মাঝে চোখ খুলে তাকায় সে। তবে মুখে কথা বলতে পারছে না।’
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন ন হত দ র ঘটন আর ধ য ইসল ম ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
হঠাৎ চারজনকে উদ্ধারের আলোচনা, নিশ্চিত নয় পুলিশ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজনের খোঁজ মিলেছে– সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন আলোচনা থাকলেও এখনও নিশ্চিত নয় পুলিশ। তাদের ভাষ্য, আজকালের মধ্যে এমন তথ্যের বিষয়টি আরও পরিষ্কার হতে পারে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল সমকালকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকজনের খোঁজ মিলেছে– এমন প্রচার আছে। তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা এখনও উদ্ধার বিষয়ে নিশ্চিত নই। আজকালের মধ্যে পরিষ্কার হতে পারব।
পাহাড়ের বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ি থেকে চবি ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে জেলা সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে ১৬ এপ্রিল সকালে পাঁচ শিক্ষার্থীকে দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে। অপহৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রিশন চাকমা, দিব্যি চাকমা ও মৈত্রীময় চাকমা রাঙামাটি এবং অন্য দু’জন লংঙি ম্রো ও অলড্রিন ত্রিপুরা বান্দরবানের বাসিন্দা। তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
সন্তু লারমা সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপণ ত্রিপুরা এ অপহরণের ঘটনায় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছেন। তবে ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
একাধিক অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চাপের মুখে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজনকে গত সোমবার রাতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার সর্বোসিদ্ধিপাড়া এলাকা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।