“মেসে থাকা উপদেষ্টারা চড়েন ৬ কোটির গাড়িতে, পরেন ৪০ লাখ টাকার ঘড়ি”
Published: 3rd, April 2025 GMT
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্যাহ বুলু অনতিবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের দাবি করে বলেন, “সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার মলিন চেহারা এখন রসালো হয়ে গেছে। তারা আগে হলে-মেসে থাকলেও এখন চড়েন ছয় কোটি টাকার গাড়িতে। গায়ে দেন ৩০ হাজার টাকার পাঞ্জাবি আর হাতে পরেন ৪০ লাখ টাকার ঘড়ি। তাদের তদবীরে প্রশাসন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ থেকে জাতি মুক্তি চায়।”
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত উপজেলার সাত শহীদ পরিবারের মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেওয়া জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বরকত উল্যাহ বুলু বলেন, “নতুন দলের (এনসিপি) এক নেতা বাড়ি যেতে একশ’র অধিক গাড়ি বহর নিয়ে গেছেন। ইন্টারকন্টিনেন্টালে পাঁচ কোটি টাকার ইফতার খাওয়ান। আগে ৫০০ টাকার পাঞ্জাবি পরলেও এখন পরেন ৩০ হাজার টাকার পাঞ্জাবি। জুতা পরেন ৫০ হাজার টাকার। ব্যবসায়ী-প্রশাসন তাদের তদবীর আর বদলী বাণিজ্যে অতিষ্ঠ। তারা কি সরকার নাকি? মব জাস্টিজের নামে মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা-নৈরাজ্য করা হচ্ছে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে দেশে নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নাই।”
তিনি বলেন, “যারা দেশে দ্বিতীয় রিপাবলিকের কথা বলে তারা জনগণের পক্ষে রাজনীতি করে বলে আমি মনে করি না। যারা ৩০ লাখ শহীদকে অস্বীকার করে, একাত্তর ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে মানে না এবং এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে রাজনীতি করে তারা আসলেই দেশ গণতন্ত্র ও জনগণের শত্রু। তাদের ভোট চাওয়া, প্রার্থী হওয়া কিংবা এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় এ নেতা আরও বলেন, “সেনাবাহিনী আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ত্বের ভ্যানগার্ড, এ বাহিনী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ৫ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান যদি হাসিনাকে তার মাতৃভূমি ভারতে পাঠিয়ে না দিত তাহলে বাংলাদেশে আরেকটি ভয়াবহ ঘটনা ঘটত। যারা এ দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা আসলেই দেশের শত্রু।”
বরকত উল্যাহ বুলু বলেন, “জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে দুই হাজার নিহত ও আহত হয়েছেন ২০ হাজার। এর মধ্যে ৮৬২ শহীদ বিএনপির নেতাকর্মী। বিগত ১৭ বছর তিনি (তারেক রহমান) লন্ডনে থেকে পঞ্চাশটির অধিক রাজনৈতিক দলের ঐক্য গড়ে আন্দোলন বেগবান করেন।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে আমরা ড.
এসময় বেগমগঞ্জের জুলাই-আগস্টের শহীদ মো. ফারুক, মো. সজিব, ইফফাত হোসেন, আবদুল মোতালেব মোল্লা, মো. আশিক হোসেন, মো. বেলাল হোসেন ও মো. রুবেলের পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করেন। এসময় তারেক রহমানের সাক্ষর করা শান্তনা চিঠিও প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে দেন। পরে শহীদ পরিবারে সঙ্গে মধ্যহ্নভোজে অংশ নেন বিএনপি নেতা বরকত উল্যাহ বুলু।
অনুষ্ঠানে বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাবু কামাখ্যা চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, উপজেলা বিএনপির সদস্য ও বরকত উল্যাহ বুলুর স্ত্রী শামীমা বরকত লাকী, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হক আবেদ, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির সভাপতি জহির উদ্দিন হারুন, সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলম প্রমুখ।
ঢাকা/সুজন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই আগস ট ব এনপ র স র জন ত উপজ ল রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
জোর করে পদত্যাগ করানো প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে গিয়ে মারধরের শিকার
পদত্যাগপত্রে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার পর আবার বিদ্যালয়ে যাওয়ায় নোয়াখালীর একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তাঁর পরনের জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয় বলে শিক্ষকের অভিযোগ। আজ বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার ওই শিক্ষকের নাম ইউনুস নবী।
নরোত্তমপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউনুস নবী প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ অক্টোবর তাঁর কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর আদায় করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও তাঁর সঙ্গীরা। যদিও সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার কারণে ওই পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হয়নি। তবে ওই ঘটনার পর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন না।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, তিনি দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৪ অক্টোবর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুক্তার হোসেনের নেতৃত্বে একদল লোক জোর করে তাঁর কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেন। বেগমগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোতাসিম বিল্লার সামনেই এ ঘটনা ঘটে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বিষয়টি সেই সময় লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক ইউনুস নবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনার পর সাবেক সভাপতি মুক্তার হোসেন তাঁর পছন্দের একজনকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। এরপর আর বিদ্যালয়ে যাননি তিনি।
ইউনুস নবী আরও জানান, ওই ঘটনার পর তিনি বেগমগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত ওই পদত্যাগপত্রের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিদ্যালয়ে যান। তিনি অফিসকক্ষে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসেন। বেলা আনুমানিক সোয়া ১১টার দিকে সাবেক সভাপতি মুক্তার হোসেনের ছোট ভাই একরাম হোসেনসহ একদল লোক অফিসকক্ষে ঢুকে অতর্কিতে তাঁর ওপর হামলা চালান। হামলাকারীরা তাঁর পরনের জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলেন এবং মারধর করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় তাঁর ওই অনিয়ম ধরা পড়েছে। যার দরুন তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হলে তিনি পদত্যাগ করেন। আজ তিনি সন্ত্রাসী নিয়ে বিদ্যালয়ে গেলে এলাকার লোকজন তাঁদের প্রতিরোধে এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তবে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা কিংবা তাঁর জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁর (মুক্তার) ভাই কিংবা অন্য কেউ এমন কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।
বিদ্যালয়ের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান শিক্ষক তাঁকে মারধর ও জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলার ঘটনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যাঁরা তাঁকে মারধর করেছেন, তাঁরাই তাঁকে বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেন না। ইতিপূর্বে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষরও নিয়েছেন। কিন্তু সেটি গৃহীত হয়নি। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে না গিয়েও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বিষয়টি যেহেতু রাজনৈতিক, তাই রাজনৈতিকভাবে সমঝোতায় যেতে। তিনি সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
ইউএনও আরিফুর রহমান আরও বলেন, ওই প্রধান শিক্ষক আদালতে মামলা করেছেন। আদালত কী রায় দেন, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি পক্ষের অভিযোগ আছে, সেটির তদন্ত চলছে।