‘আর কোনো দিন বাবার সঙ্গে কথা বলতে পারব না’
Published: 3rd, April 2025 GMT
‘‘যাওয়ার সময় বাবা বলেছিল, তুই যাবি নে? আমি বলেছিলাম, না বাবা আমার শরীর খারাপ। বমি হচ্ছে, আমি যাব না। বাবা বলেছিল, আর কোনো জায়গায় তোকে নিয়ে যাব না। ওই দিন বাবার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। আর কোনো দিন কথা বলতে পারব না বাবার সঙ্গে। বাবা আমারে কয়ে থুয়ে গেছিল, তুই থাকিস আমি আসবনে।’’
বাবার মরদেহের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিল চট্টগ্রামের জাঙ্গালিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত কুষ্টিয়ার আশীষ মন্ডলের ৯ বছরের মেয়ে আনুশকা মন্ডল পরী।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে আশীষের মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স কুষ্টিয়া শহরের কুমারগাড়া ঘোষপাড়ায় বাড়িতে পৌঁছালে তার স্বজনেরা আহাজারি করতে থাকেন। তাকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার জন্য ভিড় করে এলাকাবাসী। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন আশীষের স্ত্রী। স্বজনেরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন। সে সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আশীষের শ্বশুর মিহির বিশ্বাস।
আরো পড়ুন:
চট্টগ্রামে সড়কের সেই অংশে লাল পতাকা স্থাপন
মোটরসাইকেলে এক পরিবার, যশোরে বাসের ধাক্কায় শেষ তিনজন
কথা হলে চোখ মুছে তিনি বলেন, ‘‘গত রবিবার (৩০ মার্চ) কুষ্টিয়া থেকে আশীষ তার ভাইয়ের ছেলে দুর্জয়কে নিয়ে পিকনিকে যাওয়ার জন্য ঢাকায় বোনের বাড়িতে যায়। সেখানে থেকে বোন সাধনা রানী মন্ডল, ভগ্নিপতি দিলীপ কুমার বিশ্বাস, ভাগনি আরাধ্য বিশ্বাসসহ কয়েকজন মাইক্রোবাসে কক্সবাজার যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে আশীষ, তার বোন ও ভগ্নিপতির মৃত্যু হয়।’’ ওই সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ১০ জন মারা যায়।
তিনি বলেন, ‘‘আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আশীষের নিথর দেহ বাড়িতে পৌঁছেছে। এখন কীভাবে চলবে এই পরিবার এই ভেবে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে।’’
স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশীষ মন্ডল স্থানীয় বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কর্মস্থলের কাছাকাছি কুষ্টিয়া শহরের নিজ বাড়িতে স্ত্রী ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। খুব ছোটবেলায় মামা তাকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছিলেন। সেই সূত্রে মামা বাড়ির পাশেই জমি কিনে স্থায়ী বসবাস করছেন। নিহত আশীষ মন্ডল কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের মৃত যতীন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে।
এদিকে, ভাগনেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ মামা গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস। কথা হলে তিনি বলেন, ‘‘আশীষের যখন দেড় বছর বয়স, তখন আমি তাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। সন্তানের মতো কোলে-পিঠে করে তাকে বড় করেছি।’’
কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশোনা করে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছিল আশীষ। বিবাহিত জীবনে তার ৯ বছরের একটি মেয়ে আছে।
ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন সড়ক দ র ঘটন মরদ হ ন হত
এছাড়াও পড়ুন:
ডিপিএল ছেড়েই ‘মানসিক প্রস্তুতিতে’ টেস্ট খেলবেন বিজয়?
‘মানসিক প্রস্তুতি’। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বেশ পরিচিত শব্দ হয়ে ওঠার কথা। গত ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে যাওয়ার আগে প্রস্তুতির এই বিশেষ ধরনের কথা বলেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। টি-২০ ফরম্যাটের বিপিএল শেষ করেই ওয়ানডে ফরম্যাটের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলতে অসুবিধা হবে কিনা এমন প্রশ্নে মানসিক প্রস্তুতি থাকার কথা বলেছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক।
আবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেও একই কথা বলেন শান্ত, ‘সিরিজের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা।’ এবারো প্রকৃত প্রস্তুতির বদলে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়ার পেছনে কারণ পরিষ্কার। ডিপিএল খেলতে ব্যস্ত ছিলেন জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম টেস্টের দলে ডাক পাওয়া সব ক্রিকেটার।
টেস্টের জন্য এক সপ্তাহ আগে সিলেটে ক্যাম্প শুরু হয়েছিল। তবে ১৩ এপ্রিলের ওই ক্যাম্পে ছিলেন মাত্র ৮ ক্রিকেটার। বিপিএলের পর ফেব্রুয়ারির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, এরপর ডিপিএল; সব মিলিয়ে টানা সাদা বলের ক্রিকেটের পর টেস্টের জন্য এক সপ্তাহ ক্যাম্প করার সময়ও হয়নি বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিভুক্ত জাতীয় দলের সব ক্রিকেটারের। মানসিক প্রস্তুতিই তাই ভরসা ছিল। যা সিলেট টেস্টে কাজে দেয়নি।
এনামুল হক বিজয়ের জন্য এই ‘মানসিক প্রস্তুতি’ হতে যাচ্ছে আরও কঠিন। ডিপিএলে দারুণ ছন্দে আছেন তিনি। সেঞ্চুরির রেকর্ড করেছেন। বুধবার আবাহনীর বিপক্ষে সেঞ্চুরি দিয়ে স্বীকৃত ক্রিকেটে তার শতকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১। বিজয়ের মাথায় নিশ্চয় ২৬ এপ্রিল ডিপিএলে মোহামেডানের বিপক্ষে সুপার লিগের ম্যাচ ঘুরপাক খাচ্ছিল।
মোহামেডান ম্যাচের জন্যই মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা ছিল গাজী গ্রুপের ব্যাটার বিজয়ের। অথচ হুট করে তাকে ডাকা হলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দলে। বিসিবির প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু জানিয়েছেন, বিজয় তাদের প্রক্রিয়ার মধ্য ছিলেন, ভাবনায় ছিলেন। প্রক্রিয়া বলতে, গত বছর পাকিস্তানে ‘এ’ দলের হয়ে দুটি চার দিনের ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
যদিও ওই সফরের তিন ইনিংসে ১৮ রান করেছিলেন বিজয়। প্রক্রিয়ায় মধ্যে থাকায় বলা নেই, কওয়া নেই, ক্যাম্প করার সুযোগ নেই, ডিপিএল থেকে মোহামেডান ম্যাচের আগে ডেকে পাঠানো হলো জাতীয় দলে। দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান জয় অফ ফর্মে আছেন। তাদের একজনকে বসিয়ে এনামুলকে একাদশ নিলে প্রস্তুতির জন্য মাত্র তিনদিন পাবেন তিনি। লম্বা বিরতির পর মাত্র তিনদিনে প্রকৃত প্রস্তুতি নাকি মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে টেস্ট খেলতে নামবেন বিজয়?