বাগমারায় ধর্ষণ চেষ্টার বিচার সালিশে, জরিমানা আদায়
Published: 3rd, April 2025 GMT
রাজশাহীর বাগমারায় এক গৃহবধূর ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এর বিচারে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিশ বসিয়ে জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এই ধরনের অপরাধের বিচার গ্রাম্য সালিশে করায় স্থানীয় লোকজনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাতে সালিশ বসিয়ে এই বিচার করা হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, এমন অপরাধের বিচার সালিশে করা ঠিক হয়নি। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তি এমন অপরাধের সঙ্গে আর জড়াবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন।
মাতব্বরদের পক্ষে বলা হয়েছে, বিচার করার এখতিয়ার না থাকলেও সালিশে তা মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। উভয় পরিবারের দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার (৩১ মার্চ) রাতে উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেউখালী গ্রামের এক গৃহবধূ যৌন নির্যাতনের শিকার হন। ওইদিন রাতে একই গ্রামের মোজাহার আলী গৃহবধূর ঘরের ভেতরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন এবং শ্লীলতাহানি ঘটান।
এই ঘটনায় পরের দিন ঈদের দিন গৃহবধূর স্বামী স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করেন। ঈদের ছুটি থাকার কারণে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তবে এই বিষয়টি তদন্ত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দেন।
এদিকে মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাতে বিষয়টি নিয়ে গ্রামে সালিশ বসানো হয়। ওই সালিশে ইউপি সদস্য আমানুল্লাহসহ গ্রামের মাতব্বরেরা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে শমসের আলী, আবু সাঈদ, আলা হোসেন ও আবেদ আলী নেতৃত্ব দেন। তারা এলাকার মাতব্বর ও প্রভাবশালী। সালিশে মাতব্বরদের জেরার মুখে অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজের অপরাধ স্বীকার করেন।
মাতব্বরেরা জানান, অভিযুক্তের কাছ থেকে অপরাধের জন্য ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়াও ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধে জড়াবেন না বলে লিখিত মুচলেকা নেওয়া হয়। পুনরায় এই ধরনের অপরাধে জড়ালে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হবে বলে লিখিত মুচলেকায় উল্লেখ করা হয়।
সালিশের বিষয়ে ইউপি সদস্য আমান উল্লাহ বলেন, “বিষয়টির সুরাহা করা হয়েছে।” কীভাবে করা হলো এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি তা এড়িয়ে যান।
সালিশে উপস্থিত থাকা শমসের আলী নামের এক মাতব্বর বলেন, “বিচার করলে অনেক কিছু করতে হয়, সব দিক বিবেচনা করে অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে অভিযোগকারীকে ১৫ হাজার টাকা, স্থানীয় মসজিদে দুই হাজার টাকা এবং তিন হাজার টাকার মিষ্টি কিনে সালিশে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।”
তিনি দাবি করেন, “পরিবারের পক্ষেও এমনটিও চাওয়া হয়েছিল। উভয় পরিবারের দিক বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে উভয় পক্ষ খুশি।” তবে অভিযোগকারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বকুল সরদার জানান, তিনি ঈদের দিন লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। ওই সময় ছুটি থাকায় নোটিশ করতে পারেননি। বিষয়টি দেখার জন্য ইউপি সদস্যের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে অভিযোগে কী লেখা ছিল, তা তিনি পড়েননি। কী হয়েছে তাও তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “ধর্ষণের চেষ্টা হয়ে থাকলে তা গ্রাম্যসালিশে আপস করার কোনো সুযোগ নেই। যদি থানায় জানানো হয়, তাহলে মামলা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/কেয়া/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপর ধ র র অপর ধ সদস য গ হবধ ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি
হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে স্মারকলিপি দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা–কর্মচারী।
বৃহস্পতিবার ২৮ হাজার ৩০৭ কর্মীর সই করা এক হাজার ৪২৮ পৃষ্ঠার এই স্মারকলিপি উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, সংস্কার দাবির কারণে মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও গত ১৬ অক্টোবর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ১০ জন কর্মকর্তাকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করে। একই দিন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরদিন সকাল থেকে শুরু হয় কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার এবং আরও ১৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এই ঘটনায় সমিতির কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেয়, যার ফলে কিছু এলাকায় সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে।
স্মারকলিপি আরও বলা হয়, আরইবি এখনও মামলা, চাকরিচ্যুতি, বদলি, সাসপেন্ড বিভিন্ন হয়রানিমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। শুধু স্মারকলিপিতে সই দেওয়ার কারণেও সম্প্রতি মাদারীপুর ও রাজশাহীর কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সংযুক্ত করে তদন্তের নামে হয়রানি ও শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। চাকরি হারিয়ে, মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি সমিতির ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সই করা স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্মারকলিপিতে মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়েছে।