ঈদে আমদানি বন্ধ থাকায় যশোরে ফলের দাম বেড়েছে
Published: 3rd, April 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আট দিন ধরে ফল আমদানি বন্ধ থাকায় যশোরে ফলের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। ঈদের আগে যে আপেল ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। ফলের অতিরিক্ত দাম বাড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা।
বেনাপোল স্থলবন্দর ও কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে তিন মাস ধরে আপেল আমদানি বন্ধ আছে। তবে আঙুর, আনার ও কমলা সাত দিন আগেও আমদানি হয়েছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি ভারত থেকে মাত্র এক ট্রাক আপেল আমদানি হয়। আর ঈদের তিন দিন আগে ২৭ মার্চ ১১ ট্রাক আনার, ১১২ ট্রাক আঙুর ও সাত ট্রাক কমলা আসে। এর মধ্যে এসব ফলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার যশোর শহরের দড়াটানা, চৌরাস্তা মোড়, ধর্মতলা ও সোনাপট্টি এলাকার কয়েকটি ফলের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, আপেল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, আনার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, আঙুর (কালো) ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আঙুর (সবুজ) ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কমলা ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগে আপেল ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, আনার ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, আঙুর (কালো) ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, আঙুর (সবুজ) ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা ও কমলা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
শহরের সোনাপট্টি এলাকার খুচরা ফল বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, রোজার মধ্যে দুই দফায় ফলের দাম বেড়েছে। রোজার শুরুতে আপেল, সবুজ আঙুর ও কমলা ৩২০ থেকে ৩৫০, আনার ও আঙুর (কালো) ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের কারণে ভারত থেকে ফল আমদানি বন্ধ থাকায় আরেক দফা দাম বেড়েছে। এখন তো কেজিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
দড়াটানা মোড়ের ফল ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার ফলের দোকান যশোর জেনারেল হাসপাতালের সামনে। এই এলাকায় আরও অন্তত ৩০টি হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে। রোগীদের জন্য ফল বেশি বিক্রি হয়। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় ফল বিক্রি কমে গেছে।’
ভারত থেকে ফল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গাজী এক্সিমের স্বত্বাধিকারী গাজী শামীম উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, এখন মূলত আঙুরের মৌসুম। ভারত থেকে আঙুর বেশি আসছে। সঙ্গে আনার ও কমলা আসছে অল্প করে। ভারতীয় আপেল আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বাজারে যে আপেল পাওয়া যাচ্ছে, তা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আফ্রিকা ও চায়না থেকে আমদানি করা হচ্ছে। শুল্কায়নসহ প্রতি কেজি সবুজ আঙুর ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা ও কালো আঙুর ৩৫০ থেকে ৩৭০ টাকা, আনার (মিশ্র) ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে। দুই দিন পর আমদানি স্বাভাবিক হলে ফলের দাম কমে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দুজন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, ঈদের সময় আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকবে এটা পূর্বঘোষিত বিষয়। আমদানিকারকেরা সেই প্রস্তুতি নিয়েই প্রয়োজনীয় ফল আমদানি করে গুদামে সংরক্ষণ করেন। অতিরিক্ত দামে তো তাঁদের আমদানি করতে হয়নি, তাহলে বাজারে ফলের দাম বাড়বে কেন? অতিরিক্ত দাম নিলেও সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান কোনো দায়িত্ব পালন করছে না। বাজারে সরকারি কোনো অভিযান চালানো হচ্ছে না।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা বলেন, ঈদের জন্য সরকারি কার্যালয় বন্ধ আছে। রোববারের আগে বাজারে নজরদারির সুযোগ নেই। কার্যালয় চালু হলে প্রথমে ফলের বাজারে অভিযান চালানো হবে। আমদানি মূল্যের চেয়ে নির্দিষ্ট মুনাফার বাইরে কেউ বেশি দামে ফল বিক্রি করলে জরিমানা করা হবে। বন্ধের মধ্যে অতিরিক্ত দামে ফল কিনে থাকলে কেউ ক্রয় রসিদসহ অভিযোগ করলে বিক্রেতাকে জরিমানা করার সুযোগ আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফল আমদ ন ফল র দ ম বন ধ থ ক ৪০০ থ ক ল আমদ ন ৪৫০ ট ক ও কমল
এছাড়াও পড়ুন:
পুরো বন্ধের পথে টেকনাফ স্থলবন্দরের কার্যক্রম
টেকনাফ স্থলবন্দরে জেটি ঘাটে বৃহস্পতিবার দুপুরে নোঙর করা দুটি বোট থেকে বালু নামাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। দুটি বোটের যাওয়ার কথা ছিল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে। ওই রাজ্যটি দখলে নেওয়া আরাকান আর্মি বোট দুটিকে ওই শহরে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। বাধ্য হয়ে রপ্তানিকারকেরা শ্রমিক দিয়ে বোট দুটি থেকে আলুভর্তি বস্তা নামিয়ে ফেলেন।
আলু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ১২ দিন টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এখানে আলু পড়ে আছে ২ হাজার ৭০০ বস্তা। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে মোট আলু সেখানে আটকা পড়েছে ১৩৫ টন। এর মধ্যে ২ হাজার ১০০ বস্তা সবুজ অ্যান্ড ব্রাদার্সের নূরুল কায়েস সাদ্দামের ও ৬০০ বস্তা এক্সপ্রেস এজেন্সির ওমর ফারুকের। এ ছাড়া গুদামে পড়ে আছে ২২ হাজার বস্তা সিমেন্ট। এ ছাড়া পানি, চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, পানি ও প্লাস্টিকজাত পণ্যও গুদামে পড়ে আছে। সব মিলিয়ে এসব পণ্যের দাম পাঁচ কোটি টাকার ওপর।
বন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্য দখলের পর তিন মাস ধরে টেকনাফ থেকে সীমান্তবাণিজ্য থমকে যায়। গত মার্চে ওই রাজ্য থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে ৬৭৫ দশমিক ৪৩ টন পণ্য আমদানি হয়। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় ৭ কোটি ৯৬ লাখ ৫ হাজার ২৬৫ টাকা। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রায় তিন লাখ ৩৪ হাজার ৫২৪ দশমিক ৫২ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। টনের হিসাবে যা তিন হাজার ৪৫৫ দশমিক ৯৮৪ টন। রপ্তানিপণ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আলু, বিস্কুট, পানি ও প্লাস্টিকজাত পণ্য।
সর্বশেষ ১২ এপ্রিল রাখাইন থেকে ১৩৮ পিসের একটি কাঠবাহী বোট এসেছিল। এরপর থেকে কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়নি। এসব কারণে শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বলে জানান বন্দরের শ্রমিক নেতা মনির আহমেদ। তিনি বলেন, বেকার শ্রমিকেরা দুর্দিনে পড়েছেন। রপ্তানির উদ্দেশ্যে আনা আলুসহ বিভিন্ন পণ্যে পচন ধরেছে।
ব্যবসায়ী নুরুল কায়েছ সাদ্দাম বলেন, তাঁর অর্ধকোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করতে না পেরে গুদামে রেখেছেন। এর মধ্যে আলুসহ অনেক পণ্যে পচন ধরেছে। রাখাইনেও তাঁর কাঠ, ডাল, শুঁটকিসহ বিপুল পরিমাণ পণ্য মজুত আছে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এক্সপ্রেস এজেন্সির প্রতিনিধি মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, ১০-১২ দিন ধরে মালপত্র আমদানি-রপ্তানি বন্ধ। আরাকান আর্মির অনুমতি না পাওয়ায় এখান থেকে পণ্য যাচ্ছে না, সেখান থেকেও কোনো পণ্য আসছে না। রপ্তানির জন্য আনা তাদের দুই হাজারের বেশি বস্তা আলু, ১০ হাজার বস্তা সিমেন্ট পড়ে আছে। পচনশীল হওয়ায় আলু নষ্ট হওয়ার পথে। এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়ছেন।
ইয়াঙ্গুন থেকে তিন মাস আগে পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এবার আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন থেকেও আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে জানিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন বলেন, মূলত ওপারে সমস্যার কারণে কোনো পণ্য যাচ্ছে না। এখান থেকে পণ্য যেতে কোনো বাধা নেই। স্থলবন্দরের কার্যক্রম প্রায় শূন্যের কোঠায়। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, এই বন্দরে সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক আমদানি হয় ১২ এপ্রিল। সেদিন রাখাইন থেকে কাঠবোঝাই বোট এসেছিল। এরপর ১৬ এপ্রিল রাখাইন থেকে আসার পথে একটি কাঠবাহী বোট হেফাজতে নেয় বিজিবি। সেটিতে কোনো লোকজন ছিল না। মালিকবিহীন বোটটি আছে স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের হেফাজতে। এ প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, টেকনাফ-মংডু সীমান্তবাণিজ্য এখন পুরোদমে বন্ধ। আরাকান আর্মির সবুজসংকেত না পাওয়ায় আপাতত ব্যবসায়ীরা কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারছেন না। ফলে গুদামে বিপুল পরিমাণ পণ্য মজুত রাখতে হচ্ছে।