আগামী ৪৭তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ছবি ‘মাস্তুল’। গত ২ এপ্রিল মূল প্রতিযোগিতা বিভাগসহ উৎসবের বিভিন্ন বিভাগের ছবি নিয়ে বিস্তারিত ঘোষণা করেছে উৎসব কর্তৃপক্ষ। পরে অফিশিয়াল ওয়েব সাইটেও উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। মাস্তুল সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। এর আগে ‘আম কাঁঠালের ছুটি’ বানিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।
বিশ্বের অন্যতম এ উৎসবে ‘মাস্তুল’ মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে স্থান করে নেওয়ায় উচ্ছ্বসিত নির্মাতা নূরুজ্জামান। আনন্দ প্রকাশ করে এই নির্মাতা বলেন, মস্কোতে ‘মাস্তুল’ মনোনীত হওয়ার বিষয়টি আগেই উৎসব কর্তৃপক্ষ ই-মেইল যোগে নিশ্চিত করেছেন। খবরটি পাওয়ার পর দারুণ আনন্দিত আমরা।
এর আগে ৪৪তম আসরে যুবরাজ শামীমের ‘আদিম’, ৪৫তম আসরে নূরুল আলম আতিক পরিচালিত ‘পেয়ারার সুবাস’ এবং ৪৬তম আসরে আসিফ ইসলামের ‘নির্বাণ’ এ উৎসবে নির্বাচিত ও প্রদর্শিত হয়। তারও আগে ফারুকীর ডুব ও শনিবার বিকেল এবং জসীম আহমেদ প্রযোজিত ইন্দ্রনীল রায় চ্যাটার্জির ‘মায়ার জঞ্জাল’ উল্লেখযোগ্য। এরমধ্যে ‘আদিম’ চলচ্চিত্রটি দুটি বিভাগে এবং ‘নির্বাণ’ একটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে পুরস্কার।
এরই মধ্যে দেশে মুক্তির অনুমতি পেয়েছে ‘মাস্তুল’। মার্চের ২৪ তারিখে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড থেকে কোনো কর্তন ছাড়াই ‘মাস্তুল’ ছাড়পত্র পায়। সব বয়সী দর্শকের দেখার যোগ্য ‘মাস্তুল’।
দেশে ‘মাস্তুল’-এর মুক্তি নিয়ে মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, আমরা গেল বছরেই ‘মাস্তুল’-এর সব কাজ সম্পন্ন করেছি। দেশের বাইরে হয়েছে এই সিনেমার সাউন্ড-এর কাজ। মস্কোতে প্রদর্শিত হওয়ার পর সামনে সুবিধাজনক একটি সময়ে দেশে সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা আছে।
‘মাস্তুল’-এ জাহাজের বাবুর্চির চরিত্রে অভিনয় করছেন নন্দিত অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু। সিনেমাটির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছেন দীপক সুমন, আমিনুর রহমান মুকুল, শিকদার মুকিত, জুলফিকার চঞ্চল এবং শিশুশিল্পী আরিফ।
‘সিনেমাকার’-এর ব্যানারে প্রযোজিত এ চলচ্চিত্রের কাস্টিং ডিরেক্টর ‘আদিম’খ্যাত যুবরাজ শামীম এবং চিত্রগ্রহণে ছিলেন মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান। এছাড়া পরিচালনা ও প্রযোজনার পাশাপাশি কাহিনি ও চিত্রনাট্য রচনা, সম্পাদনা এবং সাউন্ড ডিজাইন করেছেন নির্মাতা নিজেই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
এমপিওভুক্ত পৌনে ৫ লাখ শিক্ষকের বোনাস বাড়ছে
আবু জামিল মো. সেলিম। ইংরেজির প্রভাষক। তাঁর বেতন স্কেল ২২ হাজার টাকা। ঈদে বোনাস পান ৫ হাজার ৫০০ টাকা। রাজধানীর শ্যামপুরের এ কে হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করেন তিনি।
তাঁর মতো লাখো এমপিওভুক্ত শিক্ষক প্রতি ঈদে মূল বেতনের এক-চতুর্থাংশ অর্থ উৎসব ভাতা পান। শিক্ষকরা লজ্জায় স্বল্প বোনাস পাওয়ার কথা কাউকে বলতে পারেন না। তারা জানান, একে তো নামমাত্র বোনাস, তাও পেতে অনেক সময় ঈদ পার হয়ে যায়।
রাজধানীর মিরপুর সিদ্ধান্ত হাই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী (দপ্তরি) সুলতান আহমেদ। তাঁর বেতন স্কেল ৮ হাজার ৫০০ টাকা। তিনি ঈদে বোনাস পান ৪ হাজার ২০০ টাকা। এই কর্মচারী বলেন, ‘দুর্মূল্যের বাজারে পরিবার নিয়ে এই টাকায় কীভাবে উৎসব করা সম্ভব?’
সারাদেশের পৌনে পাঁচ লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য রয়েছে সুখবর। তাদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ঈদুল আজহার আগে প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে। গতকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য মিলেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক-১) সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী সমকালকে বলেন, উৎসব ভাতা বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কতটুকু বাড়বে, সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না।
কবে নাগাদ উৎসব ভাতা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন জারি করা হতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি চলতি মাসের (এপ্রিল) মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করার। চলতি মাসে না হলে আগামী মাসের প্রথমার্ধে প্রজ্ঞাপন হতে পারে।’
জানা যায়, আগে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা উৎসব ভাতা পেতেন না। ২০০৩ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বছরের অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হয়। তখন সিদ্ধান্ত হয়, শিক্ষকদের দেওয়া হবে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ। দুই ঈদে (অথবা পূজায়) ২৫ শতাংশ করে ভাগ করে তা দেওয়া হবে। সেই থেকে প্রতি ঈদে শিক্ষকরা ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পান। কর্মচারীদের জন্য ওই সভায় শতভাগ বোনাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দুই ঈদে ৫০ শতাংশ করে তা ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষকরা জানান, ’৯৬ সাল পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মূল বেতনের ৮০ ভাগ সরকার থেকে দেওয়া হতো। আওয়ামী লীগ সরকার তা ৯০ শতাংশে উন্নীত করে। ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকার ৯৫ শতাংশ করে। পরের বাজেটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তা শতভাগে নিয়ে যায়। দেখা গেছে, বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন স্কেল ধাপে ধাপে শতভাগে উন্নীত হলেও উৎসব ভাতা বাড়েনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ বছরের ৫ মার্চ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শিক্ষকদের উৎসব, বিনোদন, বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা বাড়ানোর একটি প্রস্তাবে সই করেন। এরপর এ নিয়ে কাজ শুরু করে মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখা থেকে জানায়, গত ঈদুল ফিতরে সারাদেশের প্রায় ৩০ হাজারের বেশি এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা মিলে প্রায় ২৪০ কোটি টাকার উৎসব ভাতা দেওয়া হয়। এর মধ্যে শুধু স্কুল ও কলেজ ২০ হাজার ৫৬৭টি। এর সঙ্গে মার্চ/২০২৫ মাসের বেতন হিসেবে দেওয়া হয় ৮৮৩ কোটি ৫১ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা।
জানা গেছে, ঈদ বোনাস বর্তমানের চেয়ে অন্তত ২৫ শতাংশ বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকরা মূল বেতনের ৫০ শতাংশ আর কর্মচারীরা ৭৫ শতাংশ বোনাস পেতে পারেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুঁইয়া সমকালকে বলেন, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক চাইলে সরকারকে অবশ্যই শতভাগ উৎসব ভাতা দিতে হবে। শিক্ষকদের বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। এ কারণে আমাদের মূল দাবি, শিক্ষা জাতীয়করণ।