খোলপেটুয়ার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত ১০ গ্রাম, সেনা তদারকিতে চলছে সংস্কার
Published: 3rd, April 2025 GMT
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের খোলপেটুয়া নদীর ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ গত চার দিনেও সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। হাজার হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গত দুই দিন ধরে রিং বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃক নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন সেখানে জিও ব্যাগে বালু ভরে বিকল্প রিংবাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছে। যা তদারকি করছেন সেনাবাহিনীর একটি টিম।
তবে, ইতিমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা দ্রুত বেড়িবাঁধ সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন।
ইতিমধ্যে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি। বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি। প্লাবিত হয়েছে ১০টি গ্রাম। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। বেড়িবাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। গরু-ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ গৃহস্থালির জিনিসপত্র নিয়ে রয়েছেন নিদারুন কষ্টে।
স্থানীয়রা জানান, গত ৩১ মার্চ সকাল ৯টার দিকে ঈদের নামাজ শেষে পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রায় দুইশ’ ফুট এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধ হঠাৎ করেই খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা আনুলিয়া ইউনিয়নব্যাপী। মুহূর্তের মধ্যে গ্রামবাসীর ঈদের আনন্দ ভেসে যায়।
হাজার হাজার স্থানীয় গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে গত দুই দিনে দফায় দফায় ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণের প্রাণপণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে জোয়ারের তোড়ে তা ব্যর্থ হয়। ইতিমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে আনুলিয়া ইউনিয়নের ১২শ’ পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ।
পানিতে ভেসে গেছে চারশতাধিক মৎস্য ঘেরের প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমি এবং ৭ থেকে ৮শ’ বিঘা জমির ফসল। বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক কাঁচাঘর বাড়ি। বিদ্যুৎ বিহীন রয়েছে সেখানকার তিনটি গ্রাম। প্লাবিত এলাকায় দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির অভাব। একইসাথে মানুষের রান্না-খাবার, হাঁস-মুরগি ও গো খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। বানভাসী মানুষ পার্শ্ববর্তী আশ্রয়কেন্দ্র ও পাউবোর বাঁধে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অন্যত্র আত্মীয়ের বাড়ি চলে গেছেন।
তবে, পানিবন্দি মানুষের মাঝে কিছু যুবককে শুকনা খাবার সরবরাহ করতে দেখা গেছে। ইতিমধ্যে পানিতে প্লাবিত হয়েছে আনুলিয়া ইউনিয়নের নয়াখালী, বিছট, বল্লবপুর, বাসুদেবপুর, আনুলিয়া, চেচুয়া, কাকবাশিয়া, মীর্জাপুর, চেউটিয়াসহ আশপাশের ১০ গ্রাম। দ্রুত বেঁড়িবাঁধ সংস্কার করা না হলে আনুলিয়া ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী খাজরা ও বড়দল ইউনয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
এদিকে, আজ বুধবার (৩ এপ্রিল) সকাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন গেটবল (বালিতোলা কার্গো) দিয়ে বালি তুলে জিড় ব্যাগে ভরে সেখানে রিংবাঁধ দিয়ে পানি ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। যা তদারকি করছেন সেনাবাহিনীর একটি টিম।
এর আগে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকালে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মোস্তাক আহমেদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা অঞ্চলের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সৈয়দ শহিদুল আলম, পানি উন্নয়ন বোর্ড-সাতক্ষীরা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো অবৈধভাবে বেড়িবাঁধের তলা দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে গেট সিস্টেম করে মৎস্য ঘেরে পানি তোলা। তারা অবিলম্বে এই পদ্ধতি বন্ধের জোর দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতা এসএম শওকত হোসেন জানান, ঈদের নামাজ পড়ার সময় তারা জানতে পারেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিছট গ্রামের ঝুকিপূর্ণ বাঁধটি ধসে গ্রামের মধ্যে পানি ঢুকছে। তাৎক্ষনিক সেখানে গিয়ে বাঁধ সংস্কারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তারা। এরপর থেকে কয়েক দফায় গত দুই দিন ধরে সেখানে হাজার হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধ সংস্কারের চেষ্টা করছে। তবে তারা পানি ঠেকাতে পারেননি।
আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস জানান, ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, ইউএনও, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বুধবার সকাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃক নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন সেখানে জিও ব্যাগের মধ্যে বালু ভরে বিকল্প রিংবাঁধ দেয়ার চেষ্টা করছেন। যা তদারকি করছেন সেনাবাহিনীর একটি টিম।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোস্তাক আহমেদ জানান, ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জরুরিভাবে বেড়িবাঁধ সংস্কারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে ঈদের কারণে শ্রমিক সংকট ও বালু বোর্ড আনতে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে একটু বিলম্ব হয়েছে।
তিনি বলেন, “এছাড়া সাতক্ষীরার পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগকে একত্রে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব বাঁধ মেরামত করা হবে।”
ঢাকা/শাহীন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর করছ ন স ত হয় ছ ত এল ক
এছাড়াও পড়ুন:
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি
হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে স্মারকলিপি দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা–কর্মচারী।
বৃহস্পতিবার ২৮ হাজার ৩০৭ কর্মীর সই করা এক হাজার ৪২৮ পৃষ্ঠার এই স্মারকলিপি উপদেষ্টার দপ্তরে জমা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, সংস্কার দাবির কারণে মাঠপর্যায়ে কোনো কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও গত ১৬ অক্টোবর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ১০ জন কর্মকর্তাকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করে। একই দিন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরদিন সকাল থেকে শুরু হয় কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার এবং আরও ১৪ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এই ঘটনায় সমিতির কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দেয়, যার ফলে কিছু এলাকায় সাময়িক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে।
স্মারকলিপি আরও বলা হয়, আরইবি এখনও মামলা, চাকরিচ্যুতি, বদলি, সাসপেন্ড বিভিন্ন হয়রানিমূলক পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। শুধু স্মারকলিপিতে সই দেওয়ার কারণেও সম্প্রতি মাদারীপুর ও রাজশাহীর কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রায় অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সংযুক্ত করে তদন্তের নামে হয়রানি ও শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। চাকরি হারিয়ে, মামলা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমনকি ক্ষতিগ্রস্তদের ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি সমিতির ৩০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সই করা স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্মারকলিপিতে মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়েছে।