বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপের পরে বিশ্ববাজারে মার্কিন ডলারের দরপতন ঘটেছে। বিপরীত দিক থেকে, ইউরোর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ইয়েন ও সুইস ফ্রাঙ্কের মতো নিরাপদ আশ্রয়স্থলের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, বহুল প্রতীক্ষিত ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার বাজারে ধাক্কা লেগেছে। বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটেছে এবং বিনিয়োগকারীরা বন্ডের পাশাপাশি সোনায় বিনিয়োগ শুরু করেছেন।
ট্রাম্প বুধবার জানিয়েছেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সমস্ত আমদানির উপর ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক আরোপ করবেন এবং দেশের কিছু বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারের উপর উচ্চতর শুল্ক আরোপ করবেন।
নতুন শুল্ক আরোপের ফলে ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হয়ে উঠেছে। বাজারগুলোতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কারণ আশঙ্কা বাড়ছে যে, একটি পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং জ্বালানি মূল্যস্ফীতির কারণ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ডলার সূচক ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ১০২.
ক্যাপিটাল ডটকমের সিনিয়র বাজার বিশ্লেষক ড্যানিয়েলা সাবিন হ্যাথর্ন জানান, ট্রাম্প ঘোষিত ‘মুক্তি দিবসের’ সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, “মূল কথা হলো, অনিশ্চয়তা এখনো বেশি - এমনকি কয়েকদিনের আলোচনার পর এই নতুন শুল্কগুলোর কিছু বাতিল বা সংশোধিত হতে পারে বিষয়টি বিবেচনায় থাকার পরেও। মোটামুটি অনুমান অনুসারে, অর্থনৈতিক প্রভাব ১৯৩০-এর দশকের স্মুট-হাওলি শুল্কের চেয়েও বেশি হতে পারে।”
১৯৩০ সালে স্মুট-হাওলি শুল্ক আইন প্রণয়নের পরে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি কর বাড়িয়েছিল এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিশোধের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল। মার্কিন ওই পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ধীর করে দিয়ে মহামন্দাকে আরো খারাপ করেছে বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়।
ড্যানিয়েলা সাবিন হ্যাথর্ন জানান, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ কেবল বাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা নয় - এর মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণরূপে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্যের উপর নির্ভর না করে অভ্যন্তরীণভাবে সবকিছু উৎপাদন এবং ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। এই স্তরের শুল্কে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত অর্থনৈতিকভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে, অন্যান্য দেশের সাথে বেশিরভাগ সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
ঢাকা/শাহেদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ল ক আর প দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
আবারও ভারতীয় রুপির দরপতন, ডলারের বিপরীতে রেকর্ড তলানিতে
ভারতের মুদ্রা রুপির দরপতন চলছেই। চলতি ডিসেম্বর মাসে ডলারের বিপরীতে রুপির দর ৯০ পেরিয়ে যায়। আজ শুক্রবার তা নতুন রেকর্ড গড়ল। ফলে এ সময় বাংলাদেশ থেকে যাঁরা ভারতে যাচ্ছেন, তাঁরা লাভবান হচ্ছেন।
আজ শুক্রবার ভারতীয় মুদ্রার দাম ২৪ পয়সা কমেছে। এর জেরে প্রতি মার্কিন ডলারের সাপেক্ষে ভারতীয় মুদ্রার দাম হয়েছে ৯০ দশমিক ৫৬। রুপির এই দর এখন পর্যন্ত সর্বনিম্ন। অর্থাৎ ইতিহাসে এটাই এখন রুপির সর্বনিম্ন দর। বৃহস্পতিবার রুপির দাম ছিল ৯০ দশমিক ৩২। খবর ইকোনমিক টাইমস
চলতি বছরের শুরু থেকেই রুপির অবস্থা টালমাটাল। ধারাবাহিকভাবে দাম কমেছে এই মুদ্রার। বছরের শেষ প্রান্তে এসে তা রীতিমতো খাদের কিনারায় চলে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তি–সংক্রান্ত জটিলতা রুপির এই দরপতনের মূল কারণ। ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে সম্প্রতি ফোনে কথা হয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিও আলোচনার জন্য ভারতে এসেছেন; কিন্তু তা সত্ত্বেও রুপির দর পতন ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।
রুপির এই দরপতনের আরও কিছু কারণ আছে। সংবাদে বলা হয়েছে, আমদানিকারকদের ডলার কেনার ধুম পড়ার কারণেও রুপির দামে প্রভাব পড়েছে। ভারতের শেয়ারবাজার থেকে চলতি বছর বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ চলে গেছে।
সেই ধারা অব্যাহত আছে। সম্প্রতি ভারতের শেয়ারবাজার থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ চলে গেছে। বিষয়টি আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো হয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আন্তর্জাতিক বাজারে বিভিন্ন ধাতুর মূল্যবৃদ্ধির কারণেও রুপির ওপর চাপ বাড়ছে।
সংবাদে বলা হয়েছে, ডলারের বিপরীতে রুপির দাম ৮৯ পেরিয়ে যাওয়ার পর তা যেন ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। ফলে চলতি বছর এশিয়ার সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রার খেতাব পেয়েছে রুপি। শুধু ডলার নয়, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, জাপানি ইয়েন ও চীনা ইউয়ান অর্থাৎ বিশ্বের বিশ্বের অন্য চারটি প্রধান মুদ্রার বিপরীতেও রুপির দর কমেছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা এখন উদ্বিগ্ন। রুপি আদৌ স্থিতিশীল হবে কি না, এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যচুক্তির বিষয়ে স্পষ্টতা আসবে কি না, তাঁরা এখন সেদিকে তাকিয়ে আছেন।
বাংলাদেশিদের ওপর কী প্রভাব
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে যাঁরা ভারতে যাচ্ছেন, তাঁরা ডলার ভাঙিয়ে আগের চেয়ে বেশি রুপি পাবেন। বাংলাদেশে ডলারের দাম অনেক দিন ধরেই স্থিতিশীল। কয়েক মাস ধরে তা ১২২ টাকার মধ্যে আছে।
একদিকে দেশের বাজারে ডলারের দাম স্থিতিশীল, আরেক দিকে ভারতে রুপির দরপতন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি ভ্রমণকারীরা লাভবান হবেন। ভারতে যেসব দেশের মানুষ বেশি ভ্রমণ করেন, তাঁদের মধ্যে বাংলাদেশিরা শীর্ষস্থানীয়; কিন্তু ভিসা–নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি মানুষ ভারতে যেতে পারছেন না।