ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের তালিকায় রাশিয়া, উত্তর কোরিয়ার নাম নেই কেন
Published: 3rd, April 2025 GMT
নতুন করে পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তিনি বেশ কয়েকটি দেশের ওপর সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কয়েকটি দেশের নামও আছে ওই তালিকায়। কিন্তু ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক আরোপের তালিকায় নেই রাশিয়া, কানাডা, মেক্সিকো, উত্তর কোরিয়া, কিউবাসহ আরও কয়েকটি দেশের নাম। কী কারণে ট্রাম্প এসব দেশকে বাদ দিলেন?
ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বিকেল চারটায় হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে নতুন করে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এবার ট্রাম্প যাদের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন, এর মধ্যে ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভিয়েতনামের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাণিজ্যিক অংশীদারেরাও রয়েছে। ভারতের ওপর ২৭ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ২০ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
তবে কেন নেই রাশিয়া, কানাডা, মেক্সিকো, উত্তর কোরিয়া কিংবা কিউবার নাম? দেশগুলো কি আসলেই ট্রাম্পের শুল্ক খাঁড়া থেকে বাঁচতে পেরেছে?
প্রতিবেশী দুই দেশ কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর আগেই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কানাডার জ্বালানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তির (ইউএসএমসিএ) আওতায় যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে, সেগুলো এখনো নতুন শুল্কের আওতামুক্ত রয়েছে। তবে গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য পণ্যের ওপর আজ বৃহস্পতিবার থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে।
ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক আরোপের তালিকায় কেন রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, কিউবা ও বেলারুশের নাম নেই, তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, এসব দেশের ওপর আগে থেকেই বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। যে কারণে দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য খুবই সামান্য।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব দেশ আগে থেকেই অতি উচ্চ শুল্কের মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া দেশগুলোর ওপর আমরা আগেই যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছি, তাতে তাদের সঙ্গে কোনো অর্থপূর্ণ বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠা সম্ভব নয়।’
ভারতভিত্তিক বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম জিরাফ-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা সৌরভ ঘোষ রাশিয়ার ওপর শুল্ক আরোপ না করার আরেকটি সম্ভাব্য কারণের কথা বলেছেন। সেটা হলো ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে চলমান আলোচনা।
সৌরভ ঘোষ বলেন, রাশিয়ার ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য এমনিতেই তলানিতে। তার ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে চান, তবে তাঁকে রাশিয়ার প্রতি সমর্থনমূলক আচরণ করতে হবে।
যেসব দেশ রাশিয়ার তেল ও গ্যাস কিনছে, সেসব দেশের ওপর ট্রাম্প নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেসব দেশের উচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে, তারাই মূলত এবার ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৯ হাজার ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার। চীনের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
সৌরভ ঘোষ ব্যাখ্যা দিয়ে আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্য ঘাটতি বেশি, তাই স্বাভাবিকভাবে তালিকায় তাদের নামই বেশি।
সৌরভ বলছেন, তার ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, অভ্যন্তরীণ মূল্য সংযোজন কর এবং অন্যায্য মুদ্রা হারসহ অ-শুল্ক বাধাগুলো পারস্পরিক শুল্ক নির্ধারণে ভূমিকা পালন করেছে। মনে হচ্ছে, অন্যান্য অন্তর্নিহিত মানদণ্ডকে বিবেচনায় না এনে বাণিজ্যে ভারসাম্য আনাই শুল্ক আরোপে মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছে।
সৌরভের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের তালিকায় যেসব দেশের নাম সবচেয়ে অবাক করা তার অন্যতম দুটি হলো, জাপান (২৪ শতাংশ) ও ভিয়েতনাম (৪৬ শতাংশ)।
ট্রাম্পের এই শুল্ক এরই মধ্যে বিশ্ববাণিজ্যে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে। কানাডা ও মেক্সিকো পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো শুল্কের প্রভাব মোকাবিলা ও তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে।
আর রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া আপাতত ট্রাম্পের লক্ষ্যবস্তুর বাইরে রয়েছে। তবে আগামী কয়েক মাসে কূটনৈতিক সম্পর্ক কেমন থাকে তার ভিত্তিতে সবকিছু বদলে যেতে পারে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের শুল্কের তালিকায় অস্ট্রেলিয়ার জনশূন্য দ্বীপও!২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনবাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র১২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ত ল ক য় র শ ল ক আর সব দ শ র র ওপর ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলবেন কি এটা কোন ‘জাস্টিস’
২২ এপ্রিল যশোরে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ‘মব জাস্টিস আর অ্যালাউ (অনুমোদন) করা যাবে না’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম, দেরিতে হলেও সরকারের হুঁশ ফিরে এসেছে এবং মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে তারা কঠোর অবস্থান নেবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যাকে ‘মব জাস্টিস’ বলছেন, সেটা আসলে মব ভায়োলেন্স। রাস্তাঘাটে ঘরে বাইরে কোনো অজুহাত পেলেই একধরনের মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী, দুর্বলের ওপর সবলের সহিংসতা। কবি যেমন বলেছেন, বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে কিন্তু মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত মানুষগুলো এতটাই অসহায় যে থানা পুলিশ কিংবা আদালতেও যেতে ভয় পান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই ঘোষণার পরও মব ভায়োলেন্স বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন স্থানে নারী ও সংখ্যালঘুরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সেদিন দেখলাম, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একদল লোক বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে হেনস্তা করছেন এবং তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারতেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেই সভায় যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলেছেন, সেটি হলো ১৫ হাজার বোতল ফেনসিডিল ছেড়ে দিয়ে ৫০০ বোতল ‘রিকভার’ (উদ্ধার) দেখানো। কারা দেখাচ্ছেন? কারা মাদকদ্রব্য উদ্ধার করছেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কেউ পুলিশের লোক, কেউবা র্যাবের।
আওয়ামী লীগ সরকার মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখিয়েছিল, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বহু মানুষ হত্যা করেছিল। কিন্তু তারপরও দেশ মাদক ও সন্ত্রাসের নিরাপদ ভূমি হওয়ার কারণ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই বক্তব্য। তাঁরা ১৫ হাজার বোতল ফেনসিডিল ছেড়ে দিয়ে ৫০০ বোতল ধরেছেন। অর্থাৎ ৩০ ভাগের একভাগ ধরেছেন, ২৯ ভাগই বাজারজাত হয়েছে।
গত সোমবার বরিশালের আগৈলঝাড়ায় র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানের সময় সিয়াম মোল্লা নামে কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। তার আহত রাকিব মোল্লা এখন বরিশালে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। র্যাবের দাবি অনুযায়ী তাঁরা নাকি দুর্ধর্ষ মাদকব্যবসায়ী। র্যাব সদস্যরা যেই মাদকবিরোধী অভিযানে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, অমনি তাদের ওপর হামলা করেছেন ওই দুই শিশু কিশোর। তারা শিশু কিশোরই।
জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী নিহত সিয়ামের জন্ম ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। মৃত্যুর দিন ২১ এপ্রিল তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর ১ মাস ২৮ দিন। আর রাকিবের জন্ম ২০০৭ সালের ১ আগস্ট। সেই হিসাবে তার বয়স ১৭ বছর ৮ মাস ২০ দিন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দুজনই শিশু-কিশোর।
অবশ্য র্যাব অভিযানের ‘ন্যায্যতা’ প্রমাণ করতে নিহত সিয়াম মোল্লার বয়স ২২ ও আহত রাকিব মোল্লার বয়স ২১ বছর বলে উল্লেখ করেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, ওই দুই শিক্ষার্থী মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদকাসক্ত ছিল না।
হত্যার প্রতিবাদে উজিরপুরের সাহেবের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা। নিহত সিয়াম এই বিদ্যালয় থেকে গতবার এসএসসি পাস করে একই এলাকার আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর রাকিব মোল্লা এ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
সিয়াম মাদক ব্যবসা করত কি করত না, সেটি প্রমাণের পথ র্যাবই বন্ধ করে দিয়েছে। মৃত মানুষ তো আর সাক্ষ্য দিতে পারবে না। র্যাবের দাবি যদি সত্যও ধরে নেওয়া হয়, তাহলেও কি কলেজ পড়ুয়াকে এক কিশোরকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা যায়? সিয়ামের মৃত্যুর পর তার বাবা রিপন মোল্লা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা কী করবেন? আমার পোলারে ফিরাইয়্যা দেতে পারবেন? লেইখ্যা কী অইবে, আমি আল্লার কাছে বিচার দিলাম।’র্যাবের দাবি, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার জন্য র্যাব সদস্যরা অভিযানে গেলে সেখানে মাদক ব্যবসায়ী ১০-১১ জন মিলে তাঁদের ওপর হামলা করেন। এরপর আত্মরক্ষার্থে র্যাব সদস্যরা গুলি করতে বাধ্য হন। তাদের এ সাফাই বক্তব্য আওয়ামী লীগ আমলে বন্দুকযুদ্ধে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার কথাই মনে করিয়ে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে র্যাব ও পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করার কথা বলে বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারাকে জায়েজ করতে চায়।
গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলেও কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সেই একই আত্মরক্ষার্থে গুলি কিংবা বন্দুকযুদ্ধের বয়ান দেওয়া হয়।
পুলিশের ভাষ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় আগৈলঝাড়ার রত্নপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়ায় সাদাপোশাকে র্যাব-৮-এর মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে সিয়াম মোল্লা নিহত হয়। তাঁর খালাতো ভাই আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই মারা গেছে। এতে যতটা না কষ্ট পাচ্ছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি, তাদের দুজনকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দেওয়ায়। দয়া করে এটি আপনারা গণমাধ্যমে তুলে ধরুন। তারা শিশু-কিশোর, মাদকাসক্ত ছিল না।’
র্যাবের অভিযানে গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত ও এক শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে উজিরপুর উপজেলার সাহেবেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে