ম্যানিপুলেটরদের সঙ্গ কেন ক্ষতিকর, কীভাবে চিনবেন
Published: 3rd, April 2025 GMT
ম্যানিপুলেটর চেনার কিছু মনোবৈজ্ঞানিক উপায়
মনোবিজ্ঞান থেকে জানা যায় ‘গ্যাসলাইটিং’ থেকে শুরু করে ‘লাভ বম্বিং’ পর্যন্ত নানা উপায়েই ম্যানিপুলেটররা অপরকে নিয়ন্ত্রণ করে। এসব লক্ষণ দেখলেই সাবধান হয়ে যান। মানসিক শান্তির জন্য এসব ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। ম্যানিপুলেটর চেনার কিছু উপায় জেনে রাখুন—
গ্যাসলাইটিং‘গ্যাসলাইটিং’ অর্থ হলো নিজের ভুলের জন্য অপরকে দোষারোপ করা। ম্যানিপুলেটরদের অন্যতম স্বভাব হলো গ্যাসলাইটিং। নিজেদের ভুল স্বীকার না করে সত্যকে বিকৃত করায় এরা অত্যন্ত পারদর্শী। দেখা যায়, একটি ঘটনা ঘটেছিল একভাবে, কিন্তু তারা বর্ণনা করবে অন্যভাবে। এমনকি আপনি যদি অতীতে কোনো ভুল না-ও করে থাকেন, তারা এমনভাবে সবকিছু বর্ণনা করবে যে আপনার মনে হবে আপনিই হয়তোবা দোষ করেছিলেন, কিন্তু ভুলে গেছেন। এসবই তাদের গ্যাসলাইটিং প্রক্রিয়ার অংশ।
অন্যকে অপরাধবোধে ভোগানোআপনি মনে করতে পারেন তারা আপনার বন্ধু। কিন্তু তারা প্রায়ই আপনার আবেগ-অনুভূতিগুলোকে আপনার বিরুদ্ধেই ব্যবহার করবে। আপনি নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকলে, নিজের ব্যক্তিগত সীমারেখা মেনে চলতে চাইলেও আপনাকে তারা আপরাধবোধে ভোগাবে।
আরও পড়ুনআলফা পুরুষের সঙ্গে প্রেম করছেন? জেনে নিন কী বিপদের মধ্যে আছেন০৫ ডিসেম্বর ২০২৪নিষ্ক্রিয় আক্রমণাত্মক আচরণএরা আপনার সঙ্গে কখনোই কোনো কথা খোলামেলাভাবে বলবে না। এরা ব্যাঙ্গাত্মক কথা বলবে, চুপচাপ থাকবে, সূক্ষ্মভাবে খোঁচা দিয়ে আপনাকে কষ্ট দেবে এবং আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে।
লাভ বম্বিং
অনেক সময় আমরা কারও কারও আচরণে এত বেশি বৈপরীত্য খুঁজে পাই যে বুঝতেই পারি না তাদের আসল চেহারা আদতে কোনটা। প্রায়ই দেখা যায় সম্পর্কের শুরুতে একটা মানুষ আপনাকে সারা দিন টেক্সট পাঠাত, ‘খেয়েছ?’, ‘ঘুম থেকে কখন উঠলে?’ এ ধরনের খুঁটিনাটি প্রশ্ন করে আপনাকে সারা দিনই মুঠোফোনে ব্যস্ত রাখত, প্রায়ই দামি দামি উপহার দিয়ে আপনাকে সারপ্রাইজ দিত। কিন্তু এই সুখ আপনার কপালে বেশি দিন সইল না। বছর না ঘুরতেই আপনি যখন মারাত্মক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে পড়ে থাকলেন, তখন সে আপনাকে দেখতে আসা তো দূরে থাক, একটা খবরও নিল না। অথচ আপনাদের সম্পর্ক তখনো বিদ্যমান। আপনি শত ভেবেও বুঝতে পারলেন না আপনার দোষটা কোথায়। সবকিছু পেয়েও কেন হারাতে হলো? ভাবা বন্ধ করুন। আপনি আসলে ‘লাভ বম্বিং’-এর শিকার হয়েছিলেন।
‘লাভ বম্বিং’ হলো কাউকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে তার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখানো কিংবা অতিরিক্ত যত্নশীল আচরণ করা। এটি ম্যানিপুলেটরদের অন্যতম কৌশল। কখনো কখনো আপনার সঙ্গে তাদের আচরণ হয় অত্যন্ত মধুর। তাদের আচরণ দেখে মনে হবে আপনিই তাদের সবকিছু। মধুর আচরণ দিয়েই তারা আপনার বিশ্বাস অর্জন করে। পরমুহূর্তেই দেখা যায়, তারা আপনাকে আর চেনেই না! তাদের লোক দেখানো ক্ষণিকের ভালোবাসা শুধু আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
অপরকে দোষারোপ করা
নিজেদের দোষ এরা স্বীকার করে না। নিজেদের কাজের কোনো দায়ভার এরা গ্রহণ করে না। নিজেদের দোষ অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয় এবং নিজেরাই ভিকটিম সাজে।
আরও পড়ুনএই কারণে যে সম্পর্ক ভেঙে যেতে পারে, আপনি হয়তো কখনো ভাবেনইনি২৩ জানুয়ারি ২০২৫ভিকটিম সাজাএরা নিজেদের দুঃখ–কষ্ট সম্পর্কে বাড়িয়ে বলে। নাটকীয়ভাবে অন্যদের সহানুভূতি পেতে চায়। নিজেদের কাজের এবং আচরণের কোনো দায়ভার তারা গ্রহণ করে না।
অপরের ব্যক্তিগত সীমানা অতিক্রম করা
তারা আপনার সহনশীলতা পরীক্ষা করতে চায়। আপনার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতাকে সম্মান করে না। এরা এমন সব কাজ আপনাকে দিয়ে করাতে চাইবে, যেসব আপনি করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।
তাদের ওপর আপনাকে নির্ভরশীল করে ফেলাতারা খুব সূক্ষ্মভাবে আপনার স্বাধীনতাকে সীমিত করে ফেলবে, যাতে আপনি মানসিক, আর্থিক ও সামাজিক বিষয়ে তাদের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। বিশেষ করে আপনি যদি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হন, এদের জন্য সেটি হতে পারে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ, এমনকি দিনের পর দিন নির্যাতন করার একটি সুবর্ণ সুযোগ।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনচারটি প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলে ধরে নেবেন আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্ক মজবুত১২ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আপন র স আপন র ব র জন য আপন ক
এছাড়াও পড়ুন:
কুয়েট শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান হাসনাত আবদুল্লাহর
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে হাসনাত আবদুল্লাহ শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
সেখানে তিনি লেখেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রহসনমূলক আচরণ করার পরিণতি কী হতে পারে, তা চব্বিশের জুলাইয়ে দেখেছে বাংলাদেশ। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও আমরা এমন ফ্যাসিবাদী আচরণ দেখতে চাই না।”
কুয়েটের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, “কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।”
সোমবার (২১ এপ্রিল) পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ৩২ জন আমরণ অনশন শুরু করেন। বিকেল ৩টায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দার পূর্বদিকে অবস্থান নেন। এরপর সেখানে বিভিন্ন বিভাগের ৩২ জন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন শুরু করেন। অনশনরত ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।
এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি গত রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন।
আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে, আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে।
গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন।
ঢাকা/ইভা