খরচ বাঁচাতে অফিসের শৌচাগারে বসবাস
Published: 3rd, April 2025 GMT
দ্রব্যমূল্য আর বাড়িভাড়ার ঊর্ধ্বগতির কারণে, বিশেষ করে শহুরে জীবন যে কতটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ চীনা তরুণী ইয়াং। ১৮ বছরের এই তরুণী দক্ষিণ চীনের হুবেই প্রদেশের একটি গ্রামাঞ্চলে বড় হয়েছেন। এই তরুণী চাকরিসূত্রে এখন হুনান প্রদেশের জুজোউ শহরে থাকেন। সেখানে একটি আসবাব বিক্রির দোকানে কাজ করেন তিনি, মাসে ২ হাজার ৭০০ ইউয়ান বেতন পান।
শহরটিতে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করতে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ ইউয়ান খরচ করতে হয়। ইয়াং যে বেতন পান, তা দিয়ে তাঁর পক্ষে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করা কঠিন। জীবনযাত্রার বাকি খরচও তো তাঁকে চালাতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য তিনি কিছু সঞ্চয়ও করতে চান।
এ জন্য অভিনব এক সিদ্ধান্ত নেন এই তরুণী। তিনি তাঁর বসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসেন, মাসে ৫০ ইউয়ানের বিনিময়ে তিনি তাঁর অফিসের একটি শৌচাগারে বসবাস করবেন। শৌচাগারের আয়তন ৬ বর্গমিটার।
সেখানে ইয়াং একটি ছোট বিছানা পাতেন, যেটি গুটিয়ে রাখা যায়। একটি ছোট্ট রান্নার পাত্র, একটি পর্দা আর জামাকাপড় ঝোলানোর একটি র্যাক। এক মাস ধরে তিনি ওই শৌচাগারে বসবাস করছেন। তিনি প্রতিদিন শৌচাগারটি পরিষ্কার করেন এবং মাঝেমধ্যে রাতে নুডলস রান্না করে খান।
দিনের বেলা ইয়াং তাঁর জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে রাখেন। যেন অন্য কর্মীরা স্বস্তির সঙ্গে শৌচাগারটি ব্যবহার করতে পারেন।
ইয়াং বলেন, তিনি শৌচাগারটি নিয়মিত পরিষ্কার করেন, এতে কোনো দুর্গন্ধ নেই। তা ছাড়া যেহেতু কোম্পানিটিতে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভির ব্যবস্থা আছে, তাই তিনি সেখানে থাকতে নিরাপদও বোধ করেন।
এই তরুণী কখনো শৌচাগারের দরজা বন্ধ করেন না বলেও জানান। বলেন, এখনো তাঁর কোনো কিছু খোয়া যায়নি।
ইয়াংয়ের বসও একজন নারী। তিনিও তরুণ বয়সে স্বাধীন জীবনযাপনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছিলেন।
ইয়াং কিন্তু শৌচাগারে বসবাস নিয়ে একেবারেই লজ্জিত নন। বরং তিনি চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত তাঁর শৌচাগারে বসবাসের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন। তাঁর অনুসারী সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।
ইয়াংয়ের বয়স যখন মাত্র এক বছর, তখন তাঁর বাবা-মা তাঁকে দাদা-দাদির কাছে রেখে কাজের জন্য অন্যত্র চলে যান। ১৬ বছর বয়সে ইয়াং বাড়ি ছাড়েন এবং নিজেই নিজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ভবিষ্যতে নিজের জন্য একটি বাড়ি বা গাড়ি কিনতে চান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বসব স
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীরে পর্যটকদের গুলি করার আগে কী হয়েছিল, জানালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলা করার আগে নারী ও শিশুদের কাছ থেকে পুরুষদের আলাদা করেছিলেন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা। এরপর পুরুষদের তাঁদের নাম জিজ্ঞাসা করা হয় এবং খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং হামলার ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা এ কথা বলেছেন।
গত মঙ্গলবার বৈসরান উপত্যকায় হামলার সময় ঘটনাস্থলে প্রায় এক হাজার পর্যটক এবং তাঁদের নানা ধরনের সেবাদানকারী ৩০০ স্থানীয় ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। ঘন পাইনবনঘেরা সবুজ পাহাড়ি তৃণভূমির জন্য বৈসরান উপত্যকা ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত।
তিনজন বন্দুকধারী এই হামলা চালিয়েছেন। ভারতে গত প্রায় দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার ঘটনা এটি।
একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তৃণভূমির আশপাশে ঘোরাফেরা করছিলেন। তাঁরা প্রায় ৬০টি গুলি চালান। তবে তাঁরা নারী ও শিশুদের ওপর হামলা করেননি। গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় ওই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। হামলার ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানুষের সঙ্গে আলাপের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি এ কথা বলেছেন।
আরও পড়ুনকাশ্মীরের মানুষকে শত্রু ভাববেন না: মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ১৬ ঘণ্টা আগেহামলায় বাবা ও চাচাকে হারিয়েছেন ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা আসাবরী জগদালে। স্থানীয় গণমাধ্যমকে আসাবরী বলেন, গুলি শুরু হলে তিনি ও তাঁর পরিবার অন্য পর্যটকদের সঙ্গে কাছাকাছি একটি তাঁবুতে লুকিয়ে পড়েছিলেন।
আসাবরী বলেন, তাঁর বাবার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে সন্ত্রাসীরা তাঁর মাথায়, কানের পেছনে এবং পিঠে মোট তিনটি গুলি চালান। তাঁর কাকা তখন তাঁর পাশেই ছিলেন। সন্ত্রাসীরা তাঁর ওপর চার থেকে পাঁচটি গুলি চালান।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু শিক্ষক দেবাশীষ ভট্টাচার্য ওই হামলায় বেঁচে যান। তিনি বলেন, বন্দুকধারীরা চলে যাওয়ার পর তাঁরা পালিয়ে যান এবং প্রাণে বাঁচতে প্রায় দুই ঘণ্টা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেঁটেছেন।
নিরাপত্তাবাহিনীর একটি সূত্র বলেছে, হামলাকারী ব্যক্তিরা ঐতিহ্যবাহী লম্বা কুর্তা ও ঢিলে পায়জামা পরা ছিলেন এবং তাঁদের একজনের শরীরে একটি ক্যামেরা লাগানো ছিল। জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র বৈসরান উপত্যকার তিনটি স্থানে তাঁরা গুলি চালান।
নিরাপত্তা সূত্র বলছে, কিছু পর্যটককে মাঠে অবস্থিত খাবারের দোকানগুলোতে গুলি করা হয়েছে। আবার কিছু মানুষকে জঙ্গলের ভেতর নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়।
হিমালয়ের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পেহেলগাম থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরত্বে বৈসরানের অবস্থান। সেখানে পৌঁছাতে পর্যটকদের পায়ে হেঁটে যেতে হয় অথবা টাট্টু ঘোড়া ভাড়া করতে হয়।
এই জায়গায় জিপলাইনিং ও জর্বিংয়ের মতো রোমাঞ্চকর আয়োজনগুলো আছে। এটি তুলিয়ান হ্রদের দিকে যাত্রারত পর্বতারোহীদের জন্য ক্যাম্পসাইট হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বৈসরান থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে তুলিয়ান হ্রদের অবস্থান।
প্রশান্ত সাতপথি, তাঁর স্ত্রী ও ৯ বছর বয়সী ছেলে পূর্বাঞ্চলীয় ওড়িশা রাজ্য থেকে বৈসরানে ভ্রমণে এসেছিলেন। এটি ছিল তাঁদের চার দিনের সফরের শেষ দিন।
প্রশান্তের স্ত্রী প্রিয়দর্শিনী স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, একটি জিপলাইন রাইড শেষ করা মাত্রই একটি গুলি এসে সাতপথির মাথায় লাগে। তিনি বলেন, ‘তিনি আমার চোখের সামনেই লুটিয়ে পড়েন।’
হামলায় নিহত ২৬ জনের একজন পেহেলগামের টাট্টু ঘোড়াচালক আদিল হুসেন শাহ। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ গত বুধবার শাহের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শুনেছি তিনি সাধারণভাবে মারা যাননি, তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন… তিনি হামলা থামানোর চেষ্টা করেছিলেন, হয়তো বন্দুকটি কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন, সেই কারণেই তাঁকে নিশানা করা হয়।’