ধান কেটে নেওয়া হয়েছে সম্ভবত কয়েক মাস আগে। বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে খড় পড়ে আছে। খেতের আলে গজিয়েছে সবুজ ঘাস। এর মাঝে দুজন রাখাল আপনমনে গরু চরাচ্ছেন। হাতে থাকা লাঠি দিয়ে তাঁরা গরুদের এদিক-ওদিক সরাচ্ছেন আর ঘাস খাওয়াচ্ছেন।

গত মঙ্গলবার বেলা চারটার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার রামেশ্বর গ্রামের পাশের খলারবন শান্তিনগর হাওরে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে। রাখলদের একজন কিশোর, অন্যজন মধ্যবয়সী। কথা হয় জহের পাত্রর (৫৫) সঙ্গে। তাঁর বাড়ি উপজেলার ঠাকুরমাটি গ্রামে।

চিকনাগুল চা-বাগানে দৈনিক ১৭৯ টাকায় জহের পাত্র পাহারাদারের কাজ করেন। তিনি বলেন, তাঁদের গ্রামে ২৪ ঘরের শতাধিক গরু আছে। এসব গরুকে প্রতিদিন দুই পরিবারের দুজন ব্যক্তি পালাক্রমে মাঠে-হাওরে নিয়ে ঘাস খাওয়ান। ১২ দিন পরপর দুই পরিবারের পালা পড়ে। তবে মাঠে আর হাওরে এখন পর্যাপ্ত ঘাস না থাকায় তাঁদের ঘাসের সন্ধানে গরুগুলোকে নিয়ে অনেকখানি পথ যেতে হয়।

 জহের বলেন, তাঁর নিজের পাঁচটা গরু আছে। বাকি গরুগুলো অন্যদের। দীর্ঘদিন ধরে গরুগুলো চরাতে গিয়ে সব কটিকে আপন মনে হয়। এসব গরু রাখতে রাখতে মায়া জন্মে গেছে। তাই সব কটি গরুর পেট ভরলে বাড়ি নিয়ে যান। যদি বুঝতে পারেন, একটা গরু কম খেয়েছে, তাহলে সেটি পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘাস না খাওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করেন।

রোদের তীব্রতা আটকাতে জহের মাথায় ছায়া দিতে এক হাতে ছাতা ধরে ছিলেন। তাঁর অপর হাতে ছিল গরু তাড়ানোর চিকন বাঁশের লাঠি। কথায় কথায় জহের নিজ পরিবারের কথাও শোনান। তিনি বলেন, গৃহিণী স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার। আর্থিক দুরাবস্থার কারণে সন্তানদের যথাযথভাবে পড়াশোনা করাতে পারেননি। বড় ছেলে সুশান্ত পাত্র মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। এখন তাঁকে একটি ইজিবাইক কিনে দিয়েছেন। আরেক ছেলে মিঠুন পাত্র রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।

প্রতি মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয় বলে জহের পাত্র জানালেন। তিনি বলেন, ‘সংসারে তিনজন আয় করি। তবে আয়ের চেয়ে খরচ বেশি, সংসার চলে না। কোনোরকমে টেনেটুনে সংসার চলে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আইসিসি-এসিসির ইভেন্টেও ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ নিয়ে শঙ্কা

ভারতের জম্মু-কাশ্মিরে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে পর্যটকসহ অন্তত ২৬জন নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানের দিক থেকে হামলা করার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। সন্ত্রাসী এই হামলার প্রেক্ষিতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আরও অবনতি হয়েছে। ক্রিকেট সম্পর্কেও তিক্ততার ছোঁয়া লেগেছে।

এরই মধ্যে জানা গেছে, ভারত জানিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্রিকেটে কোন ধরনের সিরিজ খেলবে না তারা। গুঞ্জন ছড়িয়েছে- পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারত আইসিসি ও এসিসির ইভেন্টেও খেলতে চায় না। বিষয়টি পরিষ্কার করে বিসিসিআই চিঠি দিয়েছে আইসিসি ও এসিসিকে (এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিল)।

বিষয়টি নিয়ে বিসিসিআই-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজিব শুকলা জানিয়েছেন, এমন কোন চিঠি দেওয়া হয়নি। তবে এক্ষেত্রে বোর্ড ভারত সরকারের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করবে। বিসিসিআই-এর শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আইসিসি ও এসিসির ইভেন্টে ভারত-পাকিস্তানকে একই গ্রুপে না রাখা বিষয়ক একটি খবর তিনিও পেয়েছেন। তবে নিশ্চিত করতে পারেননি। বিষয়টি সংবেদনশীল হিসেবে দেখছে বিসিসিআই।

চলতি বছরে আইসিসি ও এসিসির দুটি ইভেন্ট আছে। একটি সেপ্টেম্বরে টি-২০ ফরম্যাটের এশিয়া কাপ। অন্যটি সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ। দুটি টুর্নামেন্টেরই আয়োজক বিসিসিআই। এর মধ্যে ছেলেদের এশিয়া কাপ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে হবে। সেটি শ্রীলঙ্কা নাকি আরব  আমিরাত তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নারী বিশ্বকাপে পাকিস্তানের নিরপেক্ষ ভেন্যুতে ম্যাচ খেলার বিষয়টি আগেই চূড়ান্ত করা হয়েছে।

দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মতো বড় ইভেন্টেও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ না খেলার সিদ্ধান্ত নিলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে আইসিসি ও এসিসি। এই যেমন- চার বছরের জন্য এসিসি এশিয়া কাপের সম্প্রচার স্বর্ত বিক্রি করেছে ১৭০ মিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার কোটি টাকা। এশিয়া কাপের প্রতি আসরে ভারত-পাকিস্তান অন্তত দু’বার মুখোমুখি হবে ধরেই এতো টাকায় বিক্রি করা হয়েছে এশিয়া কাপের সম্প্রচার স্বত্ব।

আইসিসি কিংবা এসিসির ইভেন্টে ভারত ও পাকিস্তান মুখোমুখি হবে কিনা তা আগামী মাসে জানা যেতে পারে। হাইব্রিড বা নিরপেক্ষ ভেন্যুতে অনুষ্ঠেয় আগামী সেপ্টেম্বরের এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের সূচি মে মাসে চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এখন টুর্নামেন্ট ও সূচি ঘোষণা ঝুলে যাওয়ার শঙ্কা বেশি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ