গাজার বড় অংশ দখলে নিতে চায় ইসরায়েল
Published: 3rd, April 2025 GMT
গাজায় সামরিক অভিযান আরও বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে গতকাল বুধবার গাজার বিশাল এলাকা দখল করে তা ইসরায়েলের নিরাপত্তা অঞ্চলে যুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গাজার জনগণকে বিভিন্ন এলাকা ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ এক বিবৃতিতে বলেন, যেসব এলাকায় লড়াই চলছে, সেখান থেকে লোকজনকে সরে যেতে হবে। একই সঙ্গে তিনি গাজার জনগণকে হামাসকে নির্মূল করার আহ্বান জানান। কাৎজ বলেন, হামাসকে নির্মূল করে ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত দেওয়াটাই যুদ্ধ বন্ধের একমাত্র পথ।
ইসরাইল কাৎজ আরও বলেন, ইসরায়েলি অভিযানে সশস্ত্র গোষ্ঠীকে নির্মূল ও অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে। দখলকৃত বিশাল এলাকাকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
প্রতিরক্ষাপ্রধান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী ও তাদের অবকাঠামো ধ্বংস ও নির্মূলের জন্য’ গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী থাকবে।
গত সপ্তাহে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, সেনাবাহিনী শিগগিরই হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার অতিরিক্ত এলাকায় ’পূর্ণ শক্তি দিয়ে অভিযান’ চালাবে।
এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, জিম্মিদের কেবল আলোচনার মাধ্যমেই মুক্তি দেওয়া হবে, সামরিক চাপের মাধ্যমে নয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফা শহর ও খান ইউনিস শহরের আশপাশে বসবাসকারী গাজার বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার সতর্কতা জারি করেছে। তাঁদের আগে মানবিক করিডর হিসেবে ব্যবহৃত আল-মাওয়াসি এলাকায় চলে যেতে বলা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গতকাল বুধবার ইসরায়েলি হামলায় ৪১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে জাতিসংঘের এক ক্লিনিকে হামলায় শিশুসহ ১৯ জন নিহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি রেডিওর তথ্য অনুযায়ী, রাফা খালি করার নির্দেশ দেওয়ার পর ওই এলাকা প্রায় জনশূন্য হয়ে গেছে।
বাফার জোন
ইসরাইল কাৎজের বিবৃতিতে ইসরায়েল কীভাবে গাজার বিভিন্ন এলাকা দখল করবে এবং তা স্থায়ী হবে কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি। বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা গাজার ভূখণ্ড আরও দখল করলে সেখানকার জনগণের ওপর আরও চাপ বাড়বে। ইসরায়েলি অধিকার সংস্থা গিসার তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলে ইতিমধ্যে গাজার ৬২ বর্গকিলোমিটার এলাকা বা ১৭ শতাংশ দখলে নিয়ে নিয়েছে। গাজার চারপাশে বাফার জোন সৃষ্টিতে এ এলাকা দখলে নিয়েছে তারা। এতে সেখানে থাকা কূপ, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা, পানি শোধনাগারসহ গাজার কৃষিজমির উল্লেখযোগ্য অংশ হাতছাড়া হবে। এতে গাজার মানুষের টিকে থাকার জন্য আরও চাপ বাড়বে।
একই সঙ্গে ইসরায়েলি নেতারা বলছেন, তাঁরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা খালি করার প্রস্তাব সমর্থন করেন। তাঁরা গাজাবাসীকে স্বেচ্ছায় গাজা ত্যাগে সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর আগে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে আবাসন প্রকল্পের প্রস্তাব করেছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান বারবার জানানোর পর কাৎজ এমন মন্তব্য করেছেন। এর আগে নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের কাছে থাকা অবশিষ্ট ৫৯ জন জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার জন্য ‘সামরিক চাপ প্রয়োগই সর্বোত্তম উপায়’।
মার্কিন-সমর্থিত ছয় সপ্তাহের নাজুক যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর গত মাসে গাজায় আবার বিমান হামলা ও স্থল সেনা পাঠায় ইসরায়েল। যুদ্ধ বন্ধ করে আবার আলোচনা শুরুর জন্য কাতার ও মিসরের প্রচেষ্টা এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে।
গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় তীব্র বোমাবর্ষণ শুরু করে এবং তারপর নতুন করে স্থল আক্রমণ শুরু করে। ফলে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধে প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ওপর আক্রমণের ফলে এ যুদ্ধ শুরু হয়। ফলে ১ হাজার ২১৮ জন নিহত হন। ওই দিন থেকে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযানে গাজায় কমপক্ষে ৫০ হাজার ৩৫৭ জন নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক।
নেতানিয়াহুর হাঙ্গেরি সফর
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু চার দিনের সফরে হাঙ্গেরি যাচ্ছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর অরবানের আমন্ত্রণে তিনি সেখানে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে নেতানিয়াহু হাঙ্গেরি সফরে গেলেও আদালতের রায়কে সম্মান দেখাচ্ছে না হাঙ্গেরি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র য় ইসর য় ল র জন য মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজাবাসীদের স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন জাতিসংঘের মহাসচিব
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর গাজার জনগণকে অন্য দেশে স্থানান্তরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর ব্যাপক বিতর্কিত এই পরিকল্পনা সম্পর্কে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) তুরস্কের সরকারি সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর প্রশ্নের জবাবে গুতেরেস বলেন, “ফিলিস্তিনিদের অবশ্যই একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে, একটি ইসরায়েলি রাষ্ট্রের পাশাপাশি। এটাই একমাত্র সমাধান, যা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি আনতে পারে।”
তিনি আরো বলেন, “ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তর করা ‘আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী’।”
আরো পড়ুন:
চীনা পণ্যে ১০৪ শতাংশ মার্কিন শুল্ক কার্যকর আজ থেকেই
অধ্যাপক ইউনূস-পিটার হাস সাক্ষাৎ
নেতানিয়াহুর গাজার জনগণকে ছিটমহলে ‘অবরুদ্ধ’ রাখার দাবি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, গুতেরেস চিকিৎসা সেবার জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়ানোর জন্য সবকিছু করতে হবে।”
‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, গুতেরেস বলেন, “পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে শব্দার্থ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই।”
তিনি বলেন, “ গাজায় গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) উপযুক্ত সংস্থা। তিনি আরো বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।”
জাতিসংঘ প্রধান জোর দিয়ে আরো বলেন, “ফিলিস্তিনিদের চলমান দুর্ভোগ ‘সম্মিলিত শাস্তি’ এবং কোনোভাবেই তা ন্যায্যতাপূর্ণ হতে পারে না।” তিনি অবিলম্বে এই ধরনের অনুশীলন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়লি হামলায় এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি। নিহত ও আহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত নভেম্বরে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
গাজায় তাদের আচরণের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলাও চলছে।
ঢাকা/ফিরোজ