‘প্রিন্স অব টলিউড’খ্যাত অভিনেতা মহেশ বাবু। পর্দায় অসাধারণ অভিনয় এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব গুণের কারণে অসংখ্য ভক্ত তার। এই অভিনেতার কন্যা সিতারা তেলেগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ জনপ্রিয়।

মহেশ বাবু অভিনীত ‘সরকারু বারি পাতা’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় তার অভিষেক হয়েছে। ২০২২ সালে মুক্তি পায় এটি। মুক্তির পর দারুণ প্রশংসা কুড়ায় সিতারা। কিছুদিন ধরে গুঞ্জন উড়ছে, ১২ বছর বয়সি সিতারা নায়িকা হিসেবে বড় পর্দায় পা রাখতে যাচ্ছে। অবশেষে এ গুঞ্জন নিয়ে মুখ খুললেন মহেশ বাবুর স্ত্রী নম্রতা শিরোদকর।

 

আরো পড়ুন:

বিয়ের পর অভিনয়কে বিদায়: নীরবতা ভাঙলেন মহেশ বাবুর শ্যালিকা

রাজামৌলির সিনেমার জন্য ১৬৪ কোটি টাকা ছাড়াও লভ্যাংশ নেবেন মহেশ!

 

কয়েক দিন আগে একটি অনুষ্ঠানে মায়ের সঙ্গে হাজির হয় সিতারা। সেখানে নায়িকা হিসেবে বড় পর্দায় পা রাখার গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় সিতারার কাছে। এ প্রশ্ন শুনে মায়ের দিকে তাকায় এই খুদে তারকা। এরপর নম্রতা শিরোদকর বলেন, “তার বয়স মাত্র ১২ বছর। এখনো অনেক সময় আছে। যদিও আমাদের পরিবার বিষয়টি নিয়ে উচ্ছ্বসিত। কিন্তু সবাই সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করছেন।”

ফিল্মি পরিবারে জন্ম ও বেড়ে উঠছে সিতারা। তার দাদা কৃষ্ণা বিখ্যাত একজন অভিনেতা ছিলেন। সিতারার বাবা-মা দুজনেই জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী। এর আগে ড্রিম মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিল সিতারা। সেই আলাপচারিতায় জানতে চাওয়া হয়েছিল, পারিবারিক উত্তরাধিকার সফলভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কীভাবে দেখে সিতারা?

 

এই প্রশ্নের জবাবে সিতারা বলে, “এই উত্তরাধিকারকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরে সত্যি ভালো লাগছে। চমৎকার এই পরিবারের সদস্য হতে পেরে আনন্দিত। আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেন আমি অভিনয় করতে চাই কিনা। এখন আমি বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। মডেলিং এবং অভিনয় দুটোর বিষয়েই আমি আগ্রহী। কিন্তু আমার বয়স মাত্র ১২ বছর। সুতরাং আমি এখনো নিশ্চিত নই।”

একটি জুয়েলারি কোম্পানির বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছে সিতারা। এ বিজ্ঞাপনে মেয়েকে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন মহেশ বাবু। সেই স্মৃতিচারণ করে সিতারা বলে, “আমার মা খুব কঠোর মানুষ। তবে বাবা আমাকে ভীষণ আদর (প্রশ্রয় দেন) করেন। আমার মনে আছে, বাবা আমার পিএমজে-এর বিজ্ঞাপন প্রথম দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন। আমি আমার মায়ের কাছ থেকে ফ্যাশন সেন্স পেয়েছি। আমি পাগল। কিন্তু মা তার পোশাক আমার জন্য রাখেন না। আমার মা ‘মিস ইন্ডিয়া’ বিজয়ী। তার দারুণ একটি মডেলিং ক্যারিয়ার ছিল। ‘মিস ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় তার ছবি দেখে অভিভূত।”

 

জুয়েলারি ব্র্যান্ড পিএমজে-এর নতুন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত করা হয়েছে সিতারাকে। প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ একটি গহনা লঞ্চ করে; যার নাম দেয় ‘সিতারা’। ২০২৩ সালের ৪ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইমস স্কয়ারে লঞ্চ করা হয় বিজ্ঞাপনটি।

ব‌্যক্তিগত জীবনে নম্রতা শিরোদকরের সঙ্গে গাটছড়া বেঁধেছেন মহেশ বাবু। এ দম্পতির ঘর আলো করে এসেছে পুত্র গৌতম ও কন‌্যা সিতারা। ২০১২ সালে জন্ম হয় সিতারার। অভিনয়ের পাশাপাশি নাচেও দারুণ পারদর্শী সিতারা।

 

সিতারা ও তার বড় ভাই গৌতম অভিনয় বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। সিতারা হায়দরাবাদ থেকে প্রশিক্ষণ নেয়, তার ভাই গৌতম নিউ ইয়র্কে ইউনিভার্সিটি থেকে নাটক বিষয়ে চার বছর মেয়াদি ডিগ্রি নিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন সিতারা।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, সিয়াসাত ডটকম

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বড় পর দ য় আম র ম

এছাড়াও পড়ুন:

‘তামাকে প্রতিদিন ৪৪২ মৃত্যু, এসডিজি অর্জনে বড় বাধা’

বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর অন্যতম কারণ তামাক। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিদিন ৪৪২জন মানুষ মারা যায়। তামাক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া অসংক্রামক রোগে মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনাসহ এসডিজির অন্যান্য লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়।

অবিলম্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের দাবি জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদ, চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদসহ বিশেষজ্ঞরা। আইন শক্তিশালী করতে যত দেরি হবে তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি ততই বাড়বে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও টেকসই উন্নয়নে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব বিষয়ে আলোচনা করেন।

আরো পড়ুন:

গোপালগঞ্জে নারীসহ ২ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার

সাড়ে ৬ কেজি হেরোইন উদ্ধার, কারবারি গ্রেপ্তার

গোলটেবিল বৈঠকে জানানো হয়, ২০১৫ সালে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) গৃহীত হয় যেখানে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য ডব্লিওএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর বাস্তবায়ন সরকারসমূহের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম ১ম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০৩ সালে এফসিটিসি স্বাক্ষর করে।

গোলটেবিল বৈঠকে আরো জানানো হয়, তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু এবং অসুস্থতা শুধু এসডিজির ৩য় লক্ষ্যমাত্রা-সুস্বাস্থ্য অর্জনের ক্ষেত্রেই বাধা নয়, বরং অন্যান্য লক্ষ্য অর্জনেও বাধা হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারকারী পরিবারগুলোর মাসিক খরচের ৫ শতাংশ তামাক ব্যবহারে এবং ১০ শতাংশ তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হয়। তামাক ব্যবহারের স্বাস্থ্য ব্যয় ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তামাকের কারণে দরিদ্র মানুষ, আরো দরিদ্র হয়ে পড়ে, যা এসডিজির দারিদ্র্য নির্মূল সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা-১ অর্জনে বড় বাধা।

তামাক চাষে বছরে ব্যবহৃত হয় এক লক্ষ একরের বেশি জমি, যা দেশে খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষির (লক্ষ্যমাত্রা-২) জন্য ক্রমশ: হুমকি তৈরি করছে। তামাক পাতা পোড়াতে এবং প্রক্রিয়াজাত করতে উজাড় হচ্ছে দেশের ৩০ শতাংশ বন। বিড়ি এবং জর্দা-গুল তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে নারী ও শিশুশ্রম। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়া সিগারেটের অবশিষ্টাংশসহ পলিথিনের মোড়ক ও জর্দা-গুলে ব্যবহৃত প্লাস্টিক কৌটা প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করছে। এভাবে তামাকের উৎপাদন এবং ব্যবহার টেকসই উন্নয়নের প্রায় সবকটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, “নারী শিশুসহ অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে আইন শক্তিশালীকরণের কোন বিকল্প নেই ।”

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, “তামাক ক্যানসার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। এসডিজির লক্ষ্য পূরণে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই।”

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর বলেন, “কোম্পানিগুলো আইন শক্তিশালীকরণের সাথে রাজস্ব আয় হারানোর যে যুক্তি দেখায় তার কোনো ভিত্তি নেই। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের চিত্রে এটি প্রমাণিত। তবে দীর্ঘমেয়াদে আমাদের চিন্তা করতে হবে কিভাবে তামাক রাজস্বের নির্ভরতা কমিয়ে অন্য খাতগুলো থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানো যায়।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, “জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে হবে। এতে জনগণ ও সরকার উভয়ই লাভবান হবে।”

চিকিৎসক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, “শুধু চিকিৎসা ব্যবস্থায় মনোযোগ না দিয়ে রোগের কারণ চিহ্নিত করে প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর জোর দিতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।”

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. অনুপম হোসেন বলেন, “তরুণদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ই-সিগারেট ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ্য করছি। এটির স্বাস্থ্য ক্ষতি তামাকের মতোই। আইন সংশোধনের মাধ্যমে এগুলো নিষিদ্ধ করতে হবে।”

এনটিভির হেড অফ নিউজ জহিরুল আলম বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের গণমাধ্যম খুবই শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে। খসড়া সংশোধনী দ্রুত পাস করতে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।”

গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য রাখেন আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন ও প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে প্ল্যাকার্ড হাতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রতি সমর্থন জানায় প্রত্যাশা ইয়ুথ ক্লাবের সদস্যবৃন্দ। আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার।

বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করেন। তামাকের সার্বিক ক্ষতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০২১ সালে এফসিটিসি-এর আলোকে আইন শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন উপদেষ্টা কমিটি খসড়া সংশোধনীতে প্রয়োজনীয় পরিমার্জনের কাজ করছে। খসড়াতে সকল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান বিলুপ্তকরণ, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধকরণ, খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ, ই-সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ এ ধরনের সব পণ্য উৎপাদন, আমদানি ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করাসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ