যুক্তরাষ্ট্রের উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অ্যালেক্স এন ওং বুধবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ (উচ্চ প্রতিনিধি) ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে টেলিকনফারেন্স করেছেন। দুই কর্মকর্তা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে বলেন, নতুন মার্কিন প্রশাসন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ।

মার্কিন সরকার সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী। ২০১৭ সাল থেকে তারা প্রায় ২.

৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রেখেছে এবং জাতিসংঘকে জরুরি খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা প্রদান করে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্র জুলাই বিদ্রোহের সময় বাংলাদেশের ছাত্রী প্রতিবাদী নেতাদের মর্যাদাপূর্ণ ম্যাডেলিন অ্যালব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক টন ত উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

চালের দাম যেটুকু কমে বাড়ে তার চেয়ে বেশি

নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। মাঝেমধ্যে দুই-এক টাকা কমলেও তা এক বা দুই সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হচ্ছে না। যত টাকা কমে তার চেয়ে বাড়ছে বেশি। এক বছরের বেশি সময় ধরে চালের বাজারে এমন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। 

বন্যায় ফলন কম, সরবরাহ খরচ বেড়ে যাওয়া, ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি কম– এ রকম নানা ছুতা দেখিয়ে মূলত চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন মিলার ও করপোরেট ব্যবসায়ীরা। 

ভোক্তা-সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, যথাযথ তদারকি ও সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ায় চাল ব্যবসায়ী চক্র নিজেদের ভিত্তি শক্ত করে ফেলছে। বড় ব্যবসায়ীরা চালের বাজারে কলকাঠি নাড়লেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ভরা মৌসুমে কৃষক থেকে ধান কিনে নিজেদের কবজায় নিয়ে নেয় তারা। তারপর পুরো বছর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার তাদের বাগে আনতে পারছে না। এতে বেশি ভুগতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষকে। 

কোন চালের দর কত সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, বাজারে গত এক বছরে সরু চালের দর বেড়েছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। মাঝারি চালের প্রায় ৯ এবং মোটা চালের ৫ শতাংশ দর বেড়েছে। যদিও গত এক মাসে দাম বাড়ার এই হার কিছুটা কম। তবে সরেজমিন বাজারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। 

গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরু বা মিনিকেট চালের দাম সর্বোচ্চ দরের রেকর্ড ছুঁয়েছে। ভালো মানের (মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের) এ চালের কেজি এখন সর্বোচ্চ ৯০ টাকা। 

বেড়েছে মোটা ও মাঝারি আকারের চালের দরও। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি গুটিস্বর্ণা বা মোটা চাল ৫৩ থেকে ৫৫ এবং  পাইজাম চাল ৫৬ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে এসব চাল অন্তত ২ টাকা কমে কেনা গেছে। বিআর-২৮ জাত বা মাঝারি চালের কেজি মাসখানেকের ব্যবধানে প্রায় ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৬ টাকায়। আবার ভালো মানের বিআর-২৮ জাতের চিকন চাল ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ মিনিকেট বলে বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৭২ টাকায়।

সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সরু চালের। ৮০ টাকা নিচে এখন সরু চাল মিলছে না। মানভেদে এ ধরনের চালের কেজি কিনতে ভোক্তাকে খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। এক-দেড় মাস আগে এ ধরনের চালের কেজি ছিল ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা।

ক্ষুব্ধ ক্রেতা

গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে ২৫ কেজি ওজনের এক বস্তা মিনিকেট (সরু) চাল কেনেন বেগুনবাড়ী এলাকার ইলেকট্রিশিয়ান শাহরিয়ার হোসেন। কত টাকায় কিনেছেন জানতে চাইলে তিনি সমকালকে বলেন, ‘সবজির দাম কমায়া বাহাদুরি করলে হবে? মানুষ কী শুধু সবজি খায়? আগে তো গরিব বাঁচাতে হবে, তারপর বাকি আলাপ।’ একই বাজারে গাজী সাইফুল নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘সরকার বড় ব্যবসায়ীদের ধরতে পারে না। এ জন্য চালের দামও কমে না।’ 

চালের সংকট নেই

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ১৬ লাখ ৮০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিপরীতে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারিভাবে আমদানি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৯ হাজার টন। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার টন চাল। সরকারি-বেসরকারি মিলে চলতি অর্থবছরের সাড়ে ৯ মাসে মোট আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৭৭ হাজার টন। সরকারের গুদামে বর্তমানে প্রায় ৯ লাখ টন চাল মজুত রয়েছে। 

অনেকে বাজারে সংকট আছে বলে আওয়াজ তুললেও মূলত চালের ঘাটতি নেই। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সংকট শুধু মুখে মুখে। চাহিদামতো সব সময় চাল থাকে। এর আগে কখনই সরু বা চিকন চালের দাম এতটা বাড়েনি। তাদের অভিযোগ, চালের বাজার এখন মিলার এবং করপোরেট ব্যবসায়ীর হাতে। 

তেজকুনিপাড়ার মায়ের দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘মিলাররা বলে চালের সংকট। তবে যখন যত বস্তার অর্ডার দেই, পাই। মিলে না থাকলে চাল কোথা থেকে দেয়। নাই নাই বলে আতঙ্কে ফেলে দাম বেশি নেয়।’ 

কারওয়ান বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী জনতা রাইস এজেন্সির মালিক মো. রাসেল বলেন, ‘গত বছর নির্বাচনের পর থেকে দাম বাড়ছে। সেই যে বাড়া শুরু হইল আর কমাতে পারল না সরকার।’ তবে আগামী সপ্তাহ থেকে বোরো ধান আসা শুরু হলে দাম কমতে পারে বলে ধারণা এই ব্যবসায়ীর।

খুচরা আর মিলগেটে চালের দামের ব্যবধান অনেক বেশি বলে মনে করেন মিল মালিকরা। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদ সমকালকে বলেন, মিলাররা চাল বিক্রির সময় পাইকারি ব্যবসায়ীকে চালান সরবরাহ করেন। তাতে চালের ক্রয়মূল্য লেখা থাকে। সরকারের উচিত ব্যবসায়ী পর্যায়ে চালান খোঁজ করে ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ফারাক দেখা। আর যদি কোনো মিলার চালান সরবরাহ না করেন তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। 

এবারও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে উল্লেখ করে শীর্ষস্থানীয় এই মিল মালিক বলেন, চাল নিয়ে বেশি টেনশন করতে হবে না। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে মিল, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সরকারের কঠোর নজরদারি দরকার। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর কারণে মিলারদের বিপদে পড়তে হয়।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, চালের বাজার দীর্ঘদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। এর মূল কারণ বাজারে তদারকি নেই। করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও মিলার একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দাম বাড়ান। যারা এই সিন্ডিকেটে জড়িত আবার তারাই আমদানিকারক। আমদানি ও মজুত সবই তাদের হাতে। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে বাজার।

যদিও বাজারে তদারকি অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি সরকারের সংশ্লিষ্টদের। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আরীম আখতার খান বলেন, ‘চালের বাজার তদারকি হচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ