নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় একটি চলন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে অটোরিকশার যাত্রী নারী, শিশুসহ ছয়জন দগ্ধ হয়েছে। আজ বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে চৌমুহনী পৌরসভার কন্ট্রাক্টর মসজিদ এলাকায় ওই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন সেলিনা বেগম (৩২), তাঁর ছেলে মো. শাহরিয়ার (১২), মেয়ে হৃদি (১৪), হৃদিকা (১৪ মাস), বোনের মেয়ে লামিয়া (১৪) ও বোনের ছেলে (৬)। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাঁদের উদ্ধার করে গুরুতর পাঁচজনকে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্য একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

দগ্ধ সেলিনা বেগমের দেবর তাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁর ভাবি নিজের এবং বোনের সন্তানদের নিয়ে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশা নিয়ে চৌমুহনী পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের চাপরাশির বাড়ি থেকে কন্ট্রাক্টর মসজিদ এলাকায় বোনের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। তাঁদের অটোরিকশাটি কন্ট্রাক্টর মসজিদের পশ্চিমে পৌঁছালে হঠাৎ অটোরিকশার গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটে।

জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রাজীব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ নারী, শিশুসহ পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর তাঁদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের শরীরের ৫-৭ শতাংশ পুড়ে গেছে। সবাই আশঙ্কামুক্ত।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিটন দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে ঘটনার বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জোর করে পদত্যাগ করানো প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে গিয়ে মারধরের শিকার

পদত্যাগপত্রে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার পর আবার বিদ্যালয়ে যাওয়ায় নোয়াখালীর একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তাঁর পরনের জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলা হয় বলে শিক্ষকের অভিযোগ। আজ বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার ওই শিক্ষকের নাম ইউনুস নবী।

নরোত্তমপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউনুস নবী প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ অক্টোবর তাঁর কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর আদায় করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও তাঁর সঙ্গীরা। যদিও সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনার কারণে ওই পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হয়নি। তবে ওই ঘটনার পর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলেন না।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, তিনি দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২৪ অক্টোবর বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুক্তার হোসেনের নেতৃত্বে একদল লোক জোর করে তাঁর কাছ থেকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেন। বেগমগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোতাসিম বিল্লার সামনেই এ ঘটনা ঘটে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বিষয়টি সেই সময় লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক ইউনুস নবী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই ঘটনার পর সাবেক সভাপতি মুক্তার হোসেন তাঁর পছন্দের একজনকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। এরপর আর বিদ্যালয়ে যাননি তিনি।

ইউনুস নবী আরও জানান, ওই ঘটনার পর তিনি বেগমগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত ওই পদত্যাগপত্রের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আজ সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিদ্যালয়ে যান। তিনি অফিসকক্ষে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসেন। বেলা আনুমানিক সোয়া ১১টার দিকে সাবেক সভাপতি মুক্তার হোসেনের ছোট ভাই একরাম হোসেনসহ একদল লোক অফিসকক্ষে ঢুকে অতর্কিতে তাঁর ওপর হামলা চালান। হামলাকারীরা তাঁর পরনের জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলেন এবং মারধর করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় তাঁর ওই অনিয়ম ধরা পড়েছে। যার দরুন তাঁকে পদত্যাগ করতে বলা হলে তিনি পদত্যাগ করেন। আজ তিনি সন্ত্রাসী নিয়ে বিদ্যালয়ে গেলে এলাকার লোকজন তাঁদের প্রতিরোধে এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তবে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা কিংবা তাঁর জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁর (মুক্তার) ভাই কিংবা অন্য কেউ এমন কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।

বিদ্যালয়ের বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান শিক্ষক তাঁকে মারধর ও জামা-কাপড় ছিঁড়ে ফেলার ঘটনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যাঁরা তাঁকে মারধর করেছেন, তাঁরাই তাঁকে বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেন না। ইতিপূর্বে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষরও নিয়েছেন। কিন্তু সেটি গৃহীত হয়নি। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে না গিয়েও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, বিষয়টি যেহেতু রাজনৈতিক, তাই রাজনৈতিকভাবে সমঝোতায় যেতে। তিনি সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

ইউএনও আরিফুর রহমান আরও বলেন, ওই প্রধান শিক্ষক আদালতে মামলা করেছেন। আদালত কী রায় দেন, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি পক্ষের অভিযোগ আছে, সেটির তদন্ত চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নোয়াখালীতে খেতে ঘাস কাটতে গিয়ে মিলল নারীর মরদেহ
  • ফেনীতে বিএনপি কর্মীকে হত্যায় গ্রেপ্তার ৫ 
  • জোর করে পদত্যাগ করানো প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে গিয়ে মারধরের শিকার