স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ নেই: এনসিপি
Published: 2nd, April 2025 GMT
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রায় সময় রাজনৈতিক কারণে হামলার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ নেই বলে মনে করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
বুধবার এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাতের সই করা এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করে দলটি।
এনসিপি বলেছে, অবাধ্য ও অপরাধী নেতাকর্মীদের বিএনপি বহিষ্কার করলেও হিংস্র কার্যকলাপ চলছে। এ পরিস্থিতি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ঘোলাটে ও অস্থির করে তুলছে।
স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিয়মিত আন্তঃসংঘর্ষ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ বিবৃতি দিয়েছে এনসিপি। একইসঙ্গে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে সংঘটিত বিভিন্ন হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
এতে বলা হয়, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিএনপির অন্তঃকোন্দলের জেরে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এনসিপি।
এ রকম বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরে বিবৃতিতে এনসিপি বলেছে, গত ৩০ মার্চ লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে স্থানীয় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মধ্যকার সংঘর্ষে হামলার শিকার হন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলমের বাবা আজিজুর রহমান (বাচ্চু মোল্লা)। হামলায় তার হাত ভেঙে যায় এবং তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গত ২৪ মার্চ নোয়াখালীর হাতিয়ায় পথসভা ও জনসংযোগের সময়ে স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন সদস্য এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদের ওপর হামলা করা হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীরা এনসিপির কর্মী-সংগঠকদের নিয়মিত হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়।
বিএনপির নেতাকর্মীরা সাত-আট মাস পর ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিচ্ছেন অভিযোগ করেছে এনসিপি। এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাত-আট মাস পর স্থানীয় বিএনপির হাতে ঠিক কোন ধরনের বাস্তবতা তৈরি হবে, যার কারণে তারা দেখে নিতে পারবেন তা এনসিপির বোধগম্য নয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প জ ত য় ন গর ক প র ট ব এনপ র ক ন দ র য় ন ত র ন ত কর ম র জন ত ক এনস প র
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়াক্ফ আইন খারিজ না হলে ফল ভোগ করতে হবে, ভারতের মুসলিম সংগঠনগুলোর হুঁশিয়ারি
ভারতের বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে ‘ওয়াক্ফ বাঁচাও’ আন্দোলন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমান নেতারা বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের শরিকদের উদ্দেশে বলেছেন, তাঁরা যেন সমবেতভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, যাতে ওয়াক্ফ আইন প্রত্যাহারে সরকার বাধ্য হয়। অন্যথায় ওই শরিকদের প্রত্যেককে মুসলমান সমাজের ক্রোধ, রোষ ও ক্ষোভের মুখোমুখি হতে হবে।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের সভাপতি খালিদ সইফুল্লাহ রাহমানি, হায়দরাবাদের এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি, উত্তর প্রদেশের শিয়া সমাজের নেতা মাওলানা কালবে জাওয়াদসহ বিভিন্ন নেতা এনডিএ শরিকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ওয়াক্ফ বিলকে সমর্থন করে তাঁরা সবাই মুসলমানদের পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করেছেন। শরিক দলের নেতাদের উচিত, সরকারকে ওই আইন প্রত্যাহার করতে চাপ দেওয়া। না হলে সর্বত্র তাঁদের মুসলমান সমাজের ক্রোধ ও ক্ষোভের মুখোমুখি হতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক সমাবেশে এ কথা বলেন মুসলিম নেতারা।
সমাবেশে মুসলমান নেতারা বিজেপি নেতৃত্বাধীন শরিকদের নাম করে এই হুঁশিয়ারি দেন। তাঁরা বলেন, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জেডিইউ, চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি, হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চার জিতেন রাম মাঞ্ঝি, অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি ও উত্তর প্রদেশের জয়ন্ত চৌধুরীর আরএলডি সবাই ওয়াক্ফ বিলকে সমর্থন করেছেন। ওই বিল সমর্থন করে তাঁরা মুসলমানদের পেছনে ছুরি মেরেছেন। এখন তাঁদেরই চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে সরকার আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হয়। না হলে ওই দলগুলোকে সর্বত্র মুসলমান সমাজের রোষের মোকাবিলা করতে হবে।
মুসলিম নেতাদের ওই হুমকি সমর্থন করেন উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বিহারের আরজেডি। এসপির সংসদ সদস্য ধর্মেন্দ্র যাদব ও মহিবুল্লাহ্ নাদভি এবং আরজেডির সংসদ সদস্য মনোজ ঝা তালকাটোরা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এসপি নেতারা ‘ওয়াক্ফ বাঁচাও’ আন্দোলন সমর্থন করে বলেন, মুসলিম ল বোর্ডের সঙ্গে তাঁরা একমত। সংবিধান প্রদত্ত অধিকার ও ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষায় তাঁরা একমত। ওয়াক্ফ আইন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকারকে তা প্রত্যাহার করতে হবে। একই কথা বলেন আরজেডি নেতা মনোজ ঝা–ও। তিনি বলেন, এই আইন সংবিধানের পরিপন্থী। তাঁর দল কিছুতেই তা মেনে নেবে না।
লক্ষণীয়, মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড আয়োজিত এই সমাবেশে শিয়া সম্প্রদায়ের অবিসংবাদিত নেতা মাওলানা কালবে জাওয়াদ উপস্থিত ছিলেন। লক্ষ্ণৌয়ের এই প্রবীণ নেতা অটল বিহারি বাজপেয়ীর সময় থেকে বিজেপিকে সমর্থন জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এই বার তিনিও ওয়াক্ফ আইনের বিরোধিতায় অন্যদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন।
এআইএমআইএম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি বলেন, দেশের কোনো মুসলমান এই কালো আইন মেনে নেবে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই আইন এনেছেন মুসলমানদের জমিজমা ও সম্পত্তির দখল নিতে। মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহিম মুজাদ্দিদি বিজেপির শরিক দলের নেতাদের নাম করে বলেন, এই আইন পাস করাতে সরকারকে সমর্থন দিয়ে তাঁরা দেশের সংবিধানকেও অমান্য করেছেন। মুসলমান সমাজ ও গণতন্ত্রপ্রিয় সব মানুষ ওঁদের চিনে নিয়েছেন। তাঁরা যা করেছেন, তা না শোধরালে ফলভোগ করতে হবে। তিনি বলেন, এই আইন মুসলমানদের জীবন–মরণের প্রশ্ন।
ওয়াক্ফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে শতাধিক মামলা হয়েছে। শুনানির দ্বিতীয় দিনেই কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত নতুন আইনের দুটি বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ করা হবে না। এক, ওয়াক্ফ সম্পত্তি বলে যা কিছু পরিচিত, তার কোনোটি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে না। দুই, কেন্দ্রীয় ওয়াক্ফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে নতুন কোনো সদস্য নিযুক্তি হবে না।
তালকাটোরা স্টেডিয়ামে সমবেত নেতারা অবশ্য জানিয়েছেন, আইন খারিজ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের লড়াই চলবে।