আসামি ছিনিয়ে নিতে পুলিশের উপর হামলা, গ্রেপ্তার ১৬
Published: 2nd, April 2025 GMT
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় গ্রেপ্তার হওয়া এজাহারনামীয় এক আসামিকে ছাড়িয়ে নিতে স্থানীয় বিএনপি নেতার নেতৃত্বে পুলিশের উপর হামলা ও মারধর হয়। এতে অন্তত চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে উপজেলার গজালিয়া ব্রিজ এলাকায় হামলা করা হয়। পরে রাতভর সেনা সদস্য ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে হামলার সঙ্গে জড়িত বিএনপির ১৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে কচুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আহমেদ কবিরের নেতৃত্বে গজালিয়া ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি ও মারধর মামলার আসামি একলাছ শেখকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় স্থানীয় গজালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শিকদার জাকির হোসেন টুটুল ও সাধারণ সম্পাদক শেখ দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। বিএনপির নেতাকর্মীদের অতর্কিত হামলায় এসআই আহমেদ কবির, এএসআই রাকিব মোল্লা ও কনস্টেবল মো.
পরে সেনা সদস্য ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে আটক করে। গ্রেপ্তাররা হলেন, রিয়াজ শেখ (২৫), আমিনুল হক (২৮), হেমায়েত মোল্ল্যা (৫২), সাব্বির শেখ (১৯), সোহাগ শেখ (২৩), রবিউল ইসলাম (২৭), আমিরাত হোসেন লিজন (২০), সাকিব শেখ (১৮), ইবাদুল সিকদার (২৬), আবুল খায়ের সুইট (৪১), ওমর ফারুক (৩৯), শাওন আকন (২১), জনি শেখ (১৮), রাফি সিকদার (২১), ইয়ার হোসেন (৩২) ও রিয়াজুল ইসলাম (২৯)। এরা সবাই বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মী।
আরো পড়ুন:
১৬ বছর পর মুক্ত পরিবেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঈদ
তারেক রহমানের ঈদ শুভেচ্ছা, চাইলেন স্বৈরাচারের বিচারও
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শামীম আহসান জানান, আহত পুলিশ সদস্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে অভিযান চালিয়ে ১৬ জনকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতে সোপর্দের প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকা/শহিদুল/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ন ত কর ম ব এনপ র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
গায়েবি মামলায় ভুগছেন জবির ১১ শিক্ষার্থী
হঠাৎ গ্রেপ্তার হন ১১ শিক্ষার্থী। তিন দিনের মধ্যে সাময়িক বহিষ্কার করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। তিন থেকে পাঁচ মাস জেল খাটেন। শিক্ষাজীবনে পিছিয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঘটনা সম্পর্কে তারা কিছুই জানতেন না। তিন বছর আগের গায়েবি মামলায় এখনও ভুগছেন।
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন ইসলাম জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ভর্তি হন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১ মার্চ পুরান ঢাকার একটি মেসে ওঠেন। ২৪ দিন পর আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তিন মাস জেল খাটেন। বর্তমানে তিনি তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। মামলা চালাতে পরিবারের খরচ হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা।
মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৯ মার্চ যাত্রাবাড়ী থানার এসআই জাহিদুজ্জামান বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। এজাহার থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী হানিফ ফ্লাইওভার টোলপ্লাজা-সংলগ্ন এলাকায় লেগুনা ভাঙচুর এবং বোমাবাজির ঘটনায় মামলা হয়। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি হিসেবে ফাঁসানো হয় শাহিনকে। ঘটনার সময় তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে ছিলেন।
এ ছাড়া ২০২২ সালের ২৫ মার্চ কোতোয়ালি থানার এসআই রুবেল খান বিস্ফোরক আইনে আরেকটি মামলা করেন। এ দুই মামলায় জবির ১১ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভুক্তভোগী আল মামুন রিপন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি লক্ষ্মীবাজারে সবজির দোকান চালাতেন। মিথ্যা মামলায় তিন মাস কারাগারে ছিলেন। মানসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিন বছরে মামলার পেছনে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া আব্দুর রহমান অলি, শ্রাবণ ইসলাম রাহাত এবং রওশন-উল ফেরদৌসকে ফাঁসানো হয়। প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ২০২২ সালে ঢাকায় আসেন তারা। তিন মাস না পেরোতেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মামলায় ওলির খরচ হয় সাড়ে ৪ লাখ, রাহাতের ৪ লাখ, ফাহাদের ৪ লাখ ও রওশনের ৬ লাখ টাকা।
রাহাত বলেন, ২০২২ সালের ৭ মার্চ গেণ্ডারিয়ায় বড় ভাই মো. ফাহাদ হোসেনের মেসে ওঠেন তিনি। এর ১৭ দিনের মাথায় পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। পাঁচ মাস কারাভোগ করতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। তদন্ত ছাড়া তাদের সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। এক বছর পিছিয়ে পড়েন। তিন বছর পার হলেও নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে।
লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মাহাদি হাসান জানান, গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক সপ্তাহ জানতেন না কী অভিযোগ। জেল থেকে আদালতে নেওয়ার পর জানতে পারেন ঘটনাটি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির দপ্তর সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রলীগের আসিফ। এ নির্বাচনে ছাত্রলীগের একাধিক প্রার্থী ছিলেন, এর মধ্যে অনেকে ডিবেট করতেন না। তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় ডিবেটিং সোসাইটির প্রার্থিতা বাতিলের উদ্দেশ্যে, যেন ছাত্রলীগের আসিফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দপ্তর সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী হাসিব মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন এবং ছাত্রলীগের শাইদুল ইসলাম সাঈদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হন। এর সঙ্গে সাবেক প্রক্টর মোস্তফা কামাল জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।
দুটি মামলার এজাহারে প্রায় একই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর আট মাস পার হলেও সুরাহা হয়নি। কোতোয়ালি থানা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়েছে। এ মামলা নিষ্পত্তির জন্য আজ আদালতে উঠবে। যাত্রাবাড়ী থানার নথিপত্র পুড়ে যাওয়ায় অগ্রগতি জানাতে পারছে না পুলিশ। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের গায়েবি মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। খুব দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক ড. রিফাত হাসান বলেন, এর আগেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত এই মামলা সমাধানে প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ নেব। প্রক্টর ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ‘১১ শিক্ষার্থীর গায়েবি মামলা নিষ্পত্তির জন্য একাধিকবার থানায় যোগাযোগ করেছি। এ বিষয়ে আবার কথা বলব।’