বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের ঢল
Published: 2nd, April 2025 GMT
ঈদুল ফিতরের ছুটিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে নেমেছে পর্যটকের ঢল। সারা দেশের অসংখ্য বিনোদনপ্রেমী ভিড় জমিয়েছেন এ জেলায়। ঈদের তৃতীয় দিন বুধবার (২ এপ্রিল) সকাল থেকে বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র পর্যটকদের পদচারণায় মুখর।
বান্দরবান শহরের মেঘলা, গোল্ডেন টেম্পল, নীলাচলসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। বিশেষ করে, পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে আসা শিশুদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে পর্যটন এলাকাগুলো। অনেকেই দল বেঁধে এসেছেন, কেউবা প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটাচ্ছেন ছুটির দিনগুলো। স্থানীয় হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে পর্যটকদের ভিড় দেখা গেছে।
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে দেখা গেছে আনন্দঘন পরিবেশ। কেউ লেকের স্বচ্ছ জলে প্যাডেল বোট চালিয়ে উপভোগ করছেন প্রকৃতির ছোঁয়া, কেউ ক্যাবল কারে চড়ে পাহাড়ের ওপর থেকে নিচের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখছেন। প্রকৃতির অপরূপ রূপ দেখে মুগ্ধ সবাই। পর্যটকদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকাজুড়ে।
রাজধানী ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা আব্দুল করিম এ প্রতিবেদককে বলেন, “প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে বারবার বান্দরবানে আসতে মন চায়। ঈদের ছুটিতে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুরতে এসে দারুণ সময় কাটছে।”
পর্যটনকেন্দ্র নীলাচলে কথা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা হাবিবুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, এটাই আমার প্রথম বান্দরবান ভ্রমণ। এখানে না এলে বুঝতেই পারতাম না, এত সুন্দর পরিবেশ কেমন লাগে। ঢাকাতে যারা থাকে, এখানে না আসলে কিছুই বুঝবে না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের আগমন তাদের জন্য আশীর্বাদ। রিসোর্ট ও হোটেলগুলোর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। কিছু কিছু রিসোর্ট ও হোটেলে ২ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত শতভাগ রুম বুকিং হয়েছে।
হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো.
বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, ঈদের ছুটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করছে, যাতে পর্যটকরা নিরাপদে ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, বান্দরবান জেলায় পর্যটনকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে কাজ করে থাকি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা সজাগ আছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সচেতন। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারেন, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।
ঢাকা/চাইমং/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ন দরব ন
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মিরে হামলা: যে ছবি হৃদয় নাড়িয়েছে
স্বামীর লাশের পাশে বসে আছেন নববধূ। হাতে শাখাপলা। বিয়ে হয়েছিলো মাত্র ৭ দিন আগে। নবদম্পতি কাশ্মীর গিয়েছিলেন হানিমুনে। কিন্তু নতুন জীবন শুরুর আগেই শেষ। বন্দুকধারীদের হামলায় আগামীর স্বপ্নগুলো ভেসে গেছে রক্তের রঙে।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর অফিসার লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়াল। বিনয়ের লাশের পাশে নিস্তব্ধ হয়ে স্ত্রীর বসে থাকার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সে ছবি শেয়ার করেছেন অনেকে। লিখেছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো জাত-ধর্ম হয় না।
ওই ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে কল্লোল মোস্তফা নামে একজন লিখেছেন, "এমন নৃশংস হত্যাকারীদের স্বাধীনতার যোদ্ধা বলে না। বলে জঙ্গী। এমন হত্যাকে স্বাধীনতার লড়াই বলে না। বলে মানবতাবিরোধী গণহত্যা। সাধারণ মানুষদের হত্যা করে জঙ্গিরা স্বাধীনতাকামী হাজার-হাজার শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করলো। সেই সাথে যুগ যুগ ধরে চলা কাশ্মীরের মুক্তির লড়াইকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে দিলো। সাধারণ মানুষদের হত্যা করে স্বাধীনতা আসে না। স্বাধীনতা দূর-অস্ত হয়ে যায়।”
বুধবার (২৩ এপ্রিল) এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিনয় নারওয়াল হরিয়ানার কারনালের বাসিন্দা। তিনি গত ১৬ এপ্রিল বিয়ে করেন। ১৯ এপ্রিল তার বিবাহের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। সদ্যবিবাহিত তরুণ এই অফিসার কাশ্মীরে গিয়েছিলেন হানিমুনে। পহেলগামের সন্ত্রাসী হামলায় মর্মান্তিকভাবে নিহত হন তিনি।
প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, বিনয় নারওয়াল মাত্র দুই বছর আগে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। সন্ত্রাসী হামলায় তার মৃত্যুতে পরিবার, সম্প্রদায় এবং প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশী এবং স্থানীয়রা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার এক প্রতিবেশী নরেশ বনসাল বলেন, “কদিন আগে তার বিয়ে হলো। সবাই খুব খুশি ছিল। হঠাৎ আমরা খবর পেলাম যে, বন্দুকধারীরা তাকে হত্যা করেছে এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়েছে।”
এদিকে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভয়াবহ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। এটি পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা বা এলইটি গোষ্ঠীর একটি ছায়া সংগঠন।
টিআরএফের উত্থান হয় ২০১৯ সালে। ওই বছরই বিজেপি সরকার সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে। যার ফলে জম্মু ও কাশ্মিরের ‘বিশেষ মর্যাদা’-র অবলুপ্তি হয়। এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে লস্কর-ই-তৈয়বার একটি ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। সেই সংগঠনেরই পাঁচ-ছ’জন মঙ্গলবার দুপুরে পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়।
হামলার ঘটনার পর পহেলগাঁও উপত্যকায় নিরাপত্তা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরের অন্যান্য জায়গাও নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার রাতেই কাশ্মিরে পৌঁছেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার সৌদি আরব সফরসূচি কাঁটছাঁট করে বুধবার সকালে দিল্লি ফিরে এসেছেন। বিমানবন্দরেরই তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। দিল্লিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করবেন মোদি। তবে এখন পর্যন্ত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাদের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে নিরাপত্তাবাহিনী।
ঢাকা/ইভা