চলন্ত ট্রেনের ছাদে ‘টিকটক ভিডিও’ করছিলেন ৪ তরুণ, পড়ে দুজনের মৃত্যু
Published: 2nd, April 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় চলন্ত ট্রেনের ছাদে দাঁড়িয়ে ভিডিও বানানোর সময় পড়ে গিয়ে দুই তরুণ নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার মোগড়া রেলওয়ে সেতু এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুই তরুণ।
নিহত দুজন হলেন কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার আবদুল করিম মিয়ার ছেলে আবদুল কাইয়ুম মিয়া (২২) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বাসিন্দা তারেক মিয়া (২০)। আহত দুজন হলেন ইকরাম হোসেন (১৮) ও কসবার বিল্লাল মিয়া (২৫)। তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।
রেলওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি আজ বেলা ১১টার দিকে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর রেলস্টেশন অতিক্রম করে। ট্রেনটি আখাউড়ার মোগড়া রেলওয়ে সেতু এলাকায় পৌঁছালে ট্রেনের যাত্রীবাহী বগির ছাদে থাকা চার তরুণ উঠে দাঁড়ান এবং ভিডিও বানাতে শুরু করেন। তিন তরুণ মিলে একজনের ভিডিও করছিলেন। এ সময় রেললাইনের ওপর দিয়ে যাওয়া তারে জড়িয়ে তাঁরা ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে যান।
এতে ঘটনাস্থলেই কাইয়ুম মিয়া নামের একজনের মৃত্যু হয়। স্থানীয় লোকজন আহত তিনজনকে উদ্ধার করেন। দুজনকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও একজনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তারেক মিয়া নামের আরেকজনের মৃত্যু হয়।
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো.
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা গোপা পাল ও সানজিদা হক বলেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। একজনের মাথার খুলিতে ও আরেকজন গলায় ডিশ লাইনের তারের জখম আছে। দুজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, চার তরুণ ট্রেনের ছাদে দাঁড়িয়ে ‘টিকটক ভিডিও’ তৈরি করছিলেন। ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরেকজন মারা যান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় জন র ম ত য কজন র ম একজন র উপজ ল র লওয়
এছাড়াও পড়ুন:
নেতৃত্বশূন্য পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কী
পাকিস্তানের সমস্যা শুধু সংখ্যায় বাড়ছে না, বরং দেশের ভেতরে বিভাজন আর অস্থিরতাও তাতে আরও গভীর হচ্ছে। কোথাও বিক্ষোভ, কোথাও বিদ্রোহ, কোথাও আবার চরমপন্থীদের সহিংসতা। সন্ত্রাসবাদ, কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে টানাপোড়েন, পানিবণ্টন নিয়ে বিরোধ এবং সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংঘাত—সব একসঙ্গে ঘটছে।
এই পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায়, দেশের শাসনব্যবস্থা ও নেতৃত্ব কোন পর্যায়ে রয়েছে। সংবাদমাধ্যমে সরকার নিজেই নিজেকে বাহবা দিলেও আসল চিত্র একেবারেই ভিন্ন। মৌলিক সমস্যা এখনো অব্যবস্থাপনার শিকার। শাসনের মানও জনগণের প্রত্যাশার অনেক নিচে। পাঞ্জাবসহ বিভিন্ন জায়গায় শাসকদের গুণগান করে বড় বড় বিলবোর্ড টাঙানো হচ্ছে।
কিন্তু এসব দিয়ে নেতৃত্ব তৈরি হয় না। টেলিভিশনে যেসব অনুষ্ঠান দেখানো হয়, সেখানে মনে হয় ক্ষমতাবানদের দৈনন্দিন দায়িত্ব পালনও যেন বিশেষ কিছু। এসব মানুষকে উৎসাহিত তো করেই না, বরং মনে হয়, নেতারা নিজেরাই নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অতি উদ্বিগ্ন। প্রকৃত স্বীকৃতি আসে কাজ দিয়ে, পোস্টার আর পত্রিকার ৬০ পাতার বিজ্ঞাপন দিয়ে নয়।
পাকিস্তানের সেসব জটিল সমস্যা এখন সামনে এসেছে। খাপছাড়া, এলোমেলোভাবে অর্থনীতি, রাজনীতি আর নিরাপত্তা–সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা কাজে আসে না, বরং ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমনে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। একের পর এক জনমত জরিপে সেই হতাশারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি ইপসস জরিপে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ মানুষ মনে করে, দেশ ভুল পথে হাঁটছে।
পাকিস্তানের ইতিহাসে এর আগেও নেতৃত্বহীন সময় এসেছে। অতীতে অনেকেই দেশের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের না ছিল দক্ষতা, না ছিল দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা মোকাবিলার দৃষ্টিভঙ্গি। ক্ষমতা হাতে পেলেই যে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়, তা নয়। এই কারণেই দেশে শুধু শাসন হয়েছে, শাসনব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। রাজনীতি হয়েছে ক্ষমতার খেলা, জনস্বার্থ নয়। কিন্তু এখন সমস্যাগুলো এতটাই জটিল যে নেতৃত্বশূন্যতা আজ ভয়াবহভাবে স্পষ্ট।
তাহলে কেমন নেতৃত্ব চাই পাকিস্তানের? কাকে বলব দক্ষ নেতা? আর কী গুণ থাকা দরকার একজন কার্যকর নেতার মধ্যে? সবার আগে প্রয়োজন এমন এক দৃষ্টিভঙ্গির, যা শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ নিয়েও পথ দেখায় এবং আশার সঞ্চার ঘটায়। সেই স্বপ্নকে বাস্তব করার পরিকল্পনাও থাকা চাই। একজন নেতা কেবল কথা বলেই থেমে যাবেন না, তিনি জাতির মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলবেন, মানুষের ভরসা অর্জন করবেন আর রূপান্তরের পথে সাহসিকতার সঙ্গে অগ্রসর হবেন।
একজন নেতার উচিত হবে এমন দল গঠন করা, যাঁদের মধ্যে দক্ষতা ও সততা দুই-ই রয়েছে। বুদ্ধিমান নেতা জানেন, কে কোন কাজের উপযুক্ত। ব্যক্তিগত আনুগত্য বা রাজনৈতিক সুবিধা নয়। নেতৃত্ব মানে হচ্ছে মানুষের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করা, তাদের দুঃখ-কষ্ট বোঝা, তাদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা জানা এবং তার সাড়া দেওয়া।
এই মানদণ্ডে বিচার করলে দেখা যায় আজকের শাসকগোষ্ঠী কতটা ব্যর্থ। কোথাও কোনো বড় স্বপ্ন নেই। নেই সুসমন্বিত কোনো পরিকল্পনা। সমস্যা দেখা দিলেই তড়িঘড়ি দমনের চেষ্টা চলছে।
কিন্তু মূল সমস্যাগুলো থেকে যাচ্ছে অমীমাংসিত। যেমন বেলুচিস্তানের পরিস্থিতি। প্রদেশটি তীব্র অসন্তোষে ফুটছে, অথচ কোনো টেকসই সমাধানের রূপরেখা তৈরি হয়নি। আবার পাঞ্জাব ও সিন্ধুর মধ্যে পানির ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ দিনকে দিন বাড়ছে। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার যেন চোখ বুজে আছে।
অর্থনীতি নিয়েও বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে কোনো দৃষ্টিভঙ্গি নেই। দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে অর্থনীতি বারবার সংকটে পড়ে। সেগুলো দূর করার বাস্তব উদ্যোগ দেখা যায়নি। ছোটখাটো সমাধানে ব্যস্ত থেকেছে সরকার। দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের সাহস দেখায়নি।
অর্থনীতি নিয়েও বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে কোনো দৃষ্টিভঙ্গি নেই। দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে অর্থনীতি বারবার সংকটে পড়ে। সেগুলো দূর করার বাস্তব উদ্যোগ দেখা যায়নি। ছোটখাটো সমাধানে ব্যস্ত থেকেছে সরকার। দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের সাহস দেখায়নি।
আরও বড় সমস্যা হচ্ছে নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা। নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে বিতর্কের কারণেই তাদের প্রতি জনসমর্থন দুর্বল। সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়েছে এলোমেলোভাবে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কোনো ছাপ নেই। শাসনের দায়িত্ব পেয়েছে এমন একটি দল, যেখানে কিছু দক্ষ পেশাজীবী থাকলেও বেশির ভাগই নির্বাচিত হয়েছে পারিবারিক সম্পর্ক বা রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে।
আর একেবারেই অনুপস্থিত একটি গুণ। সেই গুণটি হলো জনগণকে নাগরিকদের অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা। আজকের নেতারা যেন সাধারণ মানুষের জীবন থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁদের কথা বা কাজ, কোনোটাতেই মানুষের প্রতিচ্ছবি নেই। তাঁরা দেশকে একত্র করার বদলে যেন আরও বিভক্ত করে ফেলছেন। বর্তমান সময়ের যোগাযোগনির্ভর জগতে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার মতো দক্ষতাও তাঁদের মধ্যে অনুপস্থিত।
হেনরি কিসিঞ্জার লিখেছিলেন, ‘সাধারণ নেতারা বর্তমান সামলান; কিন্তু মহান নেতারা সমাজকে নিয়ে যান স্বপ্নের দিকে।’
দরকার এমন নেতৃত্ব, যাঁরা সাহস করে পুরোনো ব্যর্থতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে দেশকে নিয়ে যাবেন একটি আশাবাদী ভবিষ্যতের দিকে।
● মালিহা লোধি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত
ডন থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ