Prothomalo:
2025-04-24@01:10:59 GMT

আহা, সেই সব দিন

Published: 2nd, April 2025 GMT

ঈদসংখ্যায় কী নিয়ে লিখছি শোনার পর ‘খেলা খায়, খেলা ঘুমায়, খেলারই স্বপ্ন দেখে’ এমন এক বন্ধু অবাক হয়ে বলল, ‘মেসি-রোনালদো! মেসি-রোনালদোকে নিয়ে লেখার কী আছে?’

প্রশ্নটা শুনে আমার অবাক হওয়ার পালা। প্রায় দুই দশক ফুটবল বিশ্ব আক্ষরিক অর্থেই যাঁদের পদানত, যাঁদের দ্বৈরথের মতো কিছু এর আগে কখনো দেখেনি ফুটবল, ক্লাব ফুটবলের প্রাণকেন্দ্র ইউরোপ থেকে ‘স্বেচ্ছানির্বাসনে’ চলে যাওয়ার পরও প্রায় প্রতিদিনই যাঁরা খবরে—তাঁদেরকে নিয়ে লেখার কী আছে! এ কেমন ধারা প্রশ্ন!

আচ্ছা, ওই বন্ধু অন্য কিছু বোঝায়নি তো! হয়তো ‘মেসি না রোনালদো’ চিরন্তন সেই তর্ককে এই লেখার বিষয়বস্তু বলে ভাবছে। এঁদের একজনের পাগল ভক্ত বলে যে তর্ক তাঁর কাছে অনেক আগেই মীমাংসিত। তা শুধু ফুটবলীয় যুক্তিতর্কের ভিত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে নয়। এমনিতে ওর যুক্তিবাদী মন বরং এই প্রসঙ্গে তীব্র আবেগে একেবারেই আচ্ছন্ন। এই তর্কে শুধু হাতাহাতি হতে বাকি—এমন অনেক আড্ডায় থাকার অভিজ্ঞতা কীভাবে ভুলে যাই!

ভক্ত-সমর্থকেরা অবশ্য এমনই হয়। কোথাকার মেসি, কোথাকার রোনালদো—এঁদের নিয়ে ঝগড়ায় গড়ানো তর্কে কত বন্ধুত্ব ভেঙে যেতে দেখেছি। যেন ওই তর্কে জেতা না-জেতার ওপরই নির্ভর করছে এ বছরের ব্যালন ডি’অরটা কে পাবে।

ভুলটা ভাঙিয়ে দেওয়া তাই কর্তব্য বলে মনে হলো। মেসি সেরা, না রোনালদো—এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা লেখার উপজীব্য নয় জানানোর পর উল্টো বরং আমার ভুল ভাঙল। বন্ধু অনুমিতভাবেই ‘ওটা নিয়ে আর কথা বলার কী আছে’ টাইপ একটা হাসি দিয়ে বলল, ‘আরে না, আমি মোটেই অমন কিছু ভাবিনি। প্রশ্নটা করেছি, কারণ তোর জন্য আমার একটু মায়াই হচ্ছে।’

লা লিগায় তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মেসি ও রোনালদো.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

ধানের সরকারি দামে কৃষকের শঙ্কার মেঘ কাটছে না

‘এবার সেচের পানি, সার, বীজ, কীটনাশক ও ধান কাটার খরচ ৩০ শতাংশ বেড়েছে। বর্গা চাষ করলে এক কেজি ধানের উৎপাদন খরচ পড়েছে সাড়ে ৩৫ টাকার বেশি। সরকার বলছে, আগের বছরের চেয়ে দাম বাড়িয়ে ৩৬ টাকায় কিনবে তারা। এই দরে বেচলেও তো আমাদের লোকসান হবে।’–এই দুঃখ মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার ধূল্যা গ্রামের চাষি রহমান আলীর। 

শুধু রহমান আলী নন, এবারও ধান-চালের ভালো দাম পাওয়া নিয়ে কৃষকের মনে জমা শঙ্কার মেঘ কাটছে না। কৃষি উপকরণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ধানের দাম বাড়ার পরও কৃষক লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন। এবারের বোরো মৌসুমে খাদ্য মন্ত্রণালয় ধান সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। গত বছর ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ লাখ টন। এবার তা সাড়ে ৩ লাখ টন। তবে সরকার ধান-চালের দাম গতবারের চেয়ে কেজিতে ৪ টাকা বাড়িয়েছে। 

এর সমালোচনায় বলা হচ্ছে, এই দাম বৃদ্ধি কৃষককে বঞ্চিতই রাখবে, যথারীতি সুবিধা পাবেন মিলাররা। 

অবশ্য সরকার বলছে, ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমলেও দাম বেড়েছে। এতে লাভবান হবেন কৃষক। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান। 

প্রান্তিক চাষিরা বলছেন, দাম বাড়ালেও নানা শর্তের কারণে সরকারি গুদামে ধান দেওয়া যায় না। আর্দ্রতা পরীক্ষা, ব্যাংক হিসাব খোলা, গুদামে ধান দিয়ে আসাসহ নানা বিড়ম্বনার কারণে কৃষক মহাজনের কাছে ধান বিক্রি করেন। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন।

ধান-চাল সংগ্রহ কম, আমদানি বেশি

দেশের অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তা অটুট রেখে মজুত বাড়াতে প্রতিবছর স্থানীয় বাজার থেকে সরকার ধান-চাল সংগ্রহ করে। এই সংগ্রহ অভিযানের উদ্দেশ্য সরাসরি কৃষকের পাশে দাঁড়ানো এবং ভোক্তাকে স্বস্তি দেওয়া। এই বোরো মৌসুমে ৩৬ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান কেনা হবে।  আর ৪৯ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল কেনা হবে ১৪ লাখ টন। গেল বোরো মৌসুমে ১১ লাখ টন সেদ্ধ চাল, ১ লাখ টন আতপ চাল এবং ৫ লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। ওই সময় প্রতি কেজি ধান ৩২ টাকা ও সেদ্ধ চাল ৪৫ টাকা ছিল।

এবার আমন মৌসুমে সরকার ৫.৫০ লাখ টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। সংগ্রহ হয়েছে ৪.৩৫ লাখ টন। আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৮৪ হাজার ৬১ টন। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ টন। চাল মূলত মিলাররা দেন। 

ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩.৫০ লাখ টন। সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৭১৪ টন। বাজারদরের চেয়ে সরকার নির্ধারিত সংগ্রহ মূল্য কম হওয়ায় আমন মৌসুমে খাদ্য অধিদপ্তর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করতে পারেনি। ফলে অভ্যন্তরীণ ঘাটতি পূরণে সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। 

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার ৮ লাখ টন চাল আমদানির লক্ষ্য ঠিক করেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৫.১৮ লাখ টন চাল আমদানির দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, যার বেশির ভাগ এরই মধ্যে দেশে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) এক গবেষণায় বলা হয়, দেশে বছরে চাহিদার চেয়ে প্রায় ৪২ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকে। উদ্বৃত্ত থাকার পরও চাল আমদানির কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সরকারের ধান-চাল সংগ্রহে ব্যর্থতা, পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিত করা এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানি করতে হয়। 

ব্রির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে শুধু শতভাগ ধান-চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে সরকার। এ ছাড়া ২০১৯ সালে ২১ শতাংশ, ২০২০ সালে ৩৩ ও ২০২১ সালে ৫৪ শতাংশ ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়।

সরকারকে ধান দিতে কৃষকের অনীহা 

সেচ যন্ত্রের জ্বালানি ডিজেল ও বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। এতে বোরো ধান চাষে খরচও বাড়ছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) হিসাবে, বোরো ধানের উৎপাদন খরচ ১০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে কৃষকের ধান ও চালের ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা আছে। 

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কৃষক আবদুর রহমান বলেন, এবার বোরো ধান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বাড়তি প্রায় ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বোরো উৎপাদনে খরচ ছিল প্রায় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর তা দাঁড়াবে ১৮ হাজারেরও বেশি। 

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার কৃষক মাহফুজুল হক বলেন, ‘হিসাব অত সোজা না। এই ধরেন, যদি আমি নিজের জমি চাষ করি, তা হইলে হিসাব এক রকম। আর যদি অন্যের জমি বর্গা নিই, তা হইলে খরচ আরও বেশি।’

ধান সংগ্রহে এখনকার পদ্ধতিতে কিছু অসংগতির কারণে কৃষক ভোগান্তিতে পড়ছেন। গুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। তবে ব্যবসায়ীর কাছে ধান বিক্রিতে তেমন বেগ পেতে হয় না। সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক সময় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে দুই দফা পরিবহন খরচ হয়।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরবাটা ইউনিয়নের ভূঁইয়ার হাটের কৃষক দুলাল চন্দ্র দাস বলেন, ‘সরকারের কাছে অ্যাপস ও ব্যাংকের মাধ্যমে ধান বেচতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। আর্দ্রতা পরীক্ষার নামে হয়রানি তো আছেই।’

চাল ও ধান ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালা আছে। এতে ১৫টি শর্ত দেওয়া আছে মিলার ও কৃষকদের জন্য। কুষ্টিয়ার আলামপুর এলাকার কৃষক এনামুল হক বলেন, গুদামে ধান নিয়ে গেলে আর্দ্রতা মাপা হয়। ভেজা হলে সেই ধান আবার শুকাতে হয়। এর পর ওজনে কম হলে আবার বাড়ি থেকে বাড়তি ধান এনে সেটা পূরণ করতে হয়। গাড়ি ভাড়া নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। আবার চেক নিয়ে ব্যাংকে যেতে হয়। সরকার যদি প্রতি ইউনিয়ন থেকে ধান কেনে, তাহলে ভালো হয়।

কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়া এলাকার কৃষক রহিম মণ্ডল ও আবেদ আলী বলেন, মৌসুমের শুরুতেই প্রান্তিক কৃষক টাকার জন্য কম দামে ধান বিক্রি করেন। সেই ধান ফড়িয়া ও ছোট ব্যবসায়ীদের হাত ঘুরে মিল মালিকদের কাছে চলে যায়। কৃষকদের ঘরে যখন কোনো ধান থাকে না, তখন দাম বাড়তে থাকে। হাওরে এখন ধানের মণ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। এখন বড় বড় মিল মালিকরা কম দামের এসব ধান কিনে গুদাম বোঝাই করতে শুরু করেছেন। 

কারা কী বলছেন

সাবেক খাদ্য সচিব মো. আবদুল লতিফ মণ্ডল বলেন, চাল উৎপাদনে বোরোর অবস্থান শীর্ষে। অথচ এই মৌসুমে গত বছরের চেয়ে দেড় লাখ টন কম ধান সংগ্রহ করা হবে। এতে কৃষক সরকারের কাছে ধান বিক্রি না করে খোলাবাজারে বেশি দামে বিক্রি করতে আগ্রহী হবে। চালকল মালিকরা ধান কিনতে বাজারে আসার আগেই সরকার ব্যবস্থা না নিলে আগের মতো এবারও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। 

গত ১২ এপ্রিল দেশের ৪৩ বিশিষ্ট নাগরিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, কৃষককে বঞ্চিত করে মিলারদের সুবিধা দিতে ধান সংগ্রহের পরিমাণ কমানো হয়েছে। ১৩ এপ্রিল সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, ধান-চাল কেনার এই সিদ্ধান্তে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারও যে অতীতের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিতেই পরিচালিত হচ্ছে, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

তবে খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, ধানের উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে ধান-চাল সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করে সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয় সেই খরচ নিরূপণ করে। এবার চাল আমদানি হয়েছে পর্যাপ্ত। ধান কিনলে সেটা ভাঙানো ও মজুত সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের। ধানের দাম এবার ৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে বলে জানান তিনি।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানা]

সম্পর্কিত নিবন্ধ