ফরিদপুরের ভাঙ্গার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি ইউনিয়নে পৃথক ঘটনায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আর এই দুটি ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে অর্ধশতাধিক মানুষ। বর্তমানে সংঘর্ষ এড়াতে উভয় স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের মনসুরাবাদ গ্রামে ও তুজারপুর ইউনিয়নের সরইবাড়ি গ্রামে দফায় দফায় এ সংঘর্ষ ঘটে। 

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বাবর আলী ও সাবেক ইউপি সদস্য আকরামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। ঈদের দিন রাতে আকরাম আলী পক্ষের মাজহারুল ইসলাম নামের একজনকে বাবর আলী পক্ষের লোকজন মারধর করে। এর জেরে ঈদের পরদিন মঙ্গলবার বিকেলে আকরাম ও বাবর আলী দলের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী দুই পক্ষের কয়েক শত সমর্থক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু করে। এতে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০/৩৫ জন আহত হন। এ সময় মনসুরাবাদ বাজারের কমপক্ষে ১০/১৫টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর আহত ১৫ জনকে ভাঙ্গা উপজেলা আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

অপরদিকে, উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নের সরইবাড়ি গ্রামের কবির খাঁর সঙ্গে হাবি তালুকদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার বিরোধ চলছিল। ঈদের দিন সোমবার রাতে কবির খাঁ এক আত্মীয় বাড়ি যাওয়ার পথে হাবি তালুকদারের লোকদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি পরে হাতাহাতি হয়। এর জেরে ঈদের পরদিন মঙ্গলবার উভয় গ্রুপের লোকজন ঘোষণা দিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সকাল থেকে চলা সংঘর্ষ দফায় দফায় রাত ১০টা পর্যন্ত চলতে থাকে। এ সময় উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হন এবং ছয়টি বাড়ি-ঘরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে গুরুতর আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ বিষয়ে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

আশরাফ হোসেন সমকালকে বলেন, খবর পেয়ে পৃথক স্থানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ এখনও থানায় অভিযোগ করেনি। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আহত স ঘর ষ স ঘর ষ র ঘটন উপজ ল ঘটন য

এছাড়াও পড়ুন:

তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৪৭

রাজনৈতিক সহিংসতায় গত তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) সারা দেশে অন্তত ৪৭ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ২৭ জন, আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে ৫ জন এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সংঘর্ষে ২ জন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। সেখানেই এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে এইচআরএসএস।

সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে কমপক্ষে ৩২৫টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪৭ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি কমপক্ষে ২৪৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপির ৩১ জন, আওয়ামী লীগের ১০ জন, জামায়াতে ইসলামীর ১ জন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ১ জন এবং ইউপিডিএফের ২ জন। অপর ২ জনের রাজনৈতিক পরিচয় মেলেনি, যার মধ্যে একজন নারী রয়েছেন।

আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত তিন মাসের রাজনৈতিক সহিংসতার তথ্যগুলো পর্যালোচনা করে এইচআরএসএস বলছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ কমেছে। তবে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া গত তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৭০ জনের বেশি গুলিবিদ্ধ, চার শতাধিক বাড়িঘর, রাজনৈতিক কার্যালয়, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এইচআরএসএস জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ, ভুক্তভোগীর পরিবার ও এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে, হেফাজতে ও নির্যাতনে কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের নামে তিনজন, নির্যাতনে চারজন, পুলিশ হেফাজতে একজন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে সারা দেশে কারাগারে কমপক্ষে ২১ জন আসামির মৃত্যু হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন কয়েদি এবং ১২ জন হাজতি। এদের মধ্যে খুলনা ও নওগাঁ কারাগারে আক্তার শিকদার ও সিদ্দিক হোসেন নামে আওয়ামী লীগের দুজন নেতার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

তিন মাসে গণপিটুনিতে ৩১ জনের মৃত্যু

এইচআরএসএস সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, তিন মাসে গণপিটুনিতে ৭০টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ জন। আহত হয়েছেন আরও ৬৪ জন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, গত ৪ মার্চ দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে গণপিটুনি দিয়ে আহত করা হয়। গত ৩ মার্চ রাতে চট্টগ্রামের এওচিয়া ইউনিয়নে মাইকে ‘ডাকাত’ ঘোষণা দিয়ে দুজন জামায়াত কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে মাদারীপুরে ডাকাতির ঘটনায় শরীয়তপুরে সাতজনকে গণপিটুনির ঘটনায় পাঁচজন নিহত ও দুজন আহত হয়েছেন। হবিগঞ্জের বাহুবলে মোবাইল ফোন চুরি সন্দেহে জাহেদ মিয়া (২৮) নামে একজন যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করার একপর্যায়ে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাবনার ঈশ্বরদীতে চুরির অভিযোগ এনে এক নারীকে লোহার খুঁটিতে বেঁধে মারধর করার পর জুতার মালা পরিয়ে নির্যাতন করা হয়।

অন্যান্য ঘটনা

এইচআরএসএসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত তিন মাসে অন্তত ৬৭টি ঘটনায় কমপক্ষে ১১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ৫৮ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৬ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ১১ জন ও গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪ জন। এ ছাড়া ১০টি মামলায় ২৪ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এ সময়ে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩–এর অধীন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন একজন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে তিনজনকে।

পাশাপাশি গত তিন মাসে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩–এর অধীন করা অন্তত ৮টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৬ জন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ১৩ জনকে।

২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ১৮টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৫ জন বাংলাদেশি নিহত, ১০ জন আহত ও ১৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। সিলেট সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে শাহেদ আহমদ (২৫) নামের এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত এবং অপর ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ জন আহত হয়েছেন।

এইচআরএসএস বলছে, গত তিন মাসে কমপক্ষে ৫১২ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ৭টি হামলার ঘটনায় ২ জন আহত, ১০টি প্রতিমা ভাঙচুর ও জমি দখলের মতো ২টি ঘটনা ঘটেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৪৭
  • গাজায় পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, বন্ধ মানবিক সহায়তাও
  • ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৬ ফিলিস্তিনি
  • শরণার্থী শিবির, স্কুলে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ২০
  • বন্দরে ঝুটের গোডাউনে অগ্নিকান্ড, ১৬ লাখ টাকা ক্ষতি সাধন