অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশে জঙ্গিবাদ উত্থানের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। 

বুধবার (২ এপ্রিল) ঢাকার খিলক্ষেত, বাড্ডা, ভাটারাসহ বিভিন্ন থানায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যার দায়ে কোনো নিরীহ মানুষ যেন শাস্তির মুখোমুখি না হয় সেজন্য সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে  তদন্ত করছে। থানা পুলিশের তদন্তের সঙ্গে গঠন করা হয়েছে আলাদা তদন্ত  কমিটি। কোনো দুষ্কৃতকারীকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের কাছে তথ্য আসছে,  যাদের মামলায় নাম আছে কিন্তু তারা জড়িত নয়,  অনেকেই  ছিলেন দেশের বাইরে। এ কারণেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে অন্তর্বর্তী সরকার। যেন কোনো নিরীহ মানুষ সাজা না পায়। এ জন্য থানা পুলিশ তদন্ত করছে, এই তদন্ত সঠিকভাবে হয়েছে কি না বা সেটি যাচাই প্রয়োজনে আবার ঘটনার তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি কোনো উগ্র মৌলবাদ গোষ্ঠী যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। আশা করছি, আগামী দিনগুলোতেও জঙ্গিবাদ উত্থানের কোনো সুযোগ হবে না।”

ঢাকা/এমআর/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট সরক র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

বিচারে ধীরগতি, হতাশা কাটে না ভুক্তভোগীদের

রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ হয়নি এখনও। এ ঘটনার তিনটি মামলার একটি উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে আছে। সাক্ষী না আসার কারণে অন্য দুটির বিচার চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগও উঠছে।

এদিকে মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানা ছাড়া অন্য সবাই জামিনে মুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে দেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির বিচার নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। হাজারো ভুক্তভোগী শ্রমিক ও হতাহতের পরিবারে দেখা দিয়েছে হতাশা।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভারে আট তলাবিশিষ্ট রানা প্লাজা ধসে পড়লে ১ হাজার ১৩৬ পোশাক শ্রমিক নিহত হন। পঙ্গুত্ববরণ করেন ১ হাজার ১৬৯ জন। জীবিত উদ্ধার করা হয় প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিককে। ঘটনার পরের দিন অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। দুর্নীতি দমন কমিশন ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে মামলা করে। হত্যা মামলার ৩৯ আসামির মধ্যে কারাগারে আছেন কেবল রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। অন্যদের মধ্যে সাতজন পলাতক এবং ৩১ জন জামিনে আছেন। 

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিনুল হক আমিন বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার কারণে ভয়াবহ এই ট্র্যাজেডির বিচার আজও শেষ হয়নি। বিচার বিভাগেরও দায় রয়েছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব।’ 

দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করেছেন সাভারের শিউলি খানম। এক যুগেও বিচার না হওয়ায় তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আমার ডান পাশ অবশ হয়ে গেছে। ভারতে গিয়ে তিনবার চিকিৎসা নিয়েছি, চার মাস পর আবার যেতে হবে।’ 

প্রায় সাত বছর আগে শিউলির স্বামী মারা গেছেন। এখন তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং সুচিকিৎসা প্রত্যাশা করেন তিনি।

হত্যা মামলার পরিস্থিতি

হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ভবন মালিক, গার্মেন্ট মালিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের ৪১ জনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বর্তমানে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৯৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। 

১৫ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন আগামী ১৯ মে।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবুল কালাম খান সমকালকে বলেন, ‘মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য এখনও নেওয়া হয়নি। বিচার শেষ করতে হলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।’

তিনি জানান, সাক্ষীরা হাজির না হলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে। এতে সাক্ষী অনুপস্থিতির সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে।

ইমারত আইনে মামলায় স্থগিতাদেশ

ভবন নির্মাণে ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে করা মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জুন ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। তবে চার্জ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। এই স্থগিতাদেশ এখনও প্রত্যাহার না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইশতিয়াক হোসেন বলেন, ‘উচ্চ আদালত ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিগগির অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে আবেদন করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হবে।’

ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলায়ও ধীরগতি

রানা প্লাজা ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ জিয়াউর রহমানের আদালতে। ২০১৭ সালের ২১ মে সোহেল রানাসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন (জাহাঙ্গীর) সমকালকে বলেন, ‘গত ২৪ মার্চ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু সাক্ষী উপস্থিত হননি। আগামী ১২ মে পরবর্তী শুনানি হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ