ক্যারিবিয়ান ক্রুজে মেক্সিকোর মায়ান পিরামিডে
Published: 2nd, April 2025 GMT
মার্থা’স ভিনিয়ার্ড দ্বীপ ও সার্কাসের আলোকচিত্র
জাহাজখানা মনে হয় নোঙর তুলছে। সশব্দ সঞ্চালনে সচকিত হয়ে কেবিনের দেয়ালে হাত রেখে ভারসাম্য রক্ষা করি। তারপর টলোমলো পায়ে বসে পড়ি ছোটখাটো কামরার একমাত্র সোফাটিতে। অনুভব করি—সামান্য সময়ের ব্যবধানে, বিমূর্ত চিত্রকলায় শোভিত মায়ামি নগরীর সৈকত, আর্ট-ডেকো কেতার স্থাপত্য প্রভৃতি হয়ে পড়বে ভিন দেশের ঝাপসা হয়ে আসা এক সমুদ্রবন্দর। ঘন্টাখানেক হতে চলল, জাহাজের স্টেটরুম নামে পরিচিত কেবিনটিতে সেটল্ড্ হওয়ার চেষ্টা করছি। সহযাত্রী শ্যানন মিনিট পনেরো আগে থারমোস ভর্তি গরম জল জুগিয়ে গেছে। কাঁপা হতে তৈরি করেছি চা। পেয়ালা একটি নয়, দুটি। তা থেকে উড়ছে ধোঁয়া, ছড়িয়ে পড়ছে সিলোন টির সুগন্ধ।
কথা ছিল, মিনিট পাঁচেকের মধ্যে ফিরে এসে শ্যাননও শামিল হবে চা-পানে। সে না আসাতে অবাক হই না তেমন। দীর্ঘদিনের পরিচিত এ নারী, যাকে বন্ধু সন্বোধন করতে আমি ভালোবাসি। কথার খেলাফ সে করে না বটে, তবে সময়নিষ্ঠ হওয়ার ব্যাপারে তার অনীহা সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল। ক্যারবিয়ান ক্রুজ নামক এ নৌযাত্রার টিকিট কেনা থেকে কেবিন সিলেকশন অব্দি তাবৎ কিছুতে শ্যানন আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে। অ্যালগরিদমের কলাকৌশলে আমার প্রত্যাশিত বাজেটের চেয়ে বিপুল ছাড়ে সে শুধু ক্রুজের টিকিট কিনে দেয়নি, দরাজ হাতে কমিশনও নিচ্ছে। বিনিময়ে অনলাইনে শোর এক্সকারশন তথা—মেক্সিকোর ইউকাতান পেনিনসুলা, বেলিজ ও হন্ডুরাসের একাধিক পিরামিড–শোভিত মায়ান মন্দির পরিদর্শনের বন্দোবস্তেও হাত লাগিয়েছে।
একটু আগে শ্যানন আমাকে শুধু গরম জলের ফ্লাস্কই সরবরাহ করেনি, সাইড টেবিলে ওষুধবিসুধ, সপ্তাহের প্রতিটি দিন চিহ্নিত পিলবক্স, সাপ্লিমেন্টের কৌটা, নিত্যদিনের স্বাস্থ্য–ব্যবস্থাপনার যন্ত্রপাতি প্রভৃতি গোছগাছ করে দিয়েছে। নৌভ্রমণে টিকিট কাটা ও ইন্টারনেট বিষয়ক সহায়তা ভিন্ন অন্য সবকিছু শুধু অপ্রত্যাশিতই নয়, তার জব ডেসক্রিপশনের বাইরেও। জাহাজে ওঠা মাত্র পয়লাবার ক্রুজে আসা প্রায় আড়াই হাজার সহযাত্রীর ছোটাছুটিতে এমন ধুন্ধুমার বেঁধেছিল যে কোনোক্রমে আমরা নির্দিষ্ট কেবিনে ঢুকে আশ্রয় নিয়েছি। ভাবছি, আরও ঘণ্টাখানেক নিরিবিলি কাটিয়ে বাইরে ডেক, রেস্তোরাঁ ও বারগুলোতে কুরুক্ষেত্রপ্রতিম পরিস্থিতি শান্ত হলে পরে জাহাজ দেখতে বেরোব। আমি চায়ের পেয়ালায় শেষ চুমুক দিয়ে আগেকার ক্রুজে কোনো যাত্রী আমার কামরায় কৃত্রিম কোনো ডিম লুকিয়ে রেখেছে কিনা, তার তালাশ করি।
সেগওয়ের চাকায় ভর দিয়ে ছুটে চলা যুবক ও যুবতী.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের সময় বাড়ল
শেয়ারবাজারের নেগেটিভ ইকুইটি বা ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের সময় বাড়ানো হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ারবাজারের ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ক্ষেত্রে ছাড় পাবেন।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক জরুরি সভায় আজ বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এত দিন বিষয়টি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছিল। এ কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএসইসির জরুরি সভা শেষে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিএসইসি জানিয়েছে, এই সুবিধা নিতে হলে প্রত্যেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে তাদের ঋণাত্মক ঋণ হিসাব বা অনিরূপিত (আনরিয়ালাইজড) লোকসানের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতির সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সেই পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে হবে। যারা এই পরিকল্পনা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দেবে, তারা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাবে।
শর্তসাপেক্ষে এই সুবিধা দেওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায়, ঋণাত্মক ঋণ হিসাব নিয়ে একেক প্রতিষ্ঠানের সমস্যা একেক রকম। কারও নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ বা প্রভিশনিং করতে হবে বেশি, কারও কম। এই বাস্তবতায় শর্তসাপেক্ষে এ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অতীতে সর্বজনীনভাবে বারবার সময় বাড়ানোর পরও প্রতিষ্ঠানগুলো এই সমস্যার সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নিজে থেকে এই সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেয়, সে জন্য শর্ত আরোপ করেছে বিএসইসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সার্বিকভাবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে সময় বাড়ানো হলেও পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিকল্পনাসাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানভেদে এই সময়সীমা আরও বাড়তে পারে।
ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের এই সমস্যা তৈরি হয় মূলত ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর। ওই ধসের পর শেয়ারের ব্যাপক দরপতনের কারণে শেয়ারের বিপরীতে দেওয়া বিপুল ঋণ আর আদায় করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার শেয়ারের বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় শেয়ার বিক্রি করেও পুরোপুরি ঋণ সমন্বয়ের সুযোগ নেই। সে জন্য এসব ঋণাত্মক ঋণ হিসাবের বিপরীতে এত দিন নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিংয়ে ছাড় পেয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে এই সময় শেষ হয়। ফলে নিয়ম অনুযায়ী, ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে ঋণাত্মক ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা দেখা দেয়। আবার ঋণ সমন্বয় করতে গিয়ে ঋণাত্মক ঋণ হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রির চাপও তৈরির সম্ভাবনা তৈরি হয়। উভয় ক্ষেত্রেই বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ঋণাত্মক ঋণ হিসাব সমন্বয়ে আরও সময় চায় ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো। ডিবিএ ও বিএমবিএর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিএসইসির হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। এ নিয়ে শেয়ারবাজারের শীর্ষ ২০ ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা গত মঙ্গলবার বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকও করেন।
বিএসইসিতে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের পর এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বিএসইসির সঙ্গে বৈঠকে শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিরা ২০৩০ সাল পর্যন্ত ঋণাত্মক ঋণ হিসাব ও লোকসানে থাকা ডিলার হিসাবের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ছাড়ের দাবি জানিয়েছিলেন।