গেইলের মতে, আইপিএলের স্বার্থেই ধোনিকে দরকার
Published: 2nd, April 2025 GMT
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দুই দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস। দু’দলই পাঁচবার করে শিরোপা জিতেছে। মুম্বাইয়ের সাফল্যের নেপথ্যে যেমন রোহিত শর্মা, তেমনি চেন্নাইয়ের সাফল্যের মূল কারিগর মহেন্দ্র সিং ধোনি।
চলতি আসরে চেন্নাই সুপার কিংস প্রথম ম্যাচে জয় পেলেও পরের দুই ম্যাচে হেরে গেছে। বিশেষ করে ঘরের মাঠে ১৭ বছর পর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিবি) বিপক্ষে হার তাদের জন্য বড় ধাক্কা। এরপরই ধোনির ব্যাটিং পজিশন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কেন তিনি ৯ নম্বরে নেমেছিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এবার সেই আলোচনায় যোগ দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল।
এক সাক্ষাৎকারে গেইল স্পষ্ট জানিয়েছেন, আইপিএলের স্বার্থেই ধোনিকে যতদিন সম্ভব এই টুর্নামেন্টে দরকার। তিনি বলেন, ‘ধোনি আইপিএলকে যা দিয়েছে, তা অন্য কারও সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব নয়। এই লিগে তার উপস্থিতি এক অনন্য মূল্যবোধ যোগ করে। যদি সবাই চায় ধোনি আরও বেশি দিন আইপিএলে খেলুক, তাহলে তার ওপর অযথা চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয়। কারণ এতে ভুল বার্তা দেওয়া হতে পারে।’
গেইল আরও বলেন, ‘ধোনি তিন নম্বরে নামুক বা ১১ নম্বরে, তাতে কিছু আসে যায় না। দর্শকরা শুধু তার একটা ঝলক দেখতে চায়। তিনি চেন্নাইয়ের প্রাণ, আইপিএলেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
গেইল মনে করেন, ভক্তদের ধোনিকে নিয়ে আরও সংযত হওয়া উচিত। তিনি চেন্নাইকে পাঁচটি আইপিএল শিরোপা এনে দিয়েছেন এবং তার নেতৃত্বের দক্ষতা বারবার প্রমাণিত। তাই শুধুমাত্র এক-দুই ম্যাচের ফলের ভিত্তিতে তাকে বিচার করা উচিত নয়।
সমর্থকদের উদ্দেশে ‘ইউনিভার্স বস’ গেইলের সতর্কবার্তা, ‘যে ব্যক্তি এতগুলো ট্রফি জিতেছেন, যদি তিনি আইপিএল থেকে বিদায় নেন, তাহলে শুধু চেন্নাই নয়, পুরো আইপিএলের জনপ্রিয়তাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
গেইলের মতে, ধোনির মতো কিংবদন্তির জন্য সমর্থকদের আরও সহনশীল হওয়া উচিত। তিনি চেন্নাই সুপার কিংস ও আইপিএলের জন্য অমূল্য সম্পদ। তাই ধোনিকে নিয়ে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করা হলে, সেটি পুরো টুর্নামেন্টের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিচারে ধীরগতি, হতাশা কাটে না ভুক্তভোগীদের
রানা প্লাজা ধসের এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ হয়নি এখনও। এ ঘটনার তিনটি মামলার একটি উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে আছে। সাক্ষী না আসার কারণে অন্য দুটির বিচার চলছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগও উঠছে।
এদিকে মামলার প্রধান আসামি সোহেল রানা ছাড়া অন্য সবাই জামিনে মুক্ত। এমন পরিস্থিতিতে দেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির বিচার নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। হাজারো ভুক্তভোগী শ্রমিক ও হতাহতের পরিবারে দেখা দিয়েছে হতাশা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভারে আট তলাবিশিষ্ট রানা প্লাজা ধসে পড়লে ১ হাজার ১৩৬ পোশাক শ্রমিক নিহত হন। পঙ্গুত্ববরণ করেন ১ হাজার ১৬৯ জন। জীবিত উদ্ধার করা হয় প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিককে। ঘটনার পরের দিন অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ২১ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে আরেকটি মামলা করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। দুর্নীতি দমন কমিশন ভবন নির্মাণ-সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে মামলা করে। হত্যা মামলার ৩৯ আসামির মধ্যে কারাগারে আছেন কেবল রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। অন্যদের মধ্যে সাতজন পলাতক এবং ৩১ জন জামিনে আছেন।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিনুল হক আমিন বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার কারণে ভয়াবহ এই ট্র্যাজেডির বিচার আজও শেষ হয়নি। বিচার বিভাগেরও দায় রয়েছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার চাইলে বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব।’
দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করেছেন সাভারের শিউলি খানম। এক যুগেও বিচার না হওয়ায় তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আমার ডান পাশ অবশ হয়ে গেছে। ভারতে গিয়ে তিনবার চিকিৎসা নিয়েছি, চার মাস পর আবার যেতে হবে।’
প্রায় সাত বছর আগে শিউলির স্বামী মারা গেছেন। এখন তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারের কাছে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং সুচিকিৎসা প্রত্যাশা করেন তিনি।
হত্যা মামলার পরিস্থিতি
হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ভবন মালিক, গার্মেন্ট মালিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্তরের ৪১ জনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ এনে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বর্তমানে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। ৫৯৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ৯৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
১৫ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু সাক্ষী আদালতে হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন আগামী ১৯ মে।
রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবুল কালাম খান সমকালকে বলেন, ‘মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য এখনও নেওয়া হয়নি। বিচার শেষ করতে হলে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।’
তিনি জানান, সাক্ষীরা হাজির না হলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে। এতে সাক্ষী অনুপস্থিতির সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে।
ইমারত আইনে মামলায় স্থগিতাদেশ
ভবন নির্মাণে ত্রুটি ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগে করা মামলায় ২০১৬ সালের ১৬ জুন ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। তবে চার্জ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। এই স্থগিতাদেশ এখনও প্রত্যাহার না হওয়ায় সাক্ষ্য গ্রহণ বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. ইশতিয়াক হোসেন বলেন, ‘উচ্চ আদালত ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি প্রত্যাহারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিগগির অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে হাইকোর্টে আবেদন করে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হবে।’
ভবন নির্মাণে দুর্নীতির মামলায়ও ধীরগতি
রানা প্লাজা ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ জিয়াউর রহমানের আদালতে। ২০১৭ সালের ২১ মে সোহেল রানাসহ ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন (জাহাঙ্গীর) সমকালকে বলেন, ‘গত ২৪ মার্চ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল, কিন্তু সাক্ষী উপস্থিত হননি। আগামী ১২ মে পরবর্তী শুনানি হবে।’