সিয়াম-বুবলীর ‘জংলি’: দর্শকরা কাঁদছেন কেন?
Published: 2nd, April 2025 GMT
ঈদুল ফিতরে বেশ কটি নতুন সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। প্রেক্ষাগৃহে উপচে পড়ছেন দর্শক। বাংলা সিনেমার পরিবর্তনের কথা বলছেন তারা। ঈদুল ফিতরে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্যতম আলোচিত সিনেমা ‘জংলি’। দেশের বেশ কটি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে এটি। এতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ ও শবনম বুবলী। দর্শকরা সিনেমাটি দেখে ভূয়সী প্রশংসা করছেন। অনেক দর্শককে কাঁদতে কাঁদতে হল থেকে বের হতে দেখা গিয়েছে।
বুসন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে দর্শকদের সমস্বরে বলতে শোনা যায়, “জংলি’ অনেক ভালো সিনেমা। অসাধারণ।” এক নারী দর্শক চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, “বাংলা সিনেমা দেখে কাঁদতে কাঁদতে বের হচ্ছি।” আরেক নারী দর্শক বলেন, “বাচ্চা থেকে শুরু করে সব বয়সি মানুষ সিনেমাটি দেখতে পারবেন।” আরেক দর্শক বলেন, “সিয়াম আহমেদ নায়ক থেকে অভিনেতা হয়ে গেছেন।”
রহমান মতি নামে একজন ব্যাখ্যা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “সিয়ামের গেটাপের দিকে তাকালেই ‘জংলি’ সিনেমায় তার ডেডিকেশন লেভেল সহজেই ধারণা করা যায়। চরিত্রের শেড অনুযায়ী নিজেকে গড়েছেন। ‘জংলি’ সিনেমায় সিয়ামকে অ্যাকশন লুকে যে পরিবর্তন দেখা গেছে, এটি তার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত সেরা। লুঙ্গি কাছা মেরে সাউথ ইন্ডিয়ান নায়কদের মতো সোয়াগ নিয়ে ফাইটিং করার বডি ল্যাংগুয়েজ ছিল দেখার মতো। চেষ্টায় কিনা হয়— এ কথার পারফেক্ট উদাহরণ সিয়ামের ‘জংলি’ চরিত্র।”
আরো পড়ুন:
পুরো মার্চ মাসটাই ‘এস কে’ মাস: বুবলী
লুঙ্গি পরার কারণ ব্যাখ্যা করলেন বুবলী
মোহাম্মদ ওমর নামে একজন বলেন, “এই সিয়াম আহমেদের এমন অনবদ্য অভিনয় কিংবা গল্পে লাস্ট কবে দেখা গেছে জানা নেই। তবে এতটুকুও শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি সিয়াম আহমেদ তার সবচেয়ে হিট মুভি ‘পোড়ামন টু’-কেও ছাড়িয়ে গেছে ‘জংলি’-তে। শুরু থেকেই মুভির পর্দা থেকে চোখ সরানো যাচ্ছিল না, বিশেষ করে লাস্ট ১ ঘণ্টা। এমন ন্যাচারাল অ্যাক্টিং সিয়াম আহমেদের পুরো ক্যারিয়ারেও করেছে কিনা সন্দেহ।”
টিকিটের টাকা উসুলের নিশ্চয়তা দিয়ে মোহাম্মদ ওমর বলেন, “পুরো মুভিতে সিয়াম আহমেদ, বুবলী আর ছোট মেয়েটা অসাধারণ অভিনয় করেছে, যা লাস্ট পর্যন্ত দেখলে মন ছুয়ে চোখের কোণে পানি চলে আসতে বাধ্য। তাই যারা ফ্রি আছেন অবশ্যই হলে গিয়ে একবার হলেও ‘জংলি’ দেখে আসতে পারেন। আশা করি, টাকা উসুল হয়ে পুরো মুভিটা মনে গেঁথে থাকবে।”
হাসানুল ইসলাম রেজা বলেন, “সিয়ামের সাথে বসেই ওর ‘জংলি’ সিনেমা দেখলাম। লিটার্যালি কান্দায় ছাড়ছে! এত ইমোশনাল সিনেমা! আমি ভেবেছিলাম, আমরা জংলি নামে কোনো অ্যাকশন মুভি দেখব। কিন্তু এটা দারুণ গল্পের আর ভীষণ আবেগঘন একটা সিনেমা। অনেক মানুষ সত্যি সত্যি কেঁদেছেন। কোনো সন্দেহ নেই, সিয়ামের সেরা মুভি এখন পর্যন্ত।”
এম.
ঢাকা/শান্ত
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র স য় ম আহম দ কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মাপাড়ের মাটি বিক্রি করছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা, হুমকিতে পুলিশ একাডেমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা
রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মাপাড়ের মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে। এতে একদিকে হারিয়ে যাচ্ছে চাষিদের ফসলের জমি, অন্যদিকে লাগাতার পাড়ের মাটি কেটে নেওয়ায় ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, বিজিবি ক্যাম্প, স্লুইসগেট, চারঘাট থানা, ভূমি অফিস, গুচ্ছগ্রামসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
এ ব্যাপারে ১৫ এপ্রিল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ করেছেন বড়াল রক্ষা আন্দোলন ও চলনবিল রক্ষা আন্দোলনের সদস্যসচিব এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এস এম মিজানুর রহমান। এ ছাড়া ২৬ ফেব্রুয়ারি চারঘাটের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বড়াল নদের উৎসমুখে পদ্মাপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করার ভয়াবহতা উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনে এলাকাটি অবৈধ দখলদারের হাত থেকে উদ্ধার করে চারঘাটের ঐতিহ্য খয়েরবাগান সৃজন এবং একটি মিনি শিশুপার্ক নির্মাণের প্রস্তাব করেন।
উপজেলা ভূমি অফিসের প্রতিবেদন ও উপদেষ্টা বরাবর দাখিল করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মাপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মতলেবুর রহমান ওরফে মতলেব। তাঁকে সহযোগিতা করছেন উপজেলা বিএনপির একজন নেতা। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে শত শত ড্রামট্রাকে বিভিন্ন ইটভাটা ও স্থাপনায় পাঠানো হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চারঘাট বাজারের স্লুইসগেট সংলগ্ন পদ্মা ও বড়াল নদের মোহনা বালুমহাল হিসেবে সরকার প্রতিবছর ইজারা দিত। কিন্তু বালু তোলার কারণে ক্যাডেট কলেজ, পুলিশ একাডেমিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ভাঙনের মুখে পড়ায় উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় দুই বছর ধরে বালুমহালের ইজারা বন্ধ আছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বালুমহাল সংলগ্ন পদ্মাপাড়ের জায়গাগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন যুবদল নেতা মতলেবুর রহমান। সেখান থেকে নদীপাড়ের মাটি কেটে বিক্রি শুরু করেন। স্থানীয় প্রশাসন সেখানে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করলেও মতলেব ও তাঁর লোকজন বালু তোলা বন্ধ করেননি।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে মাটি কাটার জায়গাটি পরিদর্শন করেন। তাঁরা সেখানে সরকারি খাসজমির সঠিক সীমানা নির্ধারণ করে লাল পতাকা ও সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। এ সময় জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্প ‘ইনোভেশনস ফর ক্লাইমেট-স্মার্ট আরবান ডেভেলপমেন্টের’ প্রতিনিধিদলকে সঙ্গে নিয়ে ভাঙন রোধে সেখানে চারঘাটের ঐতিহ্যবাহী খয়েরগাছ রোপণের মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম শুরু করা হয়।
এদিকে ওই দিন দুপুরে গাছের চারা রোপণের পর রাত থেকেই আবারও মাটি কাটা শুরু হয়। মাটি পরিবহন করতে গিয়ে রোপণ করা গাছগুলোও নষ্ট করা হয়। সীমানা নির্ধারণের লাল পতাকা ও সাইনবোর্ড তুলে ফেলা হয়। এরপর স্থানীয় লোকজনের ফসল নষ্টের অভিযোগের ভিত্তিতে সর্বশেষ ১১ এপ্রিল বিকেলে সেখানে অভিযানে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। অভিযানে সহযোগিতায় ছিল মাত্র চারজন আনসার সদস্য।
আগামী মৌসুমে এই এলাকাজুড়ে তীব্র ভাঙন হওয়ার আশঙ্কা হয়েছে। যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তার ২০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে পুলিশ একাডেমি, চারঘাট থানা, ভূমি অফিস, স্লুইসগেট, বিজিবি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।পার্থ সরকার, রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগ-২–এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলীঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কর্মীরা এক্সকাভেটর মেশিন অকেজো করার চেষ্টা করলে সেখানে উপস্থিত হন মতলেবুর রহমানের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন দেশি অস্ত্রধারী। এ অবস্থায় যথেষ্ট ফোর্স না থাকায় অভিযান না চালিয়ে ফেরত আসতে বাধ্য হয় উপজেলা প্রশাসন। ওসি নিজে সেখানে উপস্থিত থাকলেও মাত্র ৩০০ মিটার দূরত্বে থেকেও ঘণ্টাখানেক সময়েও থানার পুলিশ ফোর্স সেখান উপস্থিত হননি।
প্রকাশ্যে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ওই এলাকায় যাওয়ার কোনো উপায় নেই। প্রশাসনের লোকজনকেই মাটি খননে জড়িত লোকজন ঘিরে ধরেন। তাই চারঘাটের মুক্তারপুর থেকে নৌকা নিয়ে পদ্মা নদী দিয়ে গত রোববার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি ভুট্টাখেতের পাশ থেকে নদীপাড়ের মাটি খনন করা হচ্ছে। ৩০-৪০ ফুট গভীরে মাটি কাটায় সমতল ভূমি থেকে যন্ত্রটির মাথা দেখা যাচ্ছে না। সেখানকার ছবি তুলতে দেখেই খাদের মধ্যে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন এই প্রতিবেদককে সালাম দেন। ছবি নিয়ে চলে আসতে গেলে একজন পেছন পেছন দৌড়ে আসতে থাকেন। ডাকতে ডাকতে বলেন, ‘ভাই, বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে যান, ভাই, বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে যান।’
স্থানীয় গোপালপুর এলাকার এক কৃষক বলেন, পদ্মা নদীতে অসময়েও ভাঙন চলছে। একের পর এক ফসল জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছেন আগামী বর্ষা মৌসুমের কথা চিন্তা করে। যেভাবে নির্বিচার নদীর পাড়ের মাটি পুকুরসমান গর্ত করে কাটা হচ্ছে, তাতে পুরো এলাকা নদীর মধ্যে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগে নদীর পাড়ে যেখানে ফসল ফলত, এখন সেখানে দুই মানুষ গর্ত হয়ে গেছে। যারা কাটছে তাদের বিরুদ্ধে কৃষকেরা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
যেখানে মাটি কাটা হচ্ছে তার ২০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে পুলিশ একাডেমি, চারঘাট থানা, ভূমি অফিস, স্লুইসগেট, বিজিবি ক্যাম্পসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান