একটি বাসার নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন মো. জিয়া। তিন বছর আগে একটি স্মার্টফোন কিনেছিলেন তিনি, সেটি এখন আর ঠিকভাবে কাজ করে না। কলেজপড়ুয়া ছেলেও পড়াশোনার কাজের জন্য মুঠোফোন কিনতে চাচ্ছে। কিন্তু তাঁর পক্ষে একসঙ্গে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা ব্যয় করে মুঠোফোন কেনার সামর্থ্য নেই।

জিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ১০ হাজার টাকার মুঠোফোন যদি কিস্তিতে কেনার সুবিধা থাকত, তাহলে তিনি কিনতেন কি না। জিয়া বলেন, তাহলে এখনই সে সুবিধা তিনি নিতেন। কিন্তু জিয়ার মতো মানুষের আগ্রহ থাকলেও তাঁর জন্য এই কিস্তি সুবিধা নেই।

জাপানের মতো উন্নত বিশ্বের দেশেও জনসাধারণের কিস্তিতে মুঠোফোন কেনার সুবিধা আছে। সে দেশে মোবাইল অপারেটররা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সিম লক রেখে কিস্তিতে ফোন বিক্রি করে। এমনকি ভারতেও এ সুবিধা আছে। কিন্তু বাংলাদেশে এ সুবিধা চালু করার দাবি দীর্ঘদিনের। একবার এই সুবিধা চালুর সিদ্ধান্ত হয়েও তা কার্যকর হয়নি। শুধু ক্রেডিট কার্ডধারীরা কিস্তি সুবিধায় নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় মুঠোফোন কিনতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্মার্টফোন ব্যবহারে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। ব্যবহার বাড়াতে সবার জন্য কিস্তিতে মুঠোফোন কেনার সুবিধা চালু করা প্রয়োজন।

প্রায় দুই বছর আগে সিম লক রেখে গ্রাহকের কাছে মুঠোফোন বিক্রি করতে পারবে, এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিটিআরসি। সেখানে শর্ত ছিল, মুঠোফোনের মধ্যে দুটি সিমের একটি লক রেখে বিক্রি করতে পারবে অপারেটররা। স্থানীয়ভাবে মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে স্মার্টফোন কিনতে হবে। কিস্তির ক্ষেত্রে ডাউন পেমেন্ট হবে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। কিস্তি হবে ৩ থেকে ১২ মাস মেয়াদি। স্মার্টফোনের দাম পরিশোধের পর লক করা সিমের স্লটটি খুলে দিতে হবে। কিন্তু পরবর্তী সময় এ সুবিধা কার্যকর করা যায়নি।

অপারেটর সূত্রে জানা গেছে, একটি সিম উন্মুক্ত রেখে মুঠোফোন বিক্রি করলে অপারেটরের জন্য তা সুবিধাজনক নয়। কারণ, একটি সিম উন্মুক্ত থাকলে গ্রাহক তখন পছন্দের অপারেটরই ব্যবহার করবেন। অপারেটরদের চাওয়া হলো, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দুটি সিম লক রেখেই মুঠোফোন বিক্রির সুবিধা চালু করা হোক। আবার সিম লক রেখে মুঠোফোন বিক্রির ক্ষেত্রে ছোট অপারেটররা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবে বলেও তাদের আপত্তি আছে।

আরও পড়ুনদেশের ৭০% পরিবার এখন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী০৬ জানুয়ারি ২০২৫

মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহার কম হওয়ার অন্যতম কারণ হলো গ্রাহকদের আর্থিক সক্ষমতার অভাব। এ ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক অপারেটররা হ্যান্ডসেটসহ ‘বান্ডেল অফার’ দিতে পারে, এতে স্বল্প আয়ের গ্রাহকের জন্য স্মার্টফোন কিনতে সহায়ক হবে। তবে গ্রাহককে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অফার প্রদানকারী অপারেটরের পরিষেবা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।

প্রতিবেশী ও সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে স্মার্টফোনের গ্রাহক কম। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, সহজলভ্য নয়। একদিকে যেমন কিস্তিতে কেনা সবার জন্য সুবিধাজনক নয়, তেমনি মুঠোফোনের দামও বেশি।

মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈশ্বিক সংগঠন গ্লোবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন (জিএসএমএ) গত বছরের অক্টোবরে ‘দ্য স্টেট অব মোবাইল ইন্টারনেট কানেকটিভিটি ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে শহরের ৪১ শতাংশ এবং গ্রামের ২৬ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। যেখানে ভারতের শহরে ৫২ শতাংশ ও গ্রামের ৪০ শতাংশ এবং পাকিস্তানের শহরে ৪৬ শতাংশ ও গ্রামের ৩৬ শতাংশ মানুষের স্মার্টফোনের মালিকানা আছে।

আরও পড়ুনমুঠোফোন নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সুযোগ, কিন্তু জনপ্রিয় হয়নি কেন৩১ মার্চ ২০২৫

প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশে মুঠোফোনের দাম দ্বিগুণ। শুল্ক-করের কারণে দাম বেড়ে যায়। আমদানি করা একটি স্মার্টফোনের ওপর প্রায় ৫৯ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়। আবার দেশে উৎপাদিত ফোনের ওপরও সব মিলিয়ে ৩০ শতাংশের বেশি শুল্ক ও কর দিতে হয়। এসব কারণে দেশে অবৈধ মুঠোফোনের বাজার বড় হয়ে গেছে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.

) মো. এমদাদ উল বারী প্রথম আলোকে বলেন, স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য বিটিআরসি কিছু কাজ করছে। অবৈধ পথে মুঠোফোন আসা যেন বন্ধ হয়, সেটা নিয়ে কাজ হচ্ছে এবং স্মার্টফোনকে মানুষের সামর্থ্যের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য ভ্যাট–ট্যাক্স কমাতে সরকারকে আহ্বান জানানো হবে।

কিস্তিতে মুঠোফোন কেনা প্রসঙ্গে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, বিটিআরসি একসময় একটি সিম লক রেখে মুঠোফোন বিক্রির সুবিধা দিয়েছিল। কিন্তু এতে গ্রাহক আরেকটি সিমে অন্য অপারেটরের সিম ব্যবহার করায় যারা ফোন দিচ্ছে তাদের লাভ হয় না। অপারেটরদের অনেকেই দুটি সিমই লক করার আবেদন করেছিল। কিন্তু এতে ছোট অপারেটররা ক্ষতির মুখে পড়ে বলে জানায়। বিটিআরসি তাদের সর্বশেষ বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে স্টাডি করতে বলেছে। দুটি সিম লক করে দিলে কী ধরনের প্রভাব পড়ে অথবা সিম লক না করে পুরো সেট লক করে দেওয়ার পদ্ধতি কাজে আসে কি না, তা নিয়ে বিটিআরসি কাজ করবে। তবে বিটিআরসি এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ন ক নত ব ট আরস গ র হক ক জ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে ২ ওয়ারেন্টভূক্ত আসামিসহ গ্রেপ্তার ৩

বন্দরে বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত ২ পলাতক আসামিসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ৩ জনের মধ্যে ২ জনকে পৃথক ওয়ারেন্টে ও অপরধৃতকে ৫৪ ধারায় বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে বন্দর থানার বিভিন্ন এলাকায় ওয়ারেন্ট তামিল অভিযান চালিয়ে  এদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত ওয়ারেন্টভূক্তরা হলো বন্দর উপজেলার দাঁশেরগাও এলাকার মৃত আবুল হামিদ মিয়ার ছেলে জিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী ফারুক মিয়া (৩৩) ঘারমোড়া এলাকার রেজু হোসেন মিয়ার ছেলে সিআর মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী নাজির হোসেন (৩৫)।  বন্দর থানার দেওলী বক্তারকান্দী এলাকার আল আমিন মিয়ার ছেলে চোর জাহিদুল ইসলাম (২৮)।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ