পাহাড়-নদী-ঝরনার খাগড়াছড়িতে পর্যটকের ভিড়, খালি নেই হোটেল-মোটেল
Published: 2nd, April 2025 GMT
পাহাড়, নদী ও ঝরনার কারণে খাগড়াছড়ি পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা। সারা বছরই জেলাটি ঘিরে পর্যটকদের আগ্রহ থাকে। আর বড় কোনো উৎসবের ছুটি হলে তো কথাই নেই! এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকের ঢল নেমেছে জেলার বিভিন্ন পর্যটনস্থানে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, খালি নেই হোটেল-মোটেল।
গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জেলার আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র, গুহা, হর্টিকালচার পার্ক, দেবতা পুকুর, মায়াবিনী লেক, পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরসহ সব পর্যটনকেন্দ্র ছিল লোকে লোকারণ্য। পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে এসব জায়গা বর্ণিলভাবে সাজানো হয়েছে। রেস্তোরাঁগুলোয় লেগে ছিল ভিড়। এ ছাড়া পিকআপ (চান্দের গাড়ি), জিপসহ ভ্রমণের অন্য যানবাহনগুলোতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত বুকিং দেওয়া আছে।
খাগড়াছড়ি জেলার পিকআপের (চান্দের গাড়ি) লাইনম্যান সৈকত চাকমা বলেন, ঈদের দিন ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁদের ১০০টি গাড়ি বুকিং আছে। অনেক পর্যটক গাড়ি না পেয়ে বিকল্প উপায়ে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
শুধু তা–ই নয়, কক্ষ খালি না থাকায় হোটেল থেকে পর্যটকদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলার ‘হোটেল গাইরিং’-এর ব্যবস্থাপক প্রান্ত ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘হোটেলের সব রুম বুকিং ছিল। আমার জানামতে, খাগড়াছড়ির কোনো হোটেল খালি নেই এবার।’
খাগড়াছড়ি আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক কোকোনাথ ত্রিপুরা বলেন, ‘ঈদের দিন থেকে প্রতিদিন পর্যটক বাড়ছে। গতকালও দুই হাজারের বেশি পর্যটক এসেছেন, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।’
গতকাল আলুটিলা পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আজিম উল হাসান। তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে তাঁর কয়েকজন স্থানীয় বন্ধু আছেন। প্রায় সময় তাঁদের কাছে আলুটিলা পাহাড়ের ছবি ও ভিডিও দেখে সেখানে ঘুরতে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন। অবশেষে চলতি বছর সেখানে যেতে পেরেছেন। আলুটিলা পাহাড় থেকে শহর দেখাটা তাঁর কাছে অসাধারণ লেগেছে।
খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার পার্কের টিকিট চেকার ইউসুফ বলেন, ঈদের দিন পার্কটিতে দুই হাজারের বেশি পর্যটক এসেছেন। ঈদের পরদিন এসেছেন তিন হাজারের বেশি। যেহেতু এখনো ছুটি চলমান, আশা করছেন প্রতিদিনই দর্শনার্থী বাড়বে। পর্যটক আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রেস্তোরাঁমালিকেরাও। ‘সিস্টেম রেস্তোরাঁ’-এর কর্মচারী আচিং মারমা বলেন, তাঁদের রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন লোকজন আসছে। এ ছাড়া আগামী শনিবার পর্যন্ত বুকিং দেওয়া আছে।
ঈদ–আনন্দ বাড়াতে পর্যটকেরা ছুটে গেছেন পার্বত্য এই জেলায়। তাঁদের এই আনন্দকে আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় ও নিরাপদ করতে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো ঘাটতি নেই বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরফিন জুয়েল। তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে অতিরিক্ত পর্যটক হলেও নিরাপত্তার কোনো কমতি নেই। ঈদ উপলক্ষে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে ২৪ ঘণ্টা টহলে আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ট ল
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মিরে হামলার সময় 'বেছে বেছে পুরুষদের গুলি করা হয়'
ভারত শাসিত কাশ্মিরের পহেলগামে বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর সময় নারী-পুরুষদের আলাদা করে বেছে বেছে পুরুষদের লক্ষ্য করে গুলি করছিল।
পর্যটক বাস থেকে নামার পর বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ভয়াবহ মুহূর্তগুলোর বর্ণনা দিচ্ছিলেন। কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।
বন্দুকধারীদের গুলিতে কমপক্ষে ২৪ জন পর্যটক নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আহতদের সংখ্যা অনেক, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পহেলগাম থেকে তিন মাইল দূরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত বৈসারণে এই হামলার ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন নারীর বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস খবর প্রকাশ করেছে। ওই নারীর স্বামীও মাথায় গুলি লেগে মারা যায়।
তিনি জানাচ্ছিলেন, "আক্রমণকারীরা পুরুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল। তার স্বামীও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।''
মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মিরের পহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর, বিশ্বের শীর্ষ নেতারা এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, এই হামলায় জড়িতদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী মোদী সৌদি আরব সফরে ছিলেন। কিন্তু এই হামলার পর তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে দ্রুতই দেশে ফিরেছেন।
এদিকে এই হামলার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ফোনে কথা বলেছেন।
'পুরুষদের লক্ষ্য করেই গুলি'
হামলার প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বন্দুকধারীরা স্পষ্টতই পুরুষদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছিল এবং নারীদের ছেড়ে দিচ্ছিল।
"জঙ্গিরা, আমি বলতে পারছি না ঠিক কতজন, একটি খোলা ছোট তৃণভূমির কাছের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে গুলি চালাতে শুরু করে" বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানাচ্ছিলেন একজন নারী।
তিনি বলেন, "স্পষ্টতই তারা মহিলাদের ছাড় দিচ্ছিলেন এবং পুরুষদের দিকে গুলি চালাতে থাকল, কখনও একটি একটি করে, আবার কখনো একাধারে গুলি চলছিল ঠিক ঝড়ের মতো," তিনি বলছিলেন।
ভারতীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পল্লবী রায় নামে আরেক নারীকে চিহ্নিত করেছে। যার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতদের মধ্যে ছিলেন। তিনিও বলেছেন যে পুরুষদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।
পর্যটক বাস থেকে নামার পর বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা ভয়াবহ মুহূর্তগুলোর বর্ণনা দিচ্ছিলেন। প্রথম গুলির শব্দের পর মানুষ চিৎকার করতে এবং দৌড়াতে শুরু করে।
যদিও কাশ্মীর দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল, তবুও পর্যটকদের উপর আক্রমণের ঘটনা বিরল।
এই অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, মঙ্গলবারের হামলা "সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেসামরিক নাগরিকদের উপর পরিচালিত যেকোনো হামলার চেয়ে অনেক বড়।"
বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
এই হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ফোনে কথা বলেছেন।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, "রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং এই জঘন্য হামলার অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য ভারতের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত ও আমেরিকা একসাথে দাঁড়িয়ে আছে।"
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এটিকে বর্বরোচিত আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকবেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বর্তমানে তার পরিবারের সাথে ভারত সফরে আছেন এবং তিনি নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
জেডি ভ্যান্স তার এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন "ভারতের পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকারদের আমি সমবেদনা জানাই"।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এটিকে 'সন্ত্রাসী হামলা' বলে অভিহিত করেছে এবং এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে সংযুক্ত আরব আমিরাত এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় 'ভারত সরকার এবং এই জঘন্য হামলার শিকারদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছে।'
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান 'ভয়াবহ হামলার' তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
বাড়ানো হয়েছে কড়া নিরাপত্তা
পহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার পর উপত্যকা থেকে দিল্লি পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর দিল্লিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। হামলার পর দিল্লি পুলিশ শহরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
বিশেষ করে পর্যটন স্থান এবং শহরের সীমান্তে, কঠোর তল্লাশি এবং নজরদারি চালানো হচ্ছে যাতে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যায়।
অন্যদিকে, উপত্যকার নিরাপত্তা কর্মীরা বিভিন্ন স্থানে যানবাহন তল্লাশি করছেন এবং রাস্তাগুলিতে ব্যাপক ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের অনেক এলাকা থেকেও হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ছবি এবং ভিডিও প্রকাশিত হচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি