বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লাবলু মিয়ার পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। ঈদের পরদিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি রংপুরের কাউনিয়ার হারাগাছ পৌরসভাধীন মায়াবাজার এলাকায় শহীদ লাবলু মিয়ার পরিবারের খোঁজখবর নিতে যান। এ সময় লাবলু মিয়ার স্ত্রী নুর নাহার, মা লাইলী বেগম, মেয়ে লাইজু খাতুন, লিজা খাতুন ও ছেলে নুর হাবিব উপস্থিত ছিলেন।

গত ৫ আগস্ট ঢাকার উত্তরা আজিমপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যোগ দিয়ে মিছিল করে যাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন লাবলু মিয়া।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আখতার হোসেন লাবলু মিয়ার পরিবারের সঙ্গে কিছু সময় কাটান এবং বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন। ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে জানতে চান। এ সময় শহীদ লাবলুর স্ত্রী নুর নাহার সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা, একটি কর্ম ও সরকারিভাবে পাকা বাড়ি করে দেওয়ার দাবি জানান। আখতার হোসেন তাদের কাছে সবকিছু শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদানসহ পরিবারের সদস্যদের ঈদ উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।

এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক রুবায়েত কবীর, এনসিপি জেলা সংগঠক রেজয়ান আহমেদ, এমআই সুমন আহমেদ, তৌফিক আহমেদ ও এনসিপি কাউনিয়া উপজেলা সংগঠক নাজমুল হক উপস্থিত ছিলেন। পরে আখতার হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেলযোগে হারাগাছ পৌরসভা, দেওয়ান বাজার, বকুল তলা, মেনাজ বাজার, মায়াবাজার, হকবাজার, সারাই বাজার, সুমন বাজার, বিজলের ঘুণ্টি, মীরবাগ বাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প আখত র হ স ন ম য় র পর ব র র আখত র হ স ন জখবর ন

এছাড়াও পড়ুন:

পেটেই থাকতে মেয়েশিশু নষ্ট করতে চেয়েছিলেন স্বামী, জন্মের পর বিক্রি করেছেন মা

স্বামীর অত্যাচার-নির্যাতন আর অভাবের তাড়নায় মেয়েশিশু বিক্রি করে দিয়েছেন এক মা। সাতক্ষীরার আশাশুনির একটি গ্রামে তিন মাসের বেশি সময় আগে ঘটলেও তা জানাজানি হয়েছে গতকাল রোববার। শিশুটিকে কিনে নেওয়া দম্পতি তার নাম রেখেছেন রাফিয়া জান্নাতুল। নতুন মা-বাবাই নন, শিশুটিকে নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশী সবাই মেতে আছেন।

শিশুটির মা-বাবার নাম আশামনি খাতুন ও শামিম হোসেন। সাড়ে চার বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। শামিম পেশায় দিনমজুর। তাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাঁদের ঘরে আসে একটি কন্যাসন্তান।

শিশুটির নানি মনোয়ার খাতুন জানান, দ্বিতীয়বারের মতো মেয়েসন্তানের জন্ম দেওয়ার পর থেকে কারণে-অকারণে আশামনিকে মারধর করতেন শামিম। খেতে দিতেন না। এ অবস্থায় গত ৭ জানুয়ারি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে তাঁদের আরও একটি কন্যাসন্তান হয়। হাসপাতাল থেকে ১৫ জানুয়ারি ছেড়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় আশামনিকে আর ভরণপোষণ দিতে পারবেন না বলে জানান শামিম। তাঁকে মৌখিকভাবে তালাক দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে আশামনি তাঁর মেয়েশিশুটিকে একই উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের চায়ের দোকানি রবিউল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী কাজল খাতুনের কাছে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন।

কাজল খাতুন জানান, ২০১৩ সালের ৬ জুন তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ১১ বছর পার হয়ে গেলেও তাঁদের কোনো সন্তান হয়নি। এ জন্য তাঁদের একটি সন্তানের চাহিদা ছিল। ২৮ জানুয়ারি কাজল খাতুনকে হামকুড়া গ্রাম থেকে তাঁর মা মাজেদা খাতুন মুঠোফোনে জানান, তাঁদের বাড়ির সামনে একজন মা তাঁর একটি শিশুকে নিয়ে কান্নাকাটি করছেন। দুধ কেনার সামর্থ্য নেই ওই মায়ের, তিনি সন্তান বিক্রি করতে চান। এই কথা শুনে স্বামী রবিউল ইসলামকে নিয়ে ওই দিনই বাবার বাড়িতে গিয়ে তাঁরা নবজাতকের মা আশামনির সঙ্গে কথা বলেন। তিনি শিশুটিকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে রাজি হন। পরে শিশুটির বাবা শামিম হোসেনের সঙ্গেও মুঠোফোনে কথা বলেন তাঁরা। সন্তান বিক্রিতে তিনিও কোনো আপত্তি জানাননি। পরের দিন ২৯ জানুয়ারি ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে উভয় পক্ষের স্বাক্ষরসহ শিশুটিকে ২০ হাজার টাকায় কিনে নেন বলে জানান কাজল খাতুন।

নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের ওপরে লেখা রয়েছে ‘দানপত্র’। নিচে আশামনির বয়ানে লেখা রয়েছে, ‘বাচ্চার প্রতি আমার কোনো দাবি নেই। আমার বাচ্চা আমি স্বেচ্ছায় আপনাদের দিয়া দিলাম। আমার বাচ্চার গার্জেন শুধু আমি। আমার স্বামী বাচ্চার কোনো খোঁজখবর নেয় না। আমার স্বামী মেয়ে হবে, জানতে পেরে ছয় মাসে আমার বাচ্চা নষ্ট করতে চেয়েছিল। জানতে পেরে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আমি বাচ্চা রেখে দিয়েছি। তাই আমি আমার এক বোনকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমার বাচ্চা দিয়ে দিলাম। আমি খুব অসুস্থ, তাই ডাক্তার দেখানোর জন্য এ টাকা নিলাম। আমার দেখার ইচ্ছা হলে বাচ্চা দেখতে যেতে পারব।’

আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাদাকাটি গ্রামে আশামনির মা মনোয়ারা খাতুনের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, আশামনি মায়ের সঙ্গে প্রথম মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন। বাড়িতে তাঁকে পাওয়া যায়নি। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও তিনি সামনে আসেননি। প্রতিবেশীরা বলেছেন তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। আশামনির বাবার সঙ্গে মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়েছে অনেক আগে। পরিবারটিতে হাল ধরার কেউ নেই।

শামিম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আশামনির মা মনোয়ারা জানান, তাঁর মেয়ে দ্বিতীয়বার কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়ার পর শামিম কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন না। মৌখিকভাবে তালাক দিয়েছেন। মনোয়ারা খাতুনের দাবি, শামিম আশামনিকে নিয়ে পাঁচটি বিয়ে করছেন। প্রত্যেককে তালাক দিয়েছেন।

শিশুটিকে কিনে নেওয়া তেঁতুলিয়া গ্রামের দম্পতির বাড়িতে গিয়ে রবিউল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। কাজল খাতুনের মামিশাশুড়ি বিলকিস ও আসমা খাতুন জানান, রাফিয়া জান্নাতুলকে নিয়ে রবিউল ও কাজল দম্পতি খুবই ভালো আছেন। মেয়ের জন্য প্রতিদিন আড়াই শ টাকার দুধ লাগছে। এ জন্য কাজল সমিতি থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। আর প্রতিবেশীরা মিলে প্রতিদিন দুধ কিনে দিচ্ছেন। চায়ের দোকান ভালো চলছে না বলে নতুন মেয়ের জন্য রবিউল নওগাঁয় শ্রমিকের কাজ করতে গেছেন।

বিষয়টি নজরে আনা হলে আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সামছুল আরেফিন জানান, ঘটনাটি গত জানুয়ারি মাসের। তিনি ১৫ এপ্রিল এ থানায় যোগ দিয়েছেন। শোনার পর ঘটনাস্থলে একজন উপপরিদর্শককে আজ সোমবার দুপুরে পাঠিয়েছেন। কেউ সন্তান বিক্রি করতে পারে না, দত্তক দিতে পারে। তবে কারও যদি কোনো অভিযোগ না থাকে, সে ক্ষেত্রে সেখানে কিছু করার থাকে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজার গির্জায় প্রতিদিন ফোন করে খোঁজখবর নিতেন পোপ ফ্রান্সিস
  • পেটেই থাকতে মেয়েশিশু নষ্ট করতে চেয়েছিলেন স্বামী, জন্মের পর বিক্রি করেছেন মা