বছরের প্রথম তিন মাসে সোনার দাম বেড়েছে ১৪ বার, কমেছে ৩ বার
Published: 2nd, April 2025 GMT
সোনা আবহমান কাল থেকেই মূল্যবান ধাতু। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিন দিন সোনা যেন আরও মূল্যবান হচ্ছে। ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এখন দেড় লাখ টাকার ওপরে। অথচ এক বছর আগে এই সময়ে তা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ভরিপ্রতি (২২ ক্যারেট) সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ হাজার টাকা।
মূলত বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে দেশেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সোনার দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম নিয়মিত ওঠানামা করে থাকে। তবে সম্প্রতি যে হারে দাম বাড়ছে, সে হারে আর কমছে না। এ কারণে সোনার মূল্যস্তর ক্রমে ঊর্ধ্বমুখী।
দেশে সোনার দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বা বাজুস। সংগঠনটি নিয়মিতই সোনার হালনাগাদ দাম প্রকাশ করে থাকে। বাজুস চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ) মোট ১৭ বার সোনার দাম পরিবর্তনের কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে দাম বাড়ানো হয়েছে ১৪ বার; দাম কমানো হয়েছে মাত্র ৩ বার।
বছরের শুরুতে ১৫ জানুয়ারি সোনার দাম বাড়ানো হয়। তখন ভরিপ্রতি (২২ ক্যারেট) দাম হয় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪৩ টাকা। সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ সোনার দাম বাড়ানোর কথা জানায় বাজুস। এই দফায় দাম বাড়ার পরে সোনার দাম হয়েছে ভরিপ্রতি (২২ ক্যারেট) ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭২ টাকা। দেশের বাজারে এটিই এখন পর্যন্ত সোনার সর্বোচ্চ বা রেকর্ড দাম। ফলে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভরিপ্রতি সোনার দাম ১৮ হাজার ৪২৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
এ ছাড়া বর্তমানে ২১ ক্যারেট মানের সোনার দাম ১ লাখ ৫০ হাজার ৬৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের সোনা ১ লাখ ২৯ হাজার ১৬৭ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ৬ হাজার ৫৩৯ টাকা।
কেন দাম বাড়ছেসোনা বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না। দেশের বাজারে যে সোনা পাওয়া যায়, তার সবই আমদানি করা। ফলে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়লে দেশেও বাড়ে। সর্বশেষ গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিশ্ববাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ১০০ ডলার ছাড়িয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই সোনার দাম নতুন রেকর্ড গড়ছে। মূলত এ কারণেই বাংলাদেশ, ভারতসহ সব দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ছে।
নানা কারণেই সোনার দাম বাড়ছে। তার মধ্যে আছে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভিন্ন দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির চাপ ও তার জেরে শুল্ক যুদ্ধের আশঙ্কা। ফলে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সুরক্ষিত বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে অনেকে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। শেয়ারবাজার থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করেও অনেকে সোনা কিনছেন।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, বর্তমানে মূলত ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার জেরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের প্রধান বাজার কৌশলবিদ জো কাভাতোনি সম্প্রতি বলেছেন, চলমান ভূ-অর্থনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার কারণে মানুষ অর্থ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শঙ্কিত। ট্রাম্প যেভাবে শুল্ক আরোপ করছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এর পাল্টা হিসেবে অন্যান্য দেশও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে। ফলে ওই সব দেশেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে যায়। এসব কারণে মানুষ সোনার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বলে মনে করেন জো কাভাতোনি।
অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনা কেনা বাড়ছে। ২০২৪ সালে এ নিয়ে টানা তিন বছর বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সম্মিলিতভাবে এক হাজার টনের বেশি সোনা কিনেছে। এটিও দাম বাড়ার অন্যতম কারণ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২২ ক য র ট বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
‘অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার দমনে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে ইতালি’
অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধ এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনসহ বাংলাদেশ পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইতালি সহায়তা করবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রোর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা জানান।
সাক্ষাতে আসন্ন ৫-৬ মে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাতেও পিয়ান্তেদোসির বাংলাদেশ সফর, অবৈধ অভিবাসন ও মানবপাচার প্রতিরোধ, নিরাপত্তা খাতে পারস্পরিক সহায়তা; পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং জনশৃঙ্খলা রক্ষা ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “ইতালি বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু।” তিনি উল্লেখ করেন, ইতালিতে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি দক্ষ কর্মী কর্মরত আছেন, যারা রেমিট্যান্স প্রেরণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের মাধ্যমে এই সংখ্যাটি আরো বাড়বে এবং দুদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।
রাষ্ট্রদূত জানান, সফরকালে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক ও প্রবাসী কল্যাণ এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ৫ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হবে এবং একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে উভয় দেশের সম্মতিক্রমে অবৈধ অভিবাসন রোধ, আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমন এবং পুলিশ বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে ঘোষণা, সমঝোতা স্মারক বা চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশ সব সময় আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে বৈধ চ্যানেলে জনশক্তি রপ্তানিতে আগ্রহী। আমরা অবৈধ অভিবাসনের বিপক্ষে এবং যারা দালালের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) মো. শামীম খান, জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব (রাজনৈতিক-১) মো. জসীম উদ্দিন খান এবং ঢাকাস্থ ইতালি দূতাবাসের অভিবাসন সংযুক্ত কর্মকর্তা জিউসেপ্পে দি জিওভান্নি উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ