যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ঈদমেলায় ফুচকা খেয়ে প্রায় ১০০ নারী, পুরুষ ও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গতকাল সোমবার ঈদের দিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার দেয়াপাড়া গ্রামের দক্ষিণ দেয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ফুচকা খেয়ে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে ৯৫ জনকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আশঙ্কাজনক হওয়ায় ১০ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে ফুচকা দোকানি মনির হোসেন পলাতক আছেন।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, দেয়াপাড়া গ্রামের দক্ষিণ দেয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ঈদ উপলক্ষে কয়েক বছর ধরে ঈদমেলা হয়। এ বছর ঈদের দিন বিকেল থেকে চার দিনব্যাপী ঈদমেলা শুরু হয়েছে। মেলায় শত শত মানুষের আগমন ঘটে। সেখানে হরেকরকম খাবারের দোকানও বসে। যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া এলাকা থেকে মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তি মেলায় অস্থায়ী ফুচকার দোকান দিয়েছিলেন। মেলায় আসা অনেক মানুষ বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেই দোকান থেকে ফুচকা খান। খাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকে তাঁরা অসুস্থ হতে থাকেন। তাঁদের পেটে ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা, খিঁচুনি ও জ্বর দেখা দেয়।

অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, অসুস্থ অনেকে সোমবার গভীর রাতে এবং মঙ্গলবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাঁদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক রঘুরাম চন্দ্র বলেন, খাবারে জীবাণু থাকার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বেশির ভাগ রোগীর পেটে ব্যথা, বমি, পাতলা পায়খানা ও জ্বর দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৯৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

নড়াইল সদর উপজেলার তপনবাগ গ্রামের ইব্রাহিম শেখের দুই মেয়ে রিমা খাতুন (২৮) ও আয়শা খাতুন (২৪) মেলায় এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আয়শা খাতুনের দুই ছেলে মোহাম্মদ আলী (৭) ও ওমর সরকার (৫) ছিল। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁরা ওই দোকান থেকে ফুচকা খান। পরে রাতে বাড়ি ফিরে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার সকালে তাঁরা অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। আয়শা খাতুন বলেন, ‘রাতে বাড়ি ফেরার পর সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ি। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।’

সাইফুল ইসলাম বাপ্পী নামের একজন বলেন, ‘পরিবারের সবাই সোমবার রাতে ঈদমেলায় গিয়ে ওই দোকান থেকে ফুচকা খান। রাতে বাড়ি আসার পর থেকে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি ফুচকা খাইনি। রাতে সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। তাঁদের মধ্যে চারজনের অবস্থা মারাত্মক হওয়ায় তাঁদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেছি।’

অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল আলিম বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি শুনেছি। ফুচকা ব্যবসায়ীকে আমরা খুঁজছি। তাঁর বাড়ি সদর উপজেলায় বলে জানা গেছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব স থ য কমপ ল ক স অভয়নগর উপজ ল ঈদম ল

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরের দুঃখ ভবদহ পরিদর্শনে ৩ উপদেষ্টা, নদী খনন করবে সেনাবাহিনী

যশোরের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহের জলাবদ্ধ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে পরিদর্শন করলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ভবদহ স্লুইসগেট ২১ ভেন্ট এলাকা পরিদর্শন করেন তিন উপদেষ্টা।

তিন উপদেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ছাড়াও সেনাবাহিনীর যশোর এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শন শেষে ভবদহ কলেজ মাঠে ব্রিফিংয়ের সময় পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গতবারের মত এবার বর্ষায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয়, সেজন্য সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন কাজ শুরু হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব সেচ পাম্প কাজ করছে, সেগুলোর বিদ্যুৎ বিল ইতোমধ্যে ৪৬ শতাংশ কমিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ। এ এলাকার জন্য কৃষি ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান যাতে হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০০৫ সালে ভবদহ সমস্যার সমাধান করা সহজ ছিল। কিন্তু সে সময় সরকার সদিচ্ছা দেখায়নি। বর্তমান সরকার এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শুরু হয়েছে। পক্ষ-বিপক্ষ সবার কাছ থেকে এ ব্যাপার মতামত নেওয়া হবে। এরপর বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে এদিন সকাল ১০টার দিকে যশোরের অভয়নগরের নওয়াপাড়া সরকারি কলেজ মাঠে হেলিকপ্টারে নামেন তিন উপদেষ্টা। পরে ধান খেত পরিদর্শন করেন তিন উপদেষ্টা।

এর আগে থেকে ভবদহ পাড়ের মানুষেরা বিভিন্ন ভবদহ স্থায়ী সমাধানে বিভিন্ন দাবি দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান নেন। এসময় তারা দ্রুত টিআরএম চালুসহ স্থানীয় নদীগুলো খনন করার দাবি জানান।

উল্লেখ্য, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে ভবদহ অঞ্চল। পলি পড়ে এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্য হারিয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নামতে পারে না। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় খেতের ফসল, ঘেরের মাছ সবই কেড়ে নেয় পানি। জলাবদ্ধতায় মগ্ন থাকে শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, কৃষিজমি এবং মাছের ঘের। এই অঞ্চলের ৪ লক্ষাধিক মানুষের ঠাঁই হয় মহাসড়কের ধারে বা স্কুল কিংবা আশ্রয়কেন্দ্রে। অথচ বিগত চার দশকে ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হয়নি।

অভিযোগ, বিগত সরকারগুলোর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তারা সিংহভাগ লুটপাটে জড়িত ছিলেন। তাই বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগা মানুষেরা দীর্ঘদিন স্থায়ী সমাধানে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু ও আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভবদহ এলাকার নদী খনন করা হবে: সৈয়দা রিজওয়ানা
  • ভবদহ পরিদর্শনে ৩ উপদেষ্টা, নদী খনন করবে সেনাবাহিনী
  • যশোরের দুঃখ ভবদহ পরিদর্শনে ৩ উপদেষ্টা, নদী খনন করবে সেনাবাহিনী