ঈদের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় পৌনে দুই লাখ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার।

সাধারণত প্রতিবছরই ঈদের দ্বিতীয় দিন জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

রফিকুল ইসলাম তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, আজ সারা দিন চিড়িয়াখানায় একইভাবে লোকজন এসেছে। সারা দিন ভেতরে মানুষ প্রবেশ করেছে, বের হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটার মতো অবস্থা ছিল না। ভেতর-বাহির একই অবস্থা। ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে।

আজ দুপুরে দেখা যায়, চিড়িয়াখানার দিকের সড়কে ব্যাপক যানজট। দীর্ঘ সময় লোকজনকে যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে। অনেকেই বাস থেকে নেমে হেঁটে চিড়িয়াখানায় যাচ্ছেন।

একদিকে চিড়িয়াখানার রাস্তায় যেমন ব্যাপক যানজট, অন্যদিকে এই সড়কের ফুটপাত প্রশস্ত হলেও অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ দোকান বসায় দর্শনার্থীদের হাঁটতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। প্রচুর মানুষ ফুটপাতে থাকায় স্বাভাবিকভাবে হাঁটাও যাচ্ছিল না।

ফুটপাত দিয়ে ভাগনের হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন মো.

আরিফ নামের এক ব্যক্তি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রচণ্ড যানজট, গাড়ি এগোয় না। এদিকে তাঁর ভাগনে বাসের ভেতরে গরমে অস্বস্তিবোধ করছিল। তাই হেঁটে রওনা হয়েছেন।

মিরপুর-১ নম্বর এলাকার সনি সিনেমা হল এলাকা থেকে চিড়িয়াখানা পর্যন্ত আসতে অনেকেরই এক ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে।

রাজধানীর কামারপাড়া এলাকা থেকে মো. জুয়েল রানা তাঁর তিন ভাই ও তাঁদের পাঁচ সন্তানকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন। তাঁরা সনি সিনেমা হল এলাকা থেকে বাসে ওঠেন। যানজটের কারণে একপর্যায়ে বাস থেকে নেমে যান। জুয়েল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাস থেকে নেমে এক কিলোমিটারের মতো হেঁটে এসেছি। বাচ্চাদের নিয়ে হাঁটা যায় না। চিড়িয়াখানা পর্যন্ত আসতে এক ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে।’

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এখানে বাঘ, ভালুক, হরিণ, সিংহ, বানর, জলহস্তী, কুমির, সাপ, ইম্পালা, গয়াল, লামা, ময়না, টিয়া, ক্যাঙারু, জিরাফ, জেব্রা, হাতি, ময়ূর, উটপাখি, ইমু, শঙ্খচিল, কুড়াবাজ, তিলাবাজ, গন্ডার, হায়েনাসহ ১৩৬ প্রজাতির ৩ হাজার ৩৪টি প্রাণী ও পাখি রয়েছে।

প্রাণী ও পাখির প্রতি আকর্ষণের জায়গা থেকে ঈদের সময় চিড়িয়াখানায় বহু শিশু-কিশোরের আগমন ঘটে। যেহেতু শিশু-কিশোরেরা এখানে আসতে চায়, সে কারণে বহু পরিবারের সমাগম ঘটে।

ঢাকার অদূরে সাভার থেকে এক ছেলে, এক মেয়ে, শাশুড়ি ও দেবরকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছিলেন ইতি খন্দকার। তাঁরা সকাল সাড়ে ৯টায় উবারে রওনা দিয়ে সকাল ১০টায় চিড়িয়াখানায় পৌঁছান। ইতি খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাচ্চারা অনেক আনন্দ করেছে। শাশুড়িও মজার মানুষ, তিনিও আনন্দ করেছেন। আমরাও ঘুরলাম। সব মিলিয়ে চিড়িয়াখানায় আসা আনন্দময় হয়েছে।’

চিড়িয়াখানা দেখার জন্য দিনাজপুর থেকে এসেছিলেন আল আমিনসহ ১১ জন। আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, শুধু চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখার জন্য পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে এত দূর এসেছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেটে ছাত্রলীগের মিছিলের পর দুই আ.লীগ নেতার বাসায় হামলা

সিলেটে সকালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল করার পর বিকাল ও সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের দুই নেতার এবং ছাত্রলীগের এক নেতারা বাসায় হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে।

বুধবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিলেটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য  শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় বিকালে হামলা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায়ও হামলা চালানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নোয়াখালীতে বিনোদনকেন্দ্রে হামলা, পুলিশসহ আহত ৭

রাঙ্গুনিয়ায় আহত আ.লীগ নেতার মৃত্যু

হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাসার জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে।

সিলেট নগরীর শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর (নাদেল) বাসভবনের ‘ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টের কার্যালয়ে’ হামলা চালায় একদল মানুষ। তারা মিছিল নিয়ে তার বাসায় ঢুকে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক তরুণ-যুবক গিয়ে এ হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালান। বাসাটিতে আনোয়ারুজ্জামানের পরিবারের কেউ থাকেন না। দুজন তত্ত্বাবধায়ক বাসার দেখাশোনা করেন।

মেজরটিলা এলাকায় অবস্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা চালায় দুর্বৃত্তদের একটি দল। সন্ধ্যা সাতটায় রুহেলের বাসায় হামলার সময় তাঁর মা ও বোন বাসায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

অবশ্য এসব হামলায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বুধবার সকাল থেকে সিলেট নগরীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি মিছিলের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মাঠে নামে। তারা ভিডিওতে দেখা যাওয়া চার-পাঁচজন মিছিলকারীকে ধরে পুলিশে হাতে তুলে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছাত্রলীগের ব্যানারে ৩০ থেকে ৪০ জন তরুণ নগরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেন। এতে ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতা-কর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের তিন নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালান।

এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা নাদেলের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই হামলা চালিয়েছে।

তিনি বলেন, মিছিলকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ