চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া এলাকায় গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আবারও দুর্ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলা অংশের চুনতি জাঙ্গালিয়ার মাজারটেক এলাকায় পর্যটকবাহী দুটি মাইক্রোবাস উল্টে ৯ যাত্রী আহত হন। একই স্থানে গতকাল সোমবার দুটি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। পুলিশ বলছে, বিপজ্জনক বাঁকের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

পুলিশ জানায়, ঢাকার সাভার ও কুমিল্লা থেকে পৃথক দুটি মাইক্রোবাস প্রায় ২২ জন পর্যটক নিয়ে কক্সবাজারে যাচ্ছিল। ভোরে চুনতি জাঙ্গালিয়া মাজারটেক এলাকায় মাইক্রোবাস দুটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পূর্ব পাশে ৩০ ফুট গভীর খাদে পড়ে উল্টে যায়। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় পুলিশ আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান।

এর আগে গতকাল সোমবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার জাঙ্গালিয়া এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ তরুণ নিহত হন। আহত হন আরও ৯ জন। নিহত তরুণদের মধ্যে আরাফাতসহ চারজন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা এবং একজন পাশের সাতকানিয়া উপজেলার।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, সম্ভবত মাইক্রোবাস দুটির চালকের কাছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি অপরিচিত। সেই কারণে মহাসড়কের বিপজ্জনক বাঁকের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই ঢাকা ও কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা। তবে তাঁদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে একটি মাইক্রোবাস জব্দ করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র ঘটন এল ক য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ছয় লাখ শিশু স্থায়ী পঙ্গুত্বের ঝুঁকিতে

চারদিক ঘিরে মারণাস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত ইসরায়েলের সেনারা। তাদের রাইফেল, ট্যাঙ্ক ও মর্টার তাক করা গাজার বাসিন্দাদের দিকে। উপত্যকার ২০ থেকে ২২ লাখ বাসিন্দার বের হওয়ার নেই পথ। ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না খাবার, পানি, ওষুধ ও জ্বালানির মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্য। এর মধ্যেই থেকে থেকে চলছে বিমান হামলা। গাজার বাসিন্দারা মারা যাচ্ছেন। আর যারা আহত হচ্ছেন, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই তাদের প্রাণ যাচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে হাসপাতাল, ধর্মালয়– কিছুই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না। 

গাজায় ইসরায়েলের অন্তহীন এ নৃশংসতায় সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে শিশুরা। অনাহারে তারা হাড্ডিসার। একসময় যে শিশুটি স্কুলে যেত, যার সুন্দর পরিবার ছিল, মা-বাবা, ভাইবোন ছিলেন; সেই শিশুটি এখন খাবারের খোঁজে রাস্তায় ফিরছে। পায়ে জুতা নেই। অনাদরে উশকোখুশকো চুল। ছেঁড়া জামা। ক্ষুধার তাড়নায় তার শোক প্রকাশের ভাষা নেই। 

অবরুদ্ধ গাজায় বাড়ছে রোগের প্রকোপ। ‍ওষুধ নেই। হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলের বোমা। গাজা সিটি থেকে আলজাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, আহতরা চিকিৎসার অভাবে হাসপাতালে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সেখানে অন্তত ৬ লাখ শিশু পঙ্গুত্বের ঝুঁকিতে। ওষুধের সরবরাহ বন্ধের কারণে পোলিও টিকা প্রবেশ করতে পারছে না, যা উপত্যকার অর্ধেক শিশুকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, পুষ্টি ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে গাজার শিশুরা নজিরবিহীন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।

গত ২ মার্চ গাজায় ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ আটকে দেয় ইসরায়েল। এরপর থেকে ক্রমেই পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার এক দিনে আরও ২৬ জন নিহত ও ৬০ জন আহত হন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৫১ হাজার ২৬৬ জনে পৌঁছেছে। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৯১। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮৯০ জন নিহত ও ৪ হাজার ৯৫০ জন আহত হয়েছেন। 

হামলার পাশাপাশি এখন উপত্যকার বাসিন্দাদের ধরে নিচ্ছে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের প্রিজনার্স সোসাইটি জানায়, গাজা থেকে আটক ৬০ ফিলিস্তিনির নাম প্রকাশ করেছে তারা। 

সন্তান জন্মকালে স্ত্রীর পাশে থাকতে পারলেন না খলিল

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের সমর্থনে আন্দোলন করে গ্রেপ্তার হওয়া মাহমুদ খলিল সদ্য বাবা হলেও সন্তানের মুখ এখনও দেখতে পারেননি। সন্তান জন্মদানের সময় তাঁকে জামিন দিতে অস্বীকৃতি জানায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলন করায় আদালতের রায়ে মাহমুদ খলিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়নের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। এ অবস্থায় আটক কয়েক ফিলিস্তিন সমর্থক শিক্ষার্থী মার্কিন সিনেটরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। 

যুদ্ধ বন্ধে নতুন প্রস্তাব মিসর ও কাতারের

গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে যুক্ত এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে মঙ্গলবার বিবিসি জানায়, যুদ্ধ বন্ধ করতে নতুন প্রস্তাব পেশ করেছে কাতার এবং মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা। নতুন এ প্রস্তাবে পাঁচ থেকে সাত বছরের স্থায়ী যুদ্ধবিরতির উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া সেখানে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে সব ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি, যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ও গাজা থেকে সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ইসরায়েলের দেওয়া সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হামাস খারিজ করে দেওয়ার পর নতুন করে প্রস্তাব পেশ করল মিসর ও কাতার। এ প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা করতে হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন নেতা কায়রোতে যাবেন বলে জানা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত নতুন প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ইসরায়েল। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ