কাল থেকে বন–পাহাড় দেখতে ছুটবেন পর্যটকেরা, যেভাবে প্রস্তুত হচ্ছে বান্দরবান
Published: 1st, April 2025 GMT
বান্দরবানে ঈদের টানা ছুটিতে আগামীকাল বুধবার থেকে হাজারো পর্যটকের ঢল নামবে বলে আশা করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর ঈদের পরের দিন থেকে পর্যটকেরা ভ্রমণে আসেন শৈল শহরটিতে। এবারও সেভাবেই হোটেল-মোটেলে বুকিং হয়েছে। পর্যটকদের বরণে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেল-রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন।
জেলা শহর ও শহরতলির আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র ও আবাসিক হোটেল-রিসোর্টগুলোয় গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের আগমন উপলক্ষে পরিচ্ছন্নতার কাজসহ নানা ধরনের প্রস্তুতি চলছে। আজ মঙ্গলবার থেকে কিছু পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। পরিবহন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আজ সকাল থেকে দেবতাখুম, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক ও নীলগিরিতে প্রায় দেড় শ গাড়ি নিয়ে পর্যটকেরা জেলা সদর থেকে বের হয়েছেন। আগামীকাল তিন থেকে চার গুণ বাড়তে পারে। আবাসিক হোটেলে-মোটেল ও অবকাশযাপনকেন্দ্রগুলোয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। পর্যটননির্ভর পরিবারগুলোও পর্যটকের আশায় ফলমূল, কোমরতাঁতের কাপড় ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন।
বান্দরবান-চিম্বুক সড়কের শৈলপ্রপাতের কোমরতাঁতের কাপড় বিক্রি করেন জুলি বম। তিনি জানান,পবিত্র রমজান মাসে পর্যটকের আগমন কম ছিল। আজ থেকে বিক্রি বেড়েছে। আগামীকাল আরও বাড়বে বলে আশা করছেন। মেঘলা পর্যটনকেন্দ্রের প্রবেশমুখের দোকানি মহিউদ্দিন বললেন, পানির বোতল, স্মারকপণ্য (হস্তশিল্পের সামগ্রী ), পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী কাপড় ও জুমের বিন্নি ধানের চালের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ বেশি। এ জন্য এসব পণ্য দোকানে রেখেছেন।
বাসস্টেশন এলাকার হিলভিউ হোটেলের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ পারভেজ জানালেন, চাঁদরাত থেকেই পর্যটকেরা হোটেল বুকিং দিতে শুরু করেছেন। তাঁদের হোটেলে প্রায় সব কক্ষের আগাম ভাড়া হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনের জন্য কয়েকটি কক্ষ খালি রাখা হয়েছে।
হোটেল-রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জসীম উদ্দিন জানান, জেলা শহর ও শহরতলিতে ৭৩টি এবং উপজেলা শহরে, বিশেষ করে লামা ও আলীকদমে আরও সমসংখ্যক হোটেল, মোটেল, অবকাশযাপনকেন্দ্র রয়েছে। এসব হোটেলে একসঙ্গে ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার পর্যটকের আবাসনসুবিধা দেওয়া সম্ভব। এগুলোর কক্ষ ইতিমধ্যে আগাম ভাড়া হয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে পর্যটক আসা শুরু হবে।
কোথায় ভ্রমণ করবেন
জেলা শহরে প্রবেশমুখে অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র। বৃক্ষরাজির সবুজে ঘেরা, নীলজলের হ্রদ ও ঝুলন্ত সেতুতে সময়টা কাটবে দারুণ। তারপর পড়ন্ত বিকেলে নীলাচলের পাহাড়চূড়ায় গিয়ে সূর্যাস্তের মনোরম দৃশ্য দেখা যেতে পারে। জেলার শৈলপ্রপাতে গেলে একসঙ্গে দেখা যাবে ঝরনার সৌন্দর্য ও বম জনগোষ্ঠীর জীবনধারা। শৈলপ্রপাত থেকে পাহাড়ি সড়ক ধরে যেতে থাকলে চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরি পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে পাহাড়ি মানুষের জীবনের সরলতা ও পাহাড়ের উদারতা দেখা যাবে। তবে চিম্বুক ও নীলগিরি পাহাড়ে স্থানীয় চাঁদের গাড়িতে (ফোর হুইল জিপ) করে যাওয়াই নিরাপদ। কারণ সমতলের চালকেরা পাহাড়ি সড়কে যানবাহন চালাতে অভ্যস্ত নন। বাসস্টেশন এলাকায় চাঁদের গাড়ির ভাড়াও নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। কারও নৌকাভ্রমণের শখ থাকলে জেলা শহরের ক্যচিংঘাটায় গেলে সহজে ভ্রমণসেবা পাওয়া যাবে।
পাহা্ড় থেকে দেখা বান্দরবানের শ্যামল নিসর্গ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়ির বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ভিড়
ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোতে।
গতকাল (সোমবার) ঈদের দিন খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলোতেও পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে জেলার বাইরের পর্যটকের চেয়ে স্থানীয় পর্যটকের সংখ্যা ছিল বেশি। আশা করা যাচ্ছে, আজ থেকে জেলার বাইরের পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে।
ঈদের দিন খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। আলুটিলা, রহস্যময় গুহা, জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কসহ সব জায়গায় পর্যটকের ভিড় ছিল।
জেলায় অনেকগুলো পর্যটন কেন্দ্র থাকলেও পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ থাকে আলুটিলা ও আলুটিলার ব্যতিক্রমী ব্রিজ। এ ছাড়াও রহস্যময় গুহা ও রিছাং ঝরনায় প্রাণ জুড়ান পর্যটকরা।
শহরের অদূরে পার্বত্য জেলা পরিষদ পরিচালিত জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্ক, ঝুলন্ত সেতু, নয়াভিরাম লেক পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এ ছাড়াও খাগড়াছড়িতে দেখার মতো রয়েছে মায়াবিনী লেক, হাতি মাথা পাহাড়, দেবতা পুকরু, তৈদু ছড়া ঝরনা, পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র ও পানছড়ির অরণ্য কুঠির।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা জেসমিন আক্তার ও মো. ফিরোজ জানান তারা পাহাড়ের অপরূপ সৈন্দর্য উপভোগ করতে পরিবার নিয়ে খাগড়াছড়ি এসেছেন। পাহাড় এবং প্রকৃতির অপরূপ সৈন্দর্য দেখে তারা মুগ্ধ!
খাগড়াছড়ির হর্টিকালচার পার্কের ব্যবসায়ী টিটু চাকমা জানান দীর্ঘ একমাস রোজাতে পর্যটক না আসায় তাদের ব্যবসা হয়নি। ঈদের দিন প্রচুর পর্যটক এসেছেন। বিক্রি বেড়েছে। আগামীতে বিক্রি আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
হর্টিকালচার পার্কের দায়ত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, ঈদের দিন প্রায় দুই হাজার পর্যটক এসেছেন পার্কে। আগামীতে আরো আসবেন।
একই আশাবাদ জানালেন, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের কোকোনাথ ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘‘আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে ঈদের দিন প্রায় দুই হাজার পাঁচশ পর্যটক এসেছেন। পর্যটকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’’
খাগড়াছড়ি ট্যুরিস্ট পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিশাত রায় বলেন, ‘‘পর্যটকেরা যাতে নিরাপদে ঘুরতে পারেন সে ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ।’’
রূপায়ন//