‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ প্রতিবাদে নাটোরের লালপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামে ঈদের নামাজ শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপির একজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিক্ষোভ করে লালপুর উপজেলা জামায়াত।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে শ্রীসুন্দরী হাইস্কুল থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি লালপুর ত্রিমোহনী চত্বর প্রদক্ষিণ শেষে রামকৃষ্ণপুর চিনিবটতলা মোড়ে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

আরও পড়ুনঈদের নামাজ শেষে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ১২২ ঘণ্টা আগে

বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নাটোর জেলা জামায়াতের শুরা ও কর্ম পরিষদ সদস্য আব্দুল ওহাব। আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাসুদ রানা, সহকারী সেক্রেটারি হাফেজ হাফজাল হোসেন, নাটোর জেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জাহিদ হাসানসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা।

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া চালিয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, কিন্তু এখনো তারা আইনের আওতায় আসেনি। বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও তার দোসররা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। ঈদের নামাজ শেষে আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী বিএনপি কর্মীদের ওপর গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

বক্তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে, অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

তিন সপ্তাহের মধ্যে আজহারের মুক্তি ও সব মামলা প্রত্যাহার না হলে মাঠে নামবে শিবির

চব্বিশের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে সংঘটিত ‘আওয়ামী গণহত্যার’ বিচার ও ‘ফ্যাসিস্ট আমলের’ সব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটি বলেছে, আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে জুলাই গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি, এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তি এবং শিবিরসহ সবার রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা না হলে তারা ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নেমে দাবি আদায় করতে বাধ্য হবে।

আজ বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে এসব দাবি জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম। বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, ‘১৬ বছর ধরে ছাত্রশিবির ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্মম নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তু। নাগরিক অধিকার হরণ করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এক অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে শিবিরের নেতা–কর্মীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়েছে। ঘরোয়া প্রোগ্রাম, মসজিদ, এমনকি নামাজরত অবস্থায়ও তুলে নিয়ে গুম-হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে ১০১ জনকে শহীদ, সহস্রাধিককে পঙ্গু এবং অসংখ্য নেতা–কর্মীকে গুম করা হয়। বর্তমানেও ৭ জন গুম অবস্থায় রয়েছেন। এখনো ১১ হাজারের বেশি মিথ্যা মামলা বলবৎ আছে শিবিরের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে।’

বিবৃতিতে শিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদের রাজত্ব কায়েম করে। জনগণের সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনেও নিরস্ত্র মানুষের ওপর চালায় বর্বর গণহত্যা। ছাত্র-জনতার বীরত্বগাথা ও সংগ্রামে প্রায় দুই সহস্রাধিক শহীদ এবং অগণিত আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের রক্তের ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু সেই গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের উদাসীনতা লক্ষ করছেন তাঁরা। অপরাধীদের বিপুল অর্থের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া এবং পুনর্বাসনের চেষ্টাও চলছে নানা মহল থেকে।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে দেশপ্রেমিক আলেম ও রাজনীতিবিদদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে ২০১২ সালে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ভিত্তিহীন ও প্রহসনমূলক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।’

এ টি এম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলাটি সম্পূর্ণ ‘মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ দাবি করে শিবির বলেছে, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পরে বহু রাজবন্দী মুক্তি লাভ করেছেন। ইতিপূর্বেও সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে তিনি (এ টি এম আজহার) ন্যায়বিচার পাননি। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়েও মামলা নিষ্পত্তির নামে বিভিন্ন কারণ উপস্থাপন করে শুনানি বারবার পেছানো হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।’

জুলাই অভ্যুত্থানের আট মাস অতিক্রান্ত হলেও আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা অংশীজনদের ‘মিথ্যা’ মামলা নিষ্পত্তি হয়নি বলে অভিযোগ করে শিবিরের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘এটি জাতির জন্য লজ্জার এবং গাদ্দারির শামিল। আমরা অবিলম্বে পল্টন, জুলাই, পিলখানা, শাপলা গণহত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য দ্রুত সম্পাদনের জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে জুলাই গণহত্যার বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতি, এ টি এম আজহারের মুক্তি ও ছাত্রশিবিরসহ সবার রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা না হলে আমরা ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে নেমে দাবি আদায় করতে বাধ্য হব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ