মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামীকাল ২ এপ্রিলের নাম দিয়েছেন লিবারেশান ডে। এদিন একগুচ্ছ শুল্করিকল্পনা ঘোষণা করবেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। যদিও আসলে কাল কী ঘটবে, এ নিয়ে অনিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা। তবে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, সমহারে শুল্ক ঘোষণা করতে পারেন ট্রাম্প।

এদিকে নতুন শুল্ক ঘোষণার আগে বিনিয়োগকারীরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত শীর্ষ ৫০০টি কোম্পানির সূচক এসঅ্যান্ডপি–৫০০ প্রায় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ নিচে নেমে গেছে। আর মার্কিন শেয়ারবাজার ন্যাসড্যাক নেমেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ।

সোনার দাম বর্তমানে প্রতি আউন্স ৩ হাজার ১৫০ মার্কিন ডলার ছুঁয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের অনিশ্চয়তা এবং বাণিজ্যক্ষেত্রে বাড়তে থাকা টানাপোড়েনই এর জন্য দায়ী।

 জাপানের নিককেই-২২৫ নিচে নেমেছে ৪ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি ৩ শতাংশ এবং ফ্রান্সের সিএসি–৪০ প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ নিচে নেমে গেছে।

গত রোববার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই নতুন শুল্ক বিশ্বের প্রতিটি দেশের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। হোয়াইট হাউসের মতে, বিদেশি দ্রব্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের কারণে প্রায় ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার লাভ হবে যুক্তরাষ্ট্রের।

রোববার ফক্স নিউজ চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কার কথাও উড়িয়ে দেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁর এই বক্তব্যের প্রভাব পড়েছে সোমবারের স্টক মার্কেটে।

 বিশ্বে মন্দা আসতে পারে কি না—এই প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এসব আগাম ঘোষণা পছন্দ করি না। আমরা খুব বড় একটা কিছু ঘোষণা করব। তাই কিছু পরিবর্তন তো দেখা যাবেই। খানিকটা তো সময় লাগে।’

এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পিত রপ্তানি শুল্ক প্রথমবারের তুলনায় বেশি কড়া হতে পারে। চীনের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন ট্রাম্প। কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার হুমকি দিয়ে রেখেছেন তিনি। এ ছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ভারত ও জাপানের ওপরেও শুল্কের খড়্গ ঝুলিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। এই হুমকিতে জার্মান ওয়াইন ব্যবসায়ীরাও চিন্তায় পড়েছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ডলারের দরে নমনীয়তা দেখায়নি সরকার, আইএমএফের সঙ্গে আজ আবার বৈঠক

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড়ে কোনো সুরাহা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে– এ মুহূর্তে ডলারের দর বাজারভিত্তিকের ক্ষেত্রে নমনীয় করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার আরেক দফা বৈঠক হবে। আজও ইতিবাচক কোনো বার্তা না এলে আগামী ১৯ মে আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির চূড়ান্ত সুরাহা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তের অগ্রগতি যাচাইয়ে গত মাসে একটি মিশন ঢাকা সফর করে। তবে কোনো সমঝোতা ছাড়াই তারা ঢাকা ছাড়ে। মূলত বাংলাদেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে নমনীয়তা দেখাতে চাচ্ছে না। এ কারণে আলোচনা গড়ায় ওয়াশিংটনে। গত মাসের শেষ দিকে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সাইডলাইনে আলাদা বৈঠক হয়। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন– কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে পরবর্তী দুই কিস্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দুই পক্ষ। গতকাল এ নিয়ে আবার ভার্চুয়াল সভা হয়। সোমবারের এ সভায় বাংলাদেশের পক্ষে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, অতিরিক্ত সচিব ড. জিয়াউল আবেদীন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান ও কবির আহাম্মদ যুক্ত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ এ মুহূর্তে ডলারের দরে নমনীয়তা না দেখানোর নীতিগত অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বর্তমান ডলারের দর বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে দরের তেমন পার্থক্য নেই। আবার বৈধ পথে রেমিট্যান্সে প্রায় ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। ডলারের দর দীর্ঘদিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকার পরও এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এ মুহূর্তে ডলারের দরে সামান্য নমনীয়তা দেখালেই দর বাড়তে শুরু করবে। ডলার বাজারে আবার অস্থিরতা শুরু হবে। ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাবে।

এদিকে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে বাজেট সহায়তা ছাড় নিয়ে আলোচনার সময়ও আইএমএফের কিস্তির বিষয়ে সমাধানের তাগিদ দেয় সংস্থাটি। গত রোববার ইতালির মিলানে এডিবির বার্ষিক সভায় সংস্থার দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বাজেট সহায়তার বিষয়ে আলোচনার সময় এডিবি আইএমএফের বিষয় জিজ্ঞাসা করেছিল। আমরা তাদের বলেছি, আইএমএফের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, চট করে আইএমএফের কঠিন শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করা হবে না। মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়ে শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো করতে চাই না। আইএমএফের কিস্তি ছাড়াই অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে। আমরা যদি আইএমএফ ও এডিবির সহায়তা নাও পাই, তাও নিজেদের মতো করে বাস্তবসম্মত বাজেট দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী দু’জনেই সম্প্রতি বলেছেন, প্রয়োজনে আইএমএফের ঋণ নেওয়া হবে না। তবে সব শর্ত মানা হবে না।

আর্থিক সংকট সামাল দিতে ২০২২ সাল থেকে কয়েক দফা আলোচনা শেষে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। এখন বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার অন্য সব শর্ত মেনে নিলেও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারভিত্তিকের শর্ত নিয়ে দরকষাকষি করে আসছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ