ঘর থেকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ, ইউএনও অফিসের গাড়িচালকসহ গ্রেপ্তার ৪
Published: 1st, April 2025 GMT
নওগাঁর মান্দায় এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ইউএনও অফিসের গাড়িচালকসহ চার যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীকে উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। তাদের গতকাল সোমবার রাতে ঘটনাস্থল থেকে তাদের আটক করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া যুবকরা হলেন- উপজেলার ছোটবেলালদহ গ্রামের সোলাইমান আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম সোহাগ (২৯), বড়পই গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম সুইট (২৯), বিজয়পুর প্রিন্সিপালের মোড় এলাকার মোজাহার আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান মুন্না (২৯) ও বিজয়পুর মধ্যপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে নাসির উদ্দিন (২৯)। তাদের মধ্যে নাসির উদ্দিন মাস্টাররোলে ইউএনও অফিসের গাড়িচালক।
মামলার এহাজার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারীর স্বামী পিকআপচালক। তারা ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। ঈদ উপলক্ষে এ দম্পতির একমাত্র মেয়ে তারা নানার বাড়ি যায়। কাজের জন্য রাতে পিকআপ ভ্যান নিয়ে তার স্বামী বাইরে যান। ফলে বাড়িতে একাই ছিলেন ওই নারী।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘গত রোববার রাত ৮টার দিকে আমার স্বামী পিকআপ ভ্যান নিয়ে কাজের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। রাত ৯টার দিকে আমি রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ি। রাত সাড়ে ১০টার দিকে আসামি স্বাধীন বাসায় এসে আমার স্বামীকে ডাকাডাকি করে। স্বাধীন আমার স্বামীর পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সরল বিশ্বাসে আমি দরজা খুলি। সঙ্গে সঙ্গে ৬-৭ জন যুবক ঘরে ঢুকে মুখ চেপে ধরে। এর পর তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে আমার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে চারজনকে আটক করে। তবে বাকিরা পালিয়ে যায়।’
মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনুসর রহমান বলেন, দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২-৩ জনের নামে মামলা করেছেন। এ মামলায় চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে সোমবার নওগাঁ কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শারীরিক পরীক্ষার জন্য ওই নারীকে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ওসি আরও জানান, ‘শুনেছি, নাসির উদ্দিন ইউএনও অফিসের গাড়ি চালায়।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হাওরপারের সেই তিন পরিবারে ঈদ উপহার পৌঁছে দিলেন ইউএনও
সুনামগঞ্জের দেখার হাওরপারের একটি গ্রামের দরিদ্র মানুষদের ঈদ নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী ও ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা ওই গ্রামে গিয়ে পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেন এবং ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী ও শাড়ি তুলে দেন।
সুনামগঞ্জের দেখার হাওরপারের কান্দাহাটি গ্রামের দরিদ্র মানুষের ঈদের আনন্দ-বেদনা নিয়ে সোমবার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘হাওরপারের ঈদ: বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু, ইলাই আমরার ঈদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে গ্রামের দরিদ্র সবুরা, জহুরা, রংমালা বিবির পরিবারের ঈদের প্রস্তুতি, ভাবনা ও দুঃখকষ্ট তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনটি সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার নজরে এলে তিনি প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে ওই পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সদরের ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের দেখার হাওরপারের কান্দাহাটি গ্রামে যান। তিনি সবুরা বেগম, জহুরা বিবি ও রংমালা বিবির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের আয়রোজগারের জন্য কোনো কিছু করা যায় কি না, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। একই সঙ্গে দরিদ্র সবুরা বেগমের ঘরটি নির্মাণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময় তাঁদের হাতে খাদ্যসামগ্রী ও নতুন শাড়ি তুলে দেন ইউএনও।
আরও পড়ুন‘বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু, ইলাই আমরার ঈদ’৩১ মার্চ ২০২৫এ সময় লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. নিজাম উদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, লিয়াকত আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, এসব পরিবারের নারীরা অনেক কষ্টের কাজ করেন। তাঁরা যাতে কম পরিশ্রমে আয় করতে পারেন, সেটির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। পরিবারের পুরুষ সদস্য থাকলে তাঁকে দিয়ে সেটি করা যায়। প্রশাসন সহযোগিতা করবে।
ইউএনও বলেন, ‘ঘরগুলো একেবারে হাওরের পারে। বর্ষায় ঢেউয়ের কবলে পড়ে বসতভিটা ও ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এটি বড় সমস্যা। আমরা স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বলেছি, এঁদের জন্য কী করা যায়, চিন্তাভাবনা করার জন্য।’
প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপহারসামগ্রী পেয়ে খুশি লাভলী বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরার বাড়িত যে স্যার (ইউএনও) নিজে অত জিনিস লইয়া আইছইন, এর লাগি আমরা খুশি। আমরা খুব কষ্টে আছি। তাঁরা খইছইন আমরারে আরও সাহায্য খরবা।’
ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এই পরিবারগুলো খুবই দরিদ্র, অসহায়। ইউএনও স্যার বলেছেন, সব সময় তাদের খেয়াল রাখতে।’
সুনামগঞ্জের হাওরে বহুকাল থেকে ‘চৈত্রের নিদান’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। এই নিদানে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের ঘরে ঘরে খাবারের সংকট থাকে। কেউ কাউকে সহযোগিতা করার মতো অবস্থা থাকে না। যদিও এখন হাওরে সেই ‘নিদারুণ অভাব’ আগের মতো নেই। তবে একেবারে নিদানের রেশ কেটে যায়নি। তাই এই সময়ে হাওরের কৃষক পরিবারে টানাপোড়েন থাকে। পুরোনো ধান শেষ হয়ে আসে। হাওরে থাকে কাজের সংকট। এ অবস্থায় এবার ঈদ এল। তবু সাধ্য অনুয়ায়ী মানুষ চেষ্টা করেন ঈদের আনন্দে নিজেদের মেলাতে।