দেশজুড়ে ঈদের আমেজ বিরাজ করছে। ঈদের পরের দিন অলিগলি থেকে শুরু করে রাজপথ, পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্র সবখানেই ভিড়। পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে মেতেছেন সবাই। 

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সকাল থেকেই রাজধানীর অন্যতম প্রধান বিনোদনকেন্দ্র হাতিলঝিলে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। ঝিলের পানিতে নৌ ভ্রমণ ঈদের আনন্দ আরো বাড়িয়েছে। ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের জন্য ‘আনন্দ নৌ ভ্রমণ প্যাকেজ’ নামে বিশেষ সেবা চালু করেছে হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সিগুলো। এ সেবা ঈদ আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ইট-পাথরের নগরী ঢাকায় প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়ার জায়গা খুবই কম। ব্যস্ত নাগরিক জীবনে কিছুটা স্বস্তি পেতে সব সময় উপলক্ষ খুঁজে বেড়ান রাজধানীবাসী। প্রত্যেক বছরের মতো এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সবুজের সমারোহ, বসার সুব্যবস্থা, নৌ ভ্রমণের সুবিধা থাকায় হাতিরঝিল হয়ে উঠেছে বিনোদনপ্রেমীদের অন্যতম গন্তব্য। ঈদসহ বিভিন্ন ছুটির দিনে বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর থাকে এ বিনোদনকেন্দ্রটি।

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) হাতিরঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের দিন উপলক্ষে সাধারণ যাত্রী পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে, নৌ ভ্রমণের জন্য বিশেষ প্যাকেজ চলু করেছে কর্তৃপক্ষ। জনপ্রতি ৮০ টাকায় আধাঘণ্টা নৌ ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সি টিকিট কাউন্টারের সামনে এ বিষয়ে নোটিশ টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদের প্রথম থেকে তৃতীয় দিন পর্যন্ত সাধারণ যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকবে। জনপ্রতি ৮০ টাকায় ৩০ মিনিটের ‘আনন্দ নৌ-ভ্রমণ প্যাকেজ’ চালু থাকবে। শিশুর বয়স ৩ বছরের বেশি হলে তার জন্য আলাদা টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সিতে ভ্রমণ করেছেন বিপুল পরিমাণ মানুষ। প্রতিটি ঘাটেই দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। নৌ ভ্রমণের জন্য টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের।

কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে, কেউ প্রেমিক বা প্রেমিকাকে নিয়ে, কেউবা বন্ধুদের নিয়ে হাতিলঝিলে ঘুরতে এসেছেন। ঝিলের পাড়ে বসে কেউ গল্প করছেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা ঝিলের পাড় ধরে হাঁটাহাঁটি করছেন। দিনের বেলায় গরমের মধ্যে জলাধারের শীতল বাতাস দর্শনার্থীদের শরীর-মন জুড়িয়ে দিচ্ছে।

বনশ্রী এলাকা থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আশিকুর রহমান বলেন, এবার ঈদ ঢাকায় করছি। তাই, বাচ্চাদের নিয়ে সপরিবারসহ হাতিলঝিলে ঘুরতে এসেছি। সবাইকে নিয়ে ওয়াটার ট্যাক্সিতে ঘুরলাম। ৩০ মিনিট ভ্রমণে জনপ্রতি ৮০ টাকা গুনতে হয়েছে। বাচ্চারা নৌ ভ্রমণ বেশ উপভোগ করেছে।

তবে, যাত্রী পারাপার বন্ধ রাখায় অনেকে এর নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বলেন, ঈদে ছুটিতে আনন্দ ভ্রমণের প্যাকেজ চালু করাটা ভালো উদ্যোগ। তবে, যাত্রী পারাপারের ব্যবস্থা রাখাও উচিত ছিল। যাত্রী পারাপার ও নৌ ভ্রমণের জন্য পৃথক ওয়াটার ট্যাক্সি সেবা চালু রাখলে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হতো না।

হাতিরঝিলের ওয়াটার ট্যাক্সি টিকিট কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে, ঈদ উপলক্ষে নগরবাসীকে আনন্দ দিতে এ সেবা চালু করা হয়েছে।  
 

ঢাকা/এনটি/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ রমণ র উপলক ষ র জন য পর ব র আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

ভেড়াডহর গ্রামে উরিগানের আসরে

এক পক্ষে প্রায় ৫০০ মানুষ। আরেক পক্ষে অন্তত ৭০০। চলছে পাল্টাপাল্টি গানের লড়াই। তা দেখতে জড়ো হয়েছেন আরও হাজারো নারী-পুরুষ। মধ্যচৈত্রের চামড়াপোড়া গরমে শিল্পী-দর্শনার্থী সবাই দরদর করে ঘামছেন। কিন্তু বিরামহীনভাবে দুই পক্ষই পাল্লা দিয়ে গান গাইছে। কোনো পক্ষই অন্য পক্ষকে ‘বিনা যুদ্ধে’ ‘সূচ্যগ্র মেদিনী’ ছাড় দিতে নারাজ!

ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন গানের লড়াই চলে সুনামগঞ্জের হাওর-অধ্যুষিত শাল্লা উপজেলার ভেড়াডহর গ্রামের নতুন হাটিতে। সেদিন ছিল ১৪৩১ বঙ্গাব্দের ১৪ চৈত্র। খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে ২৮ মার্চ ২০২৫। খুব সকালে সিলেট থেকে রওনা দিই। সঙ্গী ছিলেন বন্ধু প্রদীপ রঞ্জন বৈষ্ণব ও সংবাদকর্মী দীপ্ত বৈষ্ণব। প্রদীপের গ্রামের বাড়ি মুছাপুর। তাদের গ্রামের পাশেই ভেড়াডহর। মূলত প্রদীপের আমন্ত্রণেই সেখানে উরিগান দেখতে যাওয়া।

হিন্দুধর্মীয় উৎসব দোলযাত্রাকে উপলক্ষ করে বসন্তকালে গাওয়া হয় উরিগান। এসব গান ‘হোরিগান’ বা ‘দোলের গান’ নামেও পরিচিত। বিশেষত সুনামগঞ্জের শাল্লা, দিরাই ও জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন আর নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় উরিগানের প্রচলন বেশি। এর বাইরেও হাওরাঞ্চলের নানা গ্রামে দোল উৎসবে উরিগান গাওয়া হয়। তবে বৈষ্ণব ও কৈবর্ত সম্প্রদায়ভুক্তদের মধ্যে এ গানের চর্চা তুলনামূলকভাবে বেশি।

কবিগান কিংবা মালজোড়া গানের মতোই উরিগান হলো প্রতিযোগিতামূলক গান। পার্থক্য কেবল এটাই, কবিগান ও মালজোড়াগানের আসর বসে গ্রামীণ মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য, অন্যদিকে উরিগান পরিবেশিত হয় অনেকটা হিন্দুধর্মীয় আচার-রীতির অংশ হিসেবে। অবশ্য আরেকটু পার্থক্য রয়েছে, কবিগান ও মালজোড়া গানে মাত্র দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী পাল্টাপাল্টি গান-কথায় বাহাস জমান, বিপরীতে উরিগানে একেকটি পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কমসে কম কয়েক শ শিল্পী থাকেন! এমন বর্ণিল আর প্রাণবন্ত গানের ধারা সংগীত-সংস্কৃতিতে কমই আছে।

উরিগানকে সংগীতের একটি পরিচ্ছন্ন ধারা বলে মনে করা হয়ে থাকে। এ গানের চারটা পর্ব রয়েছে—ঝুমুরগান, লাসগান, চাইলগান ও চলতিগান। এসব মূলত নারীবর্জিত গানের ধারা। পুরুষেরাই নৃত্যসংবলিত এ গানের শিল্পী। বাড়ির উঠানে কিংবা মাঠে সমবেতভাবে কয়েক শ শিল্পী একই সঙ্গে এ গান পরিবেশন করেন। এক পক্ষের পরিবেশনার পর অপর পক্ষ একই আঙ্গিকের পাল্টা গান পরিবেশন করেন। এভাবেই দিনভর গান শেষে উপস্থিত দর্শনার্থীদের বেশির ভাগের মতামতের ভিত্তিতে একটি পক্ষকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নারীরা উরিগানে অংশ না নিলেও শ্রোতা হিসেবে তাঁদের অংশগ্রহণ ঠিকই থাকে।

২.

ভেড়াডহর গ্রামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের দুপুর হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য গ্রামটিতে পৌঁছার আগেই প্রদীপের সুবাদে প্রাথমিক অনেক তথ্য জানা হয়ে যায়। যেমন ভেড়াডহর গ্রামবাসীর আমন্ত্রণে পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কবিরপুর গ্রামের বাসিন্দারা উরিগান গাইতে ভেড়াডহরে এসেছেন। রীতি অনুযায়ী এক গ্রামের মানুষ আরেক গ্রামের মানুষকে উরিগান গাইতে আমন্ত্রণ জানান। সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট ওই গ্রামের পুরুষদের প্রায় সবাই সাতসকালে গাইতে আসেন।

পরম্পরা অনুযায়ী কবিরপুর গ্রামের মানুষেরাও সেদিন সাতসকালে ঝুমুরগান গাইতে গাইতে নিজেদের গ্রাম থেকে ভেড়াডহর গ্রামে প্রবেশ করেন। ভেড়াডহর গ্রামে ঢুকে ঝুমুরগান গেয়ে তাঁরা মূলত নিজেদের উপস্থিতি জানান দেন। দুপুরে পৌঁছার কারণে সে আনুষ্ঠানিকতা আমাদের দেখা হয়নি, তবে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মানুষের আলাপ থেকে তা ঠিকই জেনে যাই। আমরা যখন গ্রামটিতে পা রাখি, ততক্ষণে লাসগানের পরিবেশনা শুরু হয়েছে।

হিন্দি-বাংলামিশ্রিত লাসগান মগ্ন হয়ে গাইছেন কবিরপুর গ্রামের শিল্পীরা। লাসগান শেষ করেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে কয়েক শ মানুষ সমবেত কণ্ঠে চাইলগান পরিবেশন করেন। চাইলগানে নৃত্যসংবলিত শারীরিক কসরতের পাশাপাশি শিল্পীরা দুই হাত ওপরে তুলে হর্ষধ্বনিসহযোগে লাফানোর মতো করে অনবদ্য এক দৃশ্যের জন্ম দেন। তাঁদের পরিবেশনার পর একই রকমভাবে ভেড়াডহরের গ্রামবাসীও গানে গানে কবিরপুরবাসীকে পাল্টা জবাব দেন।

শিল্পীরা জানান, ভেড়াডহরের লোকেরা উরিগানের আয়োজক হওয়ায় রীতি অনুযায়ী তাঁরা রাইপক্ষ, আর কবিরপুরের মানুষ আমন্ত্রিত দল হওয়ায় তাঁরা শ্যামপক্ষ। সে ধারা মোতাবেকই গান পরিবেশিত হয়।

উরিগান উপলক্ষে এভাবেই সাজানো হয়েছিল দোলবেদি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্মরণসভায় বক্তারা: মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ছিল পঙ্কজ ভট্টাচার্যের
  • জব্বারের বলীখেলার মেলা: রাস্তা থেকে দোকান তুলে দিল পুলিশ, বসবে শুধু মাঠে
  • ভেড়াডহর গ্রামে উরিগানের আসরে