ঋণের অর্থছাড় নিয়ে আলোচনায় ঢাকায় আসছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল
Published: 1st, April 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থছাড়ের বিভিন্ন শর্ত পর্যালোচনা করতে চলতি এপ্রিল মাসে ঢাকায় আসবে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।
এটি হতে যাচ্ছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর আইএমএফের বড় কোনো দলের ঢাকায় দ্বিতীয় সফর।
চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় আইএমএফের কাছ থেকে বাংলাদেশ ২৩৯ কোটি ডলার কিস্তির অর্থ পাবে।
জানা গেছে, ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আইএমএফের একটি দল আগামী ৫ এপ্রিল ঢাকায় আসছে। দলটি ৬ এপ্রিল থেকে টানা দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে। এ সফরে আইএমএফের দলটির সঙ্গে অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠক শেষে ১৭ এপ্রিল প্রেস ব্রিফিং করবে সফররত আইএমএফের দল। দলটি প্রথম দিন ৬ এপ্রিল এবং শেষ দিন ১৭ এপ্রিল বৈঠক করবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর তিনটি কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। একই বছরের ডিসেম্বরে পেয়েছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। ঋণের অর্থছাড় বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে। যদিও সরকার আশা করছে আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইএমএফের ঋণের দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পেতে বাংলাদেশের সামনে মোটাদাগে তিনটি বাধা রয়েছে। এগুলো হলো মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তি রাজস্ব আদায় ও এনবিআরের রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করা।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএমএফকে জানানো হয়েছে, এসব শর্ত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করার পদক্ষেপ ছাড়া বাকি দুটির বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই।
তবে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হচ্ছে। যার কারণে হঠাৎ ডলারের দাম খুব বেশি বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ পদ্ধতিতে ডলারের দাম ১২২ টাকায় স্থিতিশীল আছে।
ঢাকা/হাসান/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ড. ইউনূস ইসরায়েলকে টাকা দিয়েছেন, এ তথ্যটি ভুয়া: প্রেস উইং
‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইসরায়েলকে এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন’, এই তথ্যটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। রোববার চিফ অ্যাডভাইজারস প্রেস উইং ফ্যাক্টস নামের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানানো হয়।
পোস্টে বলা হয়, মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদী নামের এক বক্তা সম্প্রতি কোনো এক বয়ানে দাবি করেছেন ‘প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইসরায়েলকে এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন’। তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা এই বক্তব্যটির প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।
এতে বলা হয়, এই ধরনের মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা মূলত ড. ইউনূস ও তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে চলমান যে সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার, তারই অংশ।
পোস্টে আরও বলা হয়, স্বতন্ত্র ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ আমেরিকার ইসরায়েলকে ১ কোটি ডলারের সহায়তার বিষয়টি নিয়ে সর্ব প্রথম ২০২৩ সালের অক্টোবর বাংলা ইনসাইডার নামক একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে তা আরও কিছু অনলাইন পোর্টাল ও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই দাবিটি ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিয়ে অনুসন্ধান করে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।
‘তাদের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যখন ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামলার ভয়াবহতা শুরু হয়, সে সময়ই বাংলাদেশে প্রচার হতে শুরু করে, ইসরায়েলকে ১০০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।’
ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগের প্রোপাগান্ডা সাইট হিসেবে পরিচিত অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডারের সে বছরের ১৩ অক্টোবরের একটি প্রতিবেদন থেকে আলোচিত দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে। ওই প্রতিবেদনে দাবিটির পক্ষে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতির বিষয়ে বলা হলেও ওই মন্ত্রণালয় থেকে সে সময়ে প্রকাশিত কোনো বিবৃতিতে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই দাবি সংবলিত কোনো বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও রিউমার স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়। তা ছাড়া ইসরায়েলের সাংবাদিক এবং ফ্যাক্ট চেকারও এমন কোনো সহায়তার বিষয়ে অবগত নন বলে রিউমার স্ক্যানারকে জানান। একই সঙ্গে ইউনূস সেন্টারও বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে।
পোস্টের শেষ অংশে বলা হয়, দেশের সব আলেম–ওলামা ও দায়িত্বশীল নাগরিককে বিভ্রান্ত না হয়ে দেশে শান্তি–শৃঙ্খলা বিনষ্টের চেষ্টায় থাকা ব্যক্তিদের অপপ্রচার রুখে দেওয়ার আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।