ঈদুল ফিতরের ছুটিতে নড়াইলের গোবরা থেকে প্রথমবারের মতো পরিবারের সঙ্গে চিড়িয়াখানায় এসেছে নয় বছর বয়সী ঐশিক। ঘুরে ঘুরে পশু-পাখি দেখে খুব খুশি সে। বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে ঐশিক বলে, বাঘ দেখেছি, সিংহ দেখেছি, বানর দেখেছি। সাপও দেখেছি। খুব মজা লাগছে।
 
ঈদের পরদিন মঙ্গলবারও রাজধানীর মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ঈদের দীর্ঘ ছুটিকে উপভোগ্য করে তুলতে হাজার হাজার মানুষ সেখানে ভিড় করছেন। কেউ এসেছেন পরিবারের সঙ্গে। কেউ বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। গাছের ছায়ায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি ও পাখি দেখছেন দর্শনার্থীরা। 

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার সমকালকে জানান, দর্শনার্থীদের ভিড় সোমবার ঈদের দিন থেকেই শুরু হয়েছিল। আজও মানুষ আসছেন। দুদিন মিলিয়ে চিড়িয়াখানায় দেড় থেকে দুই লাখের মতো দর্শনার্থী এসেছেন বলে মনে করছি। যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম হলেও একেবারে খারাপও নয়।

মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায়, সব বয়সের নারী-পুরুষ সেখানে ভিড় করেছেন। অবশ্য দর্শনার্থীদের বড় অংশ শিশু এবং কিশোর-কিশোরীরা। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও আছেন বেশ সংখ্যক। 

সাত সদস্যের পরিবার নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লিপিকা দত্ত। তিনি বলেন, এবার ঈদের ছুটি মিলেছে দীর্ঘ দিন। আগেই ছেলে মেয়ের স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। তাই ছুটি কাটাতে ঢাকায় এসে চিড়িয়াখানা দেখতে এসেছি। নিজের ও বোনের ছেলে-মেয়েরাও সঙ্গে আছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে সবাই মিলে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে ভালোই লাগছে।

১৩ সদস্যের বিশাল দল নিয়ে এসেছেন তরুণ আব্দুল মোতালেব। টিকিট কাটার সময় এই তরুণ বলেন, মূলত বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঈদে বেড়ানোর জন্যই এসেছি। দেখা যাক কেমন কাটে দিনটা।

১২৩ একরের বেশি জায়গা জুড়ে চিড়িয়াখানার অবস্থান। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের পরে পাখির খাঁচা। বক, কালিম পাখি, গ্রেটার ফ্লেমিঙ্গো, পেলিকানসহ বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক 'শ পাখি রয়েছে সেই খাঁচায়। সেখান থেকে বাঁ দিকে এগোলেই বাঘ–সিংহের খাঁচা। শিশুদের অনেকেই বাঘের খাঁচার বাউন্ডারির রেলিং ধরে বাঘ দেখেছে। 

চিড়িয়াখানার বিভিন্ন খাঁচায় আরও আছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি, পাখি ও সাপ। হাতি, গন্ডার, জিরাপ, জেব্রা, জলহস্তী, ময়ূর, সাদা কাকসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পশুপাখি। একটি খাঁচায় বিলুপ্তপ্রায় গাধাও আছে কয়েকটা।

সেসব খাঁচা ঘুরে ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থীরা। এক খাঁচার পাখি-প্রাণী দেখা শেষ হলে অন্যটির উদ্দেশে ছুটছেন তাঁরা। চিড়িয়াখানার পুরো এলাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায় ভরা। তীব্র রোদে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হলে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন অনেক দর্শনার্থী।

তবে চিড়িয়াখানার ভেতরে খাবারের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় একটি ক্যান্টিন থাকলেও সেটা বন্ধ দেখা যায়। আগত দর্শনার্থীরা এখানে এসে প্রবেশ মুখের ক্যান্টিনগুলো থেকে ভরপেট খেয়ে ভেতরে ঢুকছেন। বেশিরভাগই বাসা থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে এসেছেন। অনেকটা পথ হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে পড়লে অথবা ক্ষুধা লাগলেই পরিবার-পরিজনসহ খেতে বসে যাচ্ছেন। বিশ্রামাগার কিংবা ঘাসের মধ্যে চাদর বিছিয়ে গোল হয়ে বসে করছেন খাবারের আয়োজন। এটা যেন ঈদের আনন্দের মধ্যে আরেকটা আনন্দ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র এস ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে না উপসাগরীয় দেশগুলো

ইরানে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানকে নিজেদের বিমানবন্দর ও আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেবে না সৌদি আরব ও উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশ। দেশগুলো এরই মধ্যে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। গত রোববার (৩০ মার্চ) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানে বোমা হামলা চালানোর ঘোষণার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো।

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার ও কুয়েত এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বলে দিয়েছে, ইরানে হামলা চালানোর জন্য তারা নিজেদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না। ইরানে হামলা চালানোর সঙ্গে জড়িত কোনো মার্কিন উড়োজাহাজ এসব দেশ থেকে জ্বালানিও নিতে পারবে না। এমনকি হামলাসংশ্লিষ্ট উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানকে নিজেদের আকাশসীমা বা ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে (এমইই) এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা (উপসাগরীয় অঞ্চলের নেতারা) এতে জড়াতে চাইছেন না।’

উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে না দেওয়াটা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি বড় ধাক্কা। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানের সহায়তাপুষ্ট ইয়েমেনের হুতিদের ওপর ব্যাপক বিমান ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে আলোচনায় বাধ্য করতেই ট্রাম্প প্রশাসন তা করেছে।

উপসাগরীয় অঞ্চলের তেলসমৃদ্ধ মিত্রদেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হামলায় সহযোগিতা না করাটা ইরানকে সাহস জোগাবে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে দর-কষাকষিতে তেহরানকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমইইকে বলেন, হুতিদের ওপর হামলা চালাতে উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করেছে। দেশগুলোর নাম তিনি প্রকাশ করেননি।

হুতিদের ওপর হামলায় সহায়তা পাওয়া উপসাগরীয় মিত্রদের কাছ থেকে ইরানের বেলায়ও একই ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে দেশগুলো জরুরি উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করবে, এমন ধারণা পোষণ করেছিল ওয়াশিংটন।

ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ তৈরিতে’ উপসাগরীয় দেশগুলোর সহায়তা কামনা করছিল ট্রাম্প প্রশাসন। এ জন্য সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক যোগাযোগও শুরু করেছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা গত মার্চে আমিরাত ও সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনে বৈঠক করেছেন।

এই বৈঠকের পরপরই কাতার ও সৌদি আরবে অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে এসব অনুমতি আটকে রাখা হয়েছিল। কাতার এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন কেনার অনুমতি পেয়েছে। সৌদি আরব এমন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার অনুমতি পেয়েছে, যা উড়োজাহাজ থেকে ভূমিতে ছোড়া রকেট প্রতিহত করতে পারবে।

গত সোমবার ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি মে মাসের শুরুর দিকে সৌদি আরব সফরের পরিকল্পনা করছেন। একই সফরে উপসাগরীয় অঞ্চলের আরও কয়েকটি দেশেও সফর করতে পারেন তিনি।

দিয়েগো গার্সিয়ায় মনোযোগ যুক্তরাষ্ট্রের

ইসরায়েলে ২০২২ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে জর্ডান ও উপসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যুদ্ধবিমান ও সামরিক মালবাহী উড়োজাহাজের উপস্থিতি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফ্লাইট চলাচলের হিসাব রাখে এমন একটি উন্মুক্ত সূত্রের তথ্যমতে, উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক মালবাহী উড়োজাহাজের চলাচল আগের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এটা সর্বোচ্চ।

কিন্তু উপসাগরীয় দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার পর ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দিয়েগো গার্সিয়ায় নিজেদের সামরিক ঘাঁটিতে বি-২ বোমারু বিমানের সংখ্যা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।

উপসাগরীয় বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশে হামলা চালানোর জন্য দিয়েগো গার্সিয়া এর আগেও ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কৌশলগত এ দ্বীপটি উপসাগরীয় অঞ্চলের নিজেদের ঘাঁটিগুলোর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে ওয়াশিংটন। ১৯৯০–এর দশকে ইরাকে হামলা চালানোর সময় নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সৌদি আরব। তখন চাগোস দ্বীপপুঞ্জের দিয়েগো গার্সিয়ার নিজেদের ঘাঁটি ব্যবহার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

স্যাটেলাইট তথ্য সরবরাহকারী উন্মুক্ত সোর্স প্ল্যানেট ল্যাব চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে জানিয়েছে, দিয়েগো গার্সিয়ার ঘাঁটিতে তিনটি বি-২ বোমারু বিমান দেখা গেছে।

ইরান থেকে চাগোস দ্বীপপুঞ্জে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটির দূরত্ব ৫ হাজার ৩০০ কিলোমিটারের মতো। বি-২ বোমারু বিমান ট্যাংক ভরে জ্বালানি নিলে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার যেতে পারে। বহন করতে পারে ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমা। এসব বোমা ‘বাংকার দুমড়েমুচড়ে’ দিতে সক্ষম। তাই ধারণা করা হচ্ছে, এসব বোমা দিয়ে ইরানের ভূপৃষ্ঠের গভীরে আঘাত হানা যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ