প্রবাসীদের শূন্য হাতে ফেরা প্রতারণা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন
Published: 1st, April 2025 GMT
একসময় দেশের উত্তরাঞ্চল ছিল মঙ্গাপীড়িত ও দারিদ্র্যকবলিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তরের চেয়ে দক্ষিণের মানুষই বেশি দারিদ্যপীড়িত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনেকেই জীবিকা হারিয়ে দেশের অন্য এলাকায় কিংবা বিদেশে যান ভাগ্যান্বেষণে।
একশ্রেণির দালাল ওত পেতে থাকেন এটাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে। বিদেশে যেতে চাওয়া তরুণদের জানানো হয় যে সেখানে যেতে পারলেই তাঁরা আকর্ষণীয় চাকরি পাবেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটে তার উল্টোটাই। জমিজমা বিক্রি করে বা মোটা অঙ্কের ঋণ করে তাঁরা বিদেশে গিয়েও কাজ পান না। অনেকেই ভ্রমণ ভিসায় সেখানে গিয়ে ‘অবৈধ’ হয়ে যান। লুকিয়ে কোনো কাজ পেলেও তা দিয়ে নিজের চলাই দায়, বাড়িতে টাকা পাঠাবেন কীভাবে। এ কারণে শূন্য হাতেই দেশে ফিরতে হয়।
তৃণমূল অভিবাসীদের সংগঠন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) এবং আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (আইআইইডি) জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দুই জেলা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ১০টি এবং সিলেটের গোয়াইনঘাটের ৯টি ইউনিয়নের মোট ৩৩টি গ্রামে জরিপ করে। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৪৮টি পরিবারের মধ্যে ৭০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশে অভিবাসী পাওয়া গেছে।
কেবল ওই দুই জেলাই নয়, অন্য জেলায়ও প্রতিবছর নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে বিশাল জনগোষ্ঠী। যাঁরা ঋণ করে বিদেশে যান, তাঁরা সেই ঋণ ফেরত দেওয়ার জন্য যেকোনো কাজ করতে বাধ্য হন। এ ধরনের শ্রমিকেরা আধুনিক দাসত্বের শিকার বলে জানিয়েছেন ওই গবেষকেরা। এই দাসত্বের মধ্যে আছে শ্রমিকদের বেতন কম দেওয়া, বেতন বন্ধ রাখা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, চলাফেরায় বিধিনিষেধ দিয়ে রাখা ইত্যাদি। এর যেকোনো একটির শিকার হন ৯৯ শতাংশ শ্রমিক; আর ৫টির বেশি আচরণ মোকাবিলা করেছেন ৮১ শতাংশ শ্রমিক।
ওকাপ ও আইআইইডির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিদেশে অভিবাসনের ক্ষেত্রে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মানুষ গড়ে খরচ করেছেন ৪ লাখ ৬১ হাজার ২২০ টাকা। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ টাকা সংগ্রহ করেছেন জমি বিক্রি করে আর ১৮ শতাংশ নিয়েছেন চড়া সুদের ঋণ। নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়া এসব প্রবাসী কর্মীর কাছে পাসপোর্ট থাকে না। পুলিশের হাতে আটক হয়ে খালি হাতে ফিরে আসেন তাঁরা। গত বছর এভাবে দেশে ফিরে এসেছেন প্রায় ৮৯ হাজার কর্মী। আগের বছর একইভাবে ফিরেছেন ৮০ হাজারের বেশি কর্মী।
দেশে ফেরত আসা প্রবাসী কর্মীদের বিভিন্ন সেবা দিতে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি। এ সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ প্রবাসী কর্মী খালি হাতে ফিরে আসছেন। তাঁদের বাড়িতে ফেরার জন্য এক হাজার টাকা করে যাতায়াত খরচ দেওয়া হয় ব্র্যাকের পক্ষ থেকে।
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিদেশে যাওয়া শ্রমিকদের একাংশ যে প্রতারিত হচ্ছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই প্রতারণা রহিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ আছে বলে মনে হয় না। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কেবল সদুপদেশ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন। এমনকি যেই দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে শ্রমিকেরা সর্বস্বান্ত হন, তাঁদের বিরুদ্ধেও শক্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না। মামলা হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা শাস্তি পান না। অন্তর্বর্তী সরকার প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু এই প্রতারণার জাল ছিন্ন না করতে পারলে কোনো পদক্ষেপই কাজে লাগবে না। প্রবাসী কর্মীদের আর যাতে শূন্য হাতে ফিরে আসতে না হয়, সে জন্য এখনই কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পদক ষ প প রব স সরক র জলব য়
এছাড়াও পড়ুন:
দেশের বিভিন্ন স্থানে ফ্যাসিস্টদের গলার স্বর শুনতে পাওয়া যাচ্ছে: রিজভী
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্টদের গলার স্বর শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, দেশের জনগণের পাচার করা টাকা পতিত স্বৈরাচারের ‘টনিক’ হিসেবে কাজ করছে। শেখ হাসিনার একটি ভরসা হচ্ছে পাচার করা টাকা। সেই টাকার জোরে দেশে নানা ঘটনা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাচ্ছে। একটি প্রবাদ আছে ‘টাকায় কথা কয়’ শেখ হাসিনা এই প্রবাদটি কাজে লাগাতে চাচ্ছে।
অপরাধী আওয়ামী নেতাদের জামাই আদরে আদালতে হাজির করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘গত ১৫ বছর বিভিন্ন পাতানো মামলায় বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা ও আলেম-ওলামাকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আদালতে তোলা হয়েছিল। আর এখন কারাগারে ভয়াবহ অপরাধী আওয়ামী নেতাদের জামাই আদরে আদালতে হাজির করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাসিনার অলিগার্করা ‘শর্ষের ভিতর ভূত’ হয়ে থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ভারতে পলাতক হাসিনা একের পর এক হুংকার দিচ্ছেন। জুলাই-আগস্টের শাজাহান খান গংরা আদালতে এসে সরকারকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। আদালতকে ভেংচি কাটছেন। পুলিশকে থোড়াই কেয়ার করছেন। হাসিনার দোসররা আসামি হয়েও আদালতে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন, তা মূলত অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘অকার্যকর’ প্রমাণের এক গভীর চক্রান্ত।
রিজভী বলেন, দীর্ঘ রক্তঝরা আন্দোলনের অব্যবহিত পর থেকে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তির প্রত্যাশার প্রতিফলন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি থাকলেও গণতন্ত্রকে মজবুত কাঠামো তৈরির প্রস্তুতির অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসর, খুনের আসামিরা প্রকাশ্যে আদালতে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচার চেয়ে বক্তব্য রাখেন। হাসিনার গণহত্যাকারী বাহিনীর নেতারা দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের ভয়াবহ অপশাসনের জন্য ক্ষমা চাওয়া তো দূরে থাক, উল্টো আদালতে হুমকি দিচ্ছেন। হাজারো শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আরও বড় ফ্যাসিস্ট হয়ে ফিরে আসার হুমকি দিচ্ছেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, মাফিয়া অর্থনীতির জোরে শেখ হাসিনা দেশের যে সম্পদ পাচার করেছেন, সেই সম্পদের মুনাফা দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চান। পতিত ফ্যাসিবাদের বড় বড় দোসররা অনেকেই প্রশাসনের হেফাজতে ছিলেন, কিন্তু তাঁরা কীভাবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন? নিশ্চয়ই এখনো প্রশাসনের মধ্যে অনেকেই ঘাপটি মেরে আছেন, ফ্যাসিবাদের খুনি দোসরদের সহযোগীরা।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।