এবার রাগবি বিশ্বকাপও চায় সৌদি আরব
Published: 1st, April 2025 GMT
২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ সফলভাবেই আয়োজন করেছে কাতার। ২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপের স্বাগতিক সৌদি আরব। সংযুক্ত আরব আমিরাতেরও টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, বিশ্ব ট্রায়াথলন চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপের মতো বৈশ্বিক ক্রীড়া আসর আয়োজনের অভিজ্ঞতা আছে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই তিন দেশ মিলে এবার রাগবি বিশ্বকাপ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। এ জন্য তারা ২০৩৫ অথবা ২০৩৯ বিশ্বকাপের জন্য বিড করবে। এশিয়া মহাদেশের রাগবি নিয়ন্ত্রক সংস্থা এশিয়া রাগবিও সৌদি, কাতার ও আরব আমিরাতকে আয়োজন স্বত্ব পাইয়ে দিতে জোরালো সমর্থন জানাবে।
উপসাগরীয় দেশ তিনটির দাবি, তাদের সুযোগ দেওয়া হলে ‘রাগবি ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ইভেন্ট’ আয়োজন করে দেখাবে।
এশিয়া মহাদেশে এখন পর্যন্ত একবারই রাগবি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯ সালে নবম আসর হয়েছিল জাপানে। ২০২৭ সালে একাদশ আসর বসবে অস্ট্রেলিয়ায়, ২০৩১ দ্বাদশ আসরের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র।
২০৩৫ বিশ্বকাপের বিডিং প্রক্রিয়া আগামী দুই বছরের মধ্যে শুরু হবে। সেই আসরের আয়োজক হতে এরই মধ্যে তদবির শুরু করে দিয়েছে ইতালি ও স্পেন। শেষ পর্যন্ত এই দুই দেশের কেউ ২০৩৫ বিশ্বকাপের আয়োজন স্বত্ব পেয়ে গেলে ২০৩৯ বিশ্বকাপের জন্য বিড করবে সৌদি, কাতার ও আরব আমিরাত।
তবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ তিনটির কারোরই ‘রাগবি খেলুড়ে জাতি’ হিসেবে পরিচিতি নেই। এমনকি তারা কখনো বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারেনি। ফুটবল বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে স্বাগতিক দেশ সরাসরি মূল পর্বে খেলার সুযোগ পেলেও রাগবি বিশ্বকাপের ক্ষেত্রে তা নয়। এখানে আয়োজন স্বত্ব পাওয়া দেশকেও বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসতে হয়। এখন পর্যন্ত যে দশবার রাগবি বিশ্বকাপ হয়েছে, প্রতিবারই স্বাগতিক দেশ বাছাই পর্বের বাধা টপকেছে।
কিন্তু সৌদি, কাতার ও আরব আমিরাত আদৌ বাছাই পেরিয়ে আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই বিশ্ব রাগবির নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও ফিফার পথ অনুসরণ করতে হতে পারে। অর্থাৎ, নিয়ম বদলে তিন স্বাগতিক দেশকে সরাসরি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ দেওয়া।
এশিয়া রাগবিও এ ধরনের সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করছে। সংস্থাটি মনে করে, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া অথবা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া চাইলেই ২০৩৯ বিশ্বকাপের যৌথ আয়োজক হতে বিড করতে পারে। কিন্তু তাদের পছন্দের জায়গা মধ্যপ্রাচ্য।
রাগবি বিশ্বকাপ সাধারণত সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে হয়ে থাকে। কিন্তু মাধ্যপ্রাচ্যে সেই সময়ের আবহাওয়া তীব্র গরম হওয়ায় সৌদি, কাতার ও আরব আমিরাতে ডিসেম্বরে বিশ্বকাপ হতে পারে। এমনকি ফাইনাল চলে যেতে পারে পরের বছর জানুয়ারিতে। ২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপও বছরের শেষ ভাগে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
রাগবি বিশ্বকাপ আয়োজনের বিডে সফল হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এশিয়া রাগবির সভাপতি কাইস আল দালাই। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের উপসাগরীয় অঞ্চলের নেতাদের বিশ্বাস, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। আমি এখনই দেখতে পাচ্ছি, ২০৩৫ সালেই এটা ঘটতে পারে (মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশ যৌথ আয়োজক হতে পারে)।’
ফুটবল বিশ্বকাপের উদাহরণ টেনে আল দালাই আরও বলেছেন, ‘আমি একাধিক দেশে (রাগবি বিশ্বকাপ) আয়োজন মডেলের পক্ষে। ফিফা ২০০২ বিশ্বকাপ জাপান ও কোরিয়া আয়োজন করে দেখিয়েছে, ২০২৬ বিশ্বকাপ মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় হতে যাচ্ছে, এরপর ২০৩০ বিশ্বকাপ হবে তিন মহাদেশে। তাহলে রাগবি কেন নয়?’
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কেন রাগবি বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে, তা সবার জানা। মানবাধিকার ইস্যুতে বহির্বিশ্বে তাদের ভাবমূর্তি ভালো নয়। বিশেষ করে সৌদি আরব সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে দাবি করে আসছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা, যা দেশটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।
ভাবমূর্তি ফেরাতেই সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্রীড়াঙ্গনে অঢেল অর্থ বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন, যেটিকে বলা হচ্ছে ‘স্পোর্টস ওয়াশিং’। ফুটবল, গলফ, বক্সিং, টেনিস, রেসিংসহ আরও অনেক খেলায় বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি।
সর্বশেষ আইপিএলের মেগা নিলামও সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইপিএলকে টক্কর দিতে ৬ হাজার কোটি টাকার টি–টোয়েন্টি লিগ আনারও পরিকল্পনা করছে। শোনা যাচ্ছে, দেশটি ২০৩৬ অলিম্পিকের আয়োজক হতেও বিড করবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ বক প র স ব গত ক
এছাড়াও পড়ুন:
ইলন মাস্কের প্রতারণা মামলা খারিজের আবেদন খারিজ আদালতে
বিপদ যেন হাতছানি দিয়েই ডাকছে বিশ্বের এক নম্বর বিলিয়নিয়ার তথা শীর্ষ অতি ধনী ইলন মাস্ককে। ইতিমধ্যে তাঁর বৈদ্যুতিক গাড়ির কোম্পানি টেসলার শেয়ারের দাম এবং স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কোম্পানি স্টারলিংক ব্যবসায় মার খেতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা একটি প্রতারণা মামলা খারিজের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিচারক বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে হওয়া প্রতারণা মামলা খারিজ করার আবেদন খারিজ করেন।
ওই মামলায় দাবি করা হয়েছে যে ইলন মাস্ক সাবেক সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারের (বর্তমানে এক্স) শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। অভিযোগ হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিটিতে প্রাথমিক বিনিয়োগের তথ্য প্রকাশ করতে মাস্ক লম্বা সময় নিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ম্যানহাটনের জেলা বিচারক অ্যান্ড্রু কার্টারকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, শেয়ারহোল্ডাররা যথাযথভাবে দাবি করেছেন যে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শীর্ষস্থানীয় উপদেষ্টা ইলন মাস্ক নিয়ন্ত্রক সংস্থায় এ-সংক্রান্ত তথ্য যেভাবে দিয়েছেন, তা সঠিক ছিল না। তিনি টুইটারের ভবিষ্যৎ নিয়েও বিভ্রান্তিকর টুইট করেছেন এবং ‘নীরবে’ তাঁর টুইটার অংশীদারত্ব করায়ত্ত করেছেন। এসব কৌশলের মাধ্যমে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে জালিয়াতি করেন।
বিচারক অ্যান্ড্রু কার্টার অবশ্য পদক্ষেপ নেওয়াসংক্রান্ত কিছু দাবি খারিজ করেছেন। তিনি মামলার উপযুক্ততা নিয়ে রায় দেননি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (এসইসি) দেরিতে তথ্য প্রকাশের জন্য ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে।
ইলন মাস্কের আইনজীবীরা অবশ্য এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে রয়টার্সের মন্তব্য করার অনুরোধে কোনো সাড়া দেননি।
এই মামলার বাদীদের নেতৃত্বে রয়েছে ওকলাহোমা ফায়ারফাইটার্স পেনশন অ্যান্ড রিটায়ারমেন্ট সিস্টেম। বাদীরা বলেছেন, ইলন মাস্ক ২০২২ সালের ২৪ মার্চ যে টুইটারের ৫ শতাংশ শেয়ার কিনেছেন, সে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে তিনি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) নির্ধারিত সময়সীমা উপেক্ষা করেছেন। তিনি এসইসিতে ফাইলিং তথা নথিপত্র জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ৯ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার কেনার তথ্য প্রকাশ করার আগে অতিরিক্ত ১১ দিন অপেক্ষা করেছেন। বাদীদের অভিযোগ, সময় ক্ষেপণ করে মাস্ক ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করেন। এতে শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি হয়েছে। কারণ, তাঁরা কৃত্রিমভাবে দাম কমানোর ফাঁদে পড়ে টুইটারের শেয়ার বিক্রি করেছেন। ২০২২ সালের অক্টোবরে মাস্ক ৪৪ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে টুইটার পুরোপুরি কিনে নেন।
৪৩ পৃষ্ঠার সিদ্ধান্তে বিচারক অ্যান্ড্রু কার্টার বলেছেন, ইলন মাস্কের ৯ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ারের তথ্য প্রকাশকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে দেখা যেতে পারে।
অ্যান্ড্রু কার্টার বলেন, শেয়ারহোল্ডাররা ২০২২ সালের ২৬ মার্চ দুটি টুইটের জন্যও মামলা করতে পারেন, যেখানে মাস্ক বলেছিলেন যে তিনি টুইটারের একজন প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি করার কথা গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তাভাবনা করছেন, এবং টুইটার কিনে তার পাখির লোগোটিকে কুকুরে পরিণত করবেন, ‘হা হা হা’।
মাস্কের আইনজীবীরা বলেছেন, টুইটগুলো প্রতারণার উদ্দেশ্যে করেননি। কিন্তু বিচারক কার্টার বাদীদের যুক্তিকে ‘অন্তত আকর্ষণীয়’ বলে মনে করেন।
মাস্ক তাঁর ৯ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার কেনার তথ্য প্রকাশ করার পর ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল টুইটারের শেয়ার ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এদিকে সম্প্রতি এক খবরে বলা হয়েছে, বিপদেই পড়ে গেছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর একের পর এক ঝামেলা লেগেই আছে তাঁর জীবনে। টেসলার শেয়ারের দাম কমছে, তাতে কমছে নিজের সম্পদমূল্য। আবার বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে মানুষ বিক্ষোভও করছে। পাশাপাশি এবার মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের অন্তর্ভুক্ত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কোম্পানি স্টারলিংকের ব্যবসাও মার খেতে শুরু করেছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।