দীর্ঘ এক মাস পর্যটকশূন্য থাকার পর পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এখন পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। ঈদের দিন সোমবার (৩১ মার্চ) বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত সৈকতে লাখো পর্যটক এসেছেন ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকরা সৈকতে আনন্দ-উল্লাসে মেতেছেন। সমুদ্রের নোনা জলে গা ভাসিয়ে হৈ-হুল্লোড় করছেন। অনেকে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তুলছেন, সেলফি তুলছেন স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। কেউ কেউ বিভিন্ন বাহনে চড়ে সৈকতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ঘুরে দেখছেন। কেউবা বেঞ্চে বসে সমুদ্রের তীরে আছড়ে পড়া ঢেউ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। সৈকতে বিরাজ করছে ঈদ উৎসবের আমেজ। 

ক্র্যাব আইল্যান্ড, চর গঙ্গামতি, গঙ্গামতি, ঝাউবন, তিন নদীর মোহনা, লেম্বুর বন ও শুটকি পল্লিসহ সব পর্যটন স্পটে আছে পর্যটকদের বিপুল উপস্থিতি। বিক্রি বেড়েছে পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। 

অধিকাংশ হোটেল-মোটেল আগেই বুকিং হয়েছে। বিপুল পরিমাণ পর্যটকের আগমনে উচ্ছ্বসিত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ১৬টি পেশার সঙ্গে ব্যক্তিরা। পর্যটকদের নিরাপত্তায় তৎপর আছে ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও নৌ পুলিশের সদস্যরা।

ঢাকার জিনজিরা থেকে আসা পর্যটক তৈয়ব হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেছেন, মঙ্গলবার সকালে পরিবার-পরিজন নিয়ে কুয়াকাটায় এসেছি। হোটেলে পৌঁছে রুমে ওঠার আগেই রিসিপশনে ব্যাগ রেখে সৈকতে এসেছি। স্নিগ্ধ সকালে দখিনা হাওয়া ও সৈকতের ছোট ছোট ঢেউ আমাদের মুগ্ধ করেছে। জোয়ারের সময় সবাই একসঙ্গে সাঁতার কাটব। 

সভারের ফুলবাড়িয়া থেকে আসা শাহেদ-ইয়াসমিন দম্পত্তি বলেন, সকাল থেকে কুয়াকাটার আকাশ অনেকটা মেঘলা। মেঘলা আকাশে দখিনা হাওয়া এবং সৈকতে ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে পড়া, এ এক দারুণ অনুভূতি। ঈদের ছুটির প্রথম দিনে আমাদের কুয়াকাটা ভ্রমণ স্বার্থক হয়েছে।

সৈকতলাগোয়া প্রসাধন সামগ্রীর দোকানি সুলতান আকন বলেন, গতকাল সৈকতে আশপাশের এলাকার পর্যটক ছিল। বিক্রি মোটামুটি ভালোই হয়েছে। আশা করছি, আজ আরো বেশি পর্যটক আসবে এবং আমরা বিগত এক মাসের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব।

সৈকতে ভ্রাম্যমাণ আচার বিক্রেতা মোসলেম মিয়া বলেন, রমজানে কুয়াকাটায় কোনো পর্যটক ছিল না। আমি গতকাল বিকেলে আমার ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়ে সৈকতে নেমেছি। রাতে বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। অনেক পর্যটক আসছে। আশা করছি, আজ আরো বেশি পর্যটকের আগমন ঘটবে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের সহাকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নিশ্ছিদ্র নিরপত্তা দিতে আমরা কাজ করছি। সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য, থানা পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। আশা করছি, পর্যটকরা নিরাপদে কুয়াকাটা ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।

ঢাকা/ইমরান/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল, পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে কোনো কক্ষ খালি নেই

ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে লাখো পর্যটকের ঢল নেমেছে। পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও কটেজের কোনো কক্ষ এখন খালি নেই।

ঈদের ছুটির তৃতীয় দিন আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা গেছে, দুই কিলোমিটার সৈকতে সমাবেত হয়েছেন অন্তত ৪০ হাজার পর্যটক। দক্ষিণ পাশের কলাতলী এবং উত্তর পাশের সিগাল ও লাবণী পয়েন্টের আরও তিন কিলোমিটার সৈকতে জড়ো হয়েছেন ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ।

ট্যুরিস্ট পুলিশ ও হোটেল মালিকেরা বলছেন, বিকেল পাঁচটা নাগাদ পাঁচ কিলোমিটার সৈকতে পর্যটকের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে যাবে। আগের দিন মঙ্গলবার সৈকতে নেমেছিলেন ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি পর্যটক।

আরও পড়ুনপা ফেলার জায়গা নেই কক্সবাজারে ০১ এপ্রিল ২০২৫

হোটেলমালিকেরা বলছেন, আগামী শনিবার পর্যন্ত ঈদের ছুটির পাঁচ দিনে সৈকতে অন্তত ৭ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটবে। ইতিমধ্যে পাঁচ শতাধিক হোটেল–রিসোর্ট গেস্টহাউসের ৯৮ শতাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। এসব হোটেল-গেস্টহাউস–রিসোর্টগুলোর দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার। এত পর্যটকদের সামাল দিতে হিমশিম অবস্থা।

সমুদ্রে নেমে কোনো পর্যটক নিখোঁজ হয়ে গেলে উদ্ধার তৎপরতার জন্য নিয়োজিত আছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সি সেফ লাইফ গার্ডের ২৭ জন কর্মী। বালুচরে স্থাপিত কয়েকটি চৌকিতে বসে তাঁরা সমুদ্রে গোসলে নামা পর্যটকদের ওপর নজর রাখছেন। ভাটার সময় নির্দেশনা অমান্য করে যাঁরা সমুদ্রে গোসলে নামেন, বাঁশি বাজিয়ে তাঁদের তুলে আনার চেষ্টা চালান। তাতে খুব একটা সারা মিলে না জানিয়ে সি সেফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ বলেন, একঘেয়ে ব্যস্ততম শহুরে জীবন ছেড়ে মানুষ প্রিয়জনদের নিয়ে সৈকতে ছুটে আসেন মনের প্রশান্তির জন্য। কিন্তু একটুখানি অসতর্কতা কিংবা ভুলের কারণে অনেকের কাছে খনিকের এই প্রশান্তি সারা জীবনের কান্না হয়ে দাঁড়ায়।

সমুদ্রে গোসল সেরে হাজারো পর্যটক ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক টমটম, অটোরিকশা কিংবা খোলা জিপগাড়িতে চড়ে ছুটে যান ৮০ কিলোমিটারের কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের দিকে। মেরিন ড্রাইভের দুই পাশে আছে দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি, আকাশে ওড়ার প্যারাসেইলিং, হিমছড়ি ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী ও পাটোয়ারটেক এবং সর্বশেষ প্রান্তে টেকনাফ জিরো পয়েন্ট সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক। দিনের বেলায় মেরিন ড্রাইভ নিরাপদ হলেও রাতে কয়েকটি স্থানে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আবার কেউ কেউ রাতের বেলায় সৈকতের পাশের ঝাউবাগানে ঢুকে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। নিরিবিলি পরিবেশের ঝাউবাগানে ছিনতাইকারীরা তৎপর থাকে।

অনেকে দরিয়ারনগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটোয়ারটেক ও টেকনাফ সৈকতে গিয়ে গোসলে নামেন। গোসলের সময় পাথরস্তূপ কিংবা গুপ্তখালে আটকা পড়লে উদ্ধারের কেউ নেই সেখানে। নিরাপত্তার জন্য সেখানে রাতের বেলায় পুলিশের টহলও থাকে না।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পর্যটকদের সচেতন করতে সৈকতসহ বিভিন্ন স্থানে সতর্কতা ও নির্দেশনামূলক একাধিক সাইনবোর্ড টাঙানো আছে। চালু আছে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি করা মুঠোফোন অ্যাপ ‘ভ্রমণিক’। নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত, ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য পর্যটকসহ সর্বসাধারণ অ্যাপটি কাজে লাগাতে পারেন। অ্যাপে হোটেলকক্ষ, লোকাল যানবাহন, গণপরিবহনের টিকিট ক্রয়সহ যাবতীয় তথ্য পাওয়া যায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল, পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে কোনো কক্ষ খালি নেই
  • ঈদের ছুটিতে পর্যটকে মুখর রাঙামাটি
  • ঈদের ছুটিতে রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড়
  • ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়
  • সাতছড়ি উদ্যানে পর্যটকের ঢল 
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লুকানো রত্ন সুনামগঞ্জের লাকমাছড়া
  • ঈদের ছুটিতে পর্যটক আসতে শুরু করেছে কক্সবাজারে
  • কুয়াকাটার স্নিগ্ধ সৈতকে ঈদ আনন্দের ঢেউ
  • পর্যটনে সাতছড়ি উদ্যানের হাতছানি