বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে অন্যতম বান্দরবান। আঁকাবাঁকা পথ, উঁচুনিচু সবুজ পাহাড়, মেঘ, নদী, জলপ্রপাত আর ঝর্ণার মিলনে গঠিত এই জেলা ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য যেন এক স্বর্গরাজ্য। ভ্রমণ পিপাসুদের মনের সব খোরাক যেন এই জেলাতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পাহাড়কন্যা খ্যাত এই জেলায় রয়েছে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

ভ্রমণপিপাসুদের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ও মুগ্ধ করে দেবতাখুম। বান্দরবান রোয়াংছড়ির দেবতাখুম এ ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের হতে পারে প্রধান আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। নিরাপত্তাজনিত কারণে দেবতাখুম দীর্ঘ গত দুই বছর পর্যটক ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা ছিল। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটক ভ্রমণের দুয়ার খুলে দেওয়া হয়। 

দেবতাখুম ছাড়াও পর্যটকদের জন্য নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, গোল্ডেন টেম্পল, শৈলপ্রপাত ঝর্ণা, প্রান্তিক লেক, চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি, রোয়াংছড়ি উপজেলার দেবতাখুম, লামা উপজেলার মিরিঞ্জা ভ্যালি এবং আলীকদম উপজেলার মারাইতং পাহাড় ও আলী সুরঙ্গ পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণের কোনো বাধানিষেধ নেই। 

এসব পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। তবে, নানান কারণে বান্দরবানের থানচি ও রুমা দুই উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে।

রোয়াংছড়ি দেবতাখুম 
বান্দরবানে ছোট-বড় অনেক খুম রয়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো রোয়াংছড়ি দেবতাখুম। এর অন্যতম। এখানে সহজেই ভ্রমণ করা যায়। এই খুমের কিছু অংশ প্রায় ৭০ থেকে ৯০ ফুট গভীর, যা একে আরও রহস্যময় ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। খুমের দুপাশে সুউচ্চ পাথুরে পাহাড় দিয়ে ঘেরা, যার কারণে বেশিরভাগ জায়গায় সরাসরি সূর্যের আলো পৌঁছায় না। ফলে ভেলার মাধ্যমে যতই গভীরে যাওয়া হয়, ততই শীতল অনুভূতি পাওয়া যায়। বাঁশের ভেলায় করে দেবতাখুমের ভেতরে প্রবেশের সময় পর্যটকরা এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা উপভোগ করেন।

কীভাবে যাবেন

বান্দরবান বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদের গাড়ি, জীপগাড়ি, মাহিন্দ্রা বা সিএনজি যোগে রোয়াংছড়ি কচ্ছপতলী বাজার পর্যন্ত যাওয়া যায়, যা বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে। কচ্ছপতলী বাজারে পৌঁছে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি জমা দিয় অনুমতি নিতে হয়, এরপর স্থানীয় গাইডের সহায়তায় দেবতাখুম যাওয়া যায়।

কচ্ছপতলী বাজার থেকে ঝিরিরপথ ও পাহাড়িপথ ধরে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন দেবতাখুমে, যেখানে অপেক্ষা করছে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

নীলাচল
বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে টাইগার পাড়ায় অবস্থিত এক অপূর্ব পর্যটনস্থল। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই স্থানকে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে। চারপাশে সারি সারি পাহাড়, সবুজের মোড়কে মোড়ানো উপত্যকা আর বিস্তীর্ণ আকাশ। সব মিলিয়ে এক স্বপ্নিল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এখানে।

নীলাচল থেকে পুরো বান্দরবান শহরকে দেখা যায় ছবির মতো। পাহাড়ের বুক চিরে আঁকা-বাঁকা পথ, পাহাড়িদের ছিমছাম বসতি আর কোথাও দূর দিগন্তে ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলা এসবই এক মোহনীয় সৌন্দর্যের আবহ তৈরি করে। পর্যটকরা এখানে এসে পাখির চোখে পাহাড়ের ভাঁজে লুকিয়ে থাকা প্রকৃতির অপার রূপ উপভোগ করতে পারেন। মনোমুগ্ধকর এই স্থান প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক স্বর্গসম অনুভূতি নিয়ে আসে।

গোল্ডেন টেম্পল 
বান্দরবান শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে কানাইপাড়া এলাকায় অবস্থিত চমৎকার একটি স্থাপনা হলো গোল্ডেন টেম্পল। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাসনালয়, পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও এটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

মিয়ানমারের মন্দিরগুলোর আদলে নির্মিত এই বৌদ্ধ মন্দিরটি কারুকার্যের অনন্য নিদর্শন। ছোট্ট পাহাড়ের ওপর নির্মিত মন্দিরটির প্রধান আকর্ষণ হলো ৫৭ ফুট উচ্চতার বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি, যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।

প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক এখানে আসেন এর স্থাপত্যশৈলী ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। পাহাড়ঘেরা শান্ত পরিবেশ আর সোনালি রঙের গম্বুজ মন্দিরটিকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এটি এখন পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিত।

মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স 
চারিদিকে উঁচুনিচু পাহাড়, আর তার মাঝখানে টলটলে স্বচ্ছ পানির লেক প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য যেন এখানে লুকিয়ে আছে। সবুজ পাহাড়, ঝলমলে লেকের পানি আর মেঘের আনাগোনা মিলিয়ে মেঘলা হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বর্গ। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে হেঁটে ঘুরে বেড়ানো, কিংবা লেকের স্বচ্ছ জলে নৌকাভ্রমণ প্রতিটি মুহূর্তে অপেক্ষা করছে নতুন এক রোমাঞ্চ।

লেকের উপর দিয়ে চলে গেছে দুটি আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতু, যা পর্যটকদের জন্য বাড়িয়ে দেয় বাড়তি উত্তেজনা। এছাড়া মেঘলায় চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, প্যাডেল বোট ও ক্যাবল কারের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির সৌন্দর্য আর আধুনিক বিনোদনের অপূর্ব সমন্বয়ে মেঘলা হয়ে উঠেছে পর্যটকদের জন্য এক স্বপ্নময় গন্তব্য।

কীভাবে যাবেন 
নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র ও গোল্ডেন টেম্পল বান্দরবান-চট্টগ্রাম কেরানীরহাট সড়কে হওয়ায় জেলা শহরের বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদের গাড়ি, জিপগাড়ি, মাহিন্দ্রা, সিএনজি যোগে যেতে পারবেন। অথবা কেরাণীহাটগামী লোকাল বাসেও যাওয়া যায়।

প্রান্তিক লেক 
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর প্রান্তিক লেক ৬৫ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত, যা পাহাড় ও অরণ্যে ঘেরা এক মনোমুগ্ধকর পর্যটনস্থান। ২০১৩ সালে সরকার এই লেককে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে।

লেকের কেন্দ্রস্থলে প্রায় ২৫ একর আয়তনের একটি প্রাকৃতিক জলাশয় রয়েছে, যার চারপাশ ঘিরে আছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি। পর্যটকদের জন্য এখানে উন্মুক্ত মঞ্চ, পিকনিক স্পট, বিশ্রামাগার, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ট্রি-টপ অ্যাডভেঞ্চার, জিপ-লাইন ট্রলি (জিপলাইনার), কিডস কর্নার ও সৌরবিদ্যুৎ চালিত বোটের ব্যবস্থা রয়েছে।

প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে লেক থেকে মাছ ধরা সম্ভব। এছাড়া, রাত্রিযাপন করতে চাইলে তাঁবু টাঙিয়ে ক্যাম্পিং করার সুযোগও রয়েছে, যা ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ।


কীভাবে যাবেন 
বান্দরবান জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে হলুদিয়া হয়ে প্রান্তিক লেকে যেতে হয়। শহরের বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদের গাড়ি, জিপ, মাহিন্দ্রা, সিএনজি দিয়ে যেতে পারবেন। 

চিম্বুক পাহাড় 
বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত চিম্বুক, যা বান্দরবান জেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চান্দের গাড়িতে চিম্বুক ভ্রমণের সময় চারপাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের। চিম্বুকের শীর্ষ থেকে নিচে তাকালে মেঘের ভেলা যেন হাতছোঁয়া দূরত্বে মনে হয়, যা পর্যটকদের অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা দেয়।

একই সড়কে অবস্থিত হওয়ায় দর্শনার্থীরা সাধারণত চিম্বুক, নীলগিরি, মিলনছড়ি, এবং শৈলপ্রপাত ঝর্ণা একসঙ্গে দেখার জন্য গাড়ি ভাড়া করে থাকেন। চিম্বুক থেকে নীলগিরি যাওয়ার পথে টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট ও ডাবল হ্যান্ড ভিউ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে মনোমুগ্ধকর মেঘের মিতালি উপভোগ করা যায়।

শৈলপ্রপাত 
মিলনছড়ির এই জলপ্রপাতটি থানচি বাস স্টেশন থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ঝর্ণার স্বচ্ছ ও ঠান্ডা পানিতে প্রচুর পাথর দেখা যায়, যা প্রকৃতির অপূর্ব শোভা বৃদ্ধি করে। এটি স্থানীয়দের জন্য বিশুদ্ধ পানির একটি প্রধান উৎস।

জলপ্রপাতের বাইরে একটি ছোট্ট বাজার রয়েছে, যেখানে পর্যটকরা বম সম্প্রদায়ের তৈরি তাঁতের পণ্যসহ স্থানীয় নারী-পুরুষদের উৎপাদিত আনারস, পেয়ারা, জাম্বুরাসহ বিভিন্ন পাহাড়ি ফল কিনতে পারেন। সেখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংগ্রামী জীবনও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়।

বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণ চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরির পথে এই শৈলপ্রপাতটি পড়েছে, তাই নীলগিরি ভ্রমণের সময় মাঝপথে গাড়ি থামিয়ে এই সুন্দর ঝর্ণাটি উপভোগ করা যায়।

নীলগিরি 
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ফুট উঁচু, বাংলাদেশের অন্যতম একটি উঁচু শৃঙ্গ নীলগিরি। পুরো এলাকা মেঘে ঢেকে থাকার কারণে, দর্শনার্থীরা এটি ‘মেঘের দেশ’ হিসেবে অভিহিত করেন। নীলগিরির সূর্যাস্তটি যে কোনো পর্যটককেই অভিভূত করতে পারে। এখানকার মনোরম হেলিপ্যাডও অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। নীলগিরির এই সুন্দর পর্যটন এলাকায় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেড।

কীভাবে যাবেন
বান্দরবান জেলা শহর থেকে চাঁদের গাড়ি, মাহিন্দ্রা, জিপ, সিএনজি দিয়ে যাওয়া যায়। তবে দুই থেকে চারজন হলে কম খরচে যেতে চাইলে সিএনজি বা মাহিন্দ্রা নিতে পারেন। একটা চাঁদের গাড়িতে প্রায় ১২ জন পর্যটক ভ্রমণে যেতে পারে। সাধারণত একই সড়কে হওয়ায় পর্যটকরা চিম্বুক, নীলগিরি, মিলনছড়ি, এবং শৈলপ্রপাত ঝর্ণা একসঙ্গে দেখার জন্য গাড়ি ভাড়া করে থাকেন।

লামা মিরিঞ্জা ভ্যালি
মিরিঞ্জা ভ্যালি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি উপভোগ করা। সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়, সেখানে ইচ্ছে করলেই ছোঁয়া যায় মেঘ। প্রকৃতি এই এলাকাটিকে সাজিয়েছে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে, যেন আকাশটিও অনেক কাছাকাছি। রাতে, শহরের আলো সৌন্দর্যকে আরো বৈচিত্র্যময় করে তোলে।

মিরিঞ্জা ভ্যালিতে পর্যটকদের জন্য পাহাড়িদের জুম ঘরের আদলে তৈরি অনেক জুমঘর বা মাচাংঘরে রাত্রিযাপন করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া, তাঁবু টাঙিয়েও রাত্রিযাপন করা সম্ভব। মিরিঞ্জা ভ্যালি থেকে সূর্যোদয়ের সময় মেঘের মিতালির দৃশ্য যে কোনো দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে।

কীভাবে যাবেন 
বান্দরবান শহর থেকে ৮৬ কিলোমিটার ও কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলা হতে ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। লামা উপজেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে। মিরিঞ্জা ভ্যালি, আলীকদম মারাইতং পাহাড় ও আলী গুহা একই সড়কে হওয়ায় এইসব পর্যটন কেন্দ্রে যেতে হলে কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে থেকেই যেতে হয়। চট্টগ্রাম অথবা ঢাকা থেকে চকরিয়ায় নেমে আলীকদম ও লামাগামী বাসে করে যেতে হয়। সরাসরি ঢাকা থেকে আলীকদম বাস হলে লামা মিরিঞ্জা ভ্যালি এলাকায় নামলেই দেখা যাবে লামা মিরিঞ্জা ভ্যালি।

লামা মিরিঞ্জা ভ্যালিতে গেলে কী খাবেন? এ বিষয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। ব্যাক্তি মালিকানায় মিরিঞ্জা ভ্যালিতে ছোট ছোট মাচাংঘরের সাথে একটি ছোট রেস্টুরেন্টও রয়েছে। ওখান থেকে খেয়ে নিতে পারবেন। অবথা কী খাবেন অর্ডার করলে প্রয়োজনে রুমে এসে খাবার দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। 

আলী গুহা বা আলী সুরঙ্গ 
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা সদর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরেই মাতামুহুরী-তৈন খাল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা দু’টি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত আলী গুহা। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই গুহাটি ঝিরি থেকে প্রায় ৫০ ফুট উপরে অবস্থিত। তৈন খাল থেকে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মতো ঝিরির পথে হাঁটলেই দেখা যাবে আলী গুহা। এখানে মোট তিনটি গুহা রয়েছে, এর মধ্যে দ্বিতীয় গুহায় এক প্রান্তে ঢুকলে অন্য প্রান্তে বের হওয়া যায়। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার সময় একটি অনন্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া যায়। প্রকৃতির এই গুহাকে ঘিরে রহস্যের কোনো শেষ নেই।

কীভাবে যাবেন 
আলীকদম বাজার অথবা পান বাজার থেকে টমটম বা অটোরিক্সা করে গেলে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগবে তৈন খাল ব্রিজ পৌঁছাতে। এরপর স্থানীয় গাইডের সাহায্যে ১০-২০ মিনিট ঝিরির পথ ধরে হাঁটতে দেখা যাবে আলী সুড়ঙ্গ। আলী সুড়ঙ্গ দেখতে হাতে বেশি সময় নিয়েও যেতে হয় না। হাতে দুই ঘণ্টা সময় থাকলেই আলীকদম বাজার থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। 

মারাইতং পাহাড় 
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মারাইতং জাদি পাহাড়টি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬৬৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এই পাহাড়ের চূড়া থেকে যতদূর চোখ যায়, শুধু পাহাড় আর পাহাড়ের বিস্তৃতি দেখা যায়। পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ম্রো, ত্রিপুরা এবং মারমা সম্প্রদায়ের জনবসতি। নিচে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী, যা দৃশ্যমান পরিবেশে একটি অতিরিক্ত সৌন্দর্য যোগ করে।

মারাইতং পাহাড়ে বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাস, যেমন ত্রিপুরা, মারমা এবং ম্রো। পাহাড়ের নিচে থাকে মারমারা আর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে ম্রোদের পাড়া, যেখানে তাদের বাড়ি পাহাড়ের ঢালে স্থাপন করা। এখানে পর্যটকরা সাধারণত তাঁবু টাঙ্গিয়ে রাত কাটিয়ে সূর্যোদয়ের সময় মেঘের লুকোচুরি দেখতে আসেন। এই পাহাড়ের একটি বিশেষত্ব হলো যে, এখানে একসাথে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই দেখা যায়। সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতও বেশ চমৎকারভাবে দৃশ্যমান হয়, যা এই অঞ্চলের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়।

কীভাবে যাবেন 
ঢাকা আলীকদম সরাসরি বাসে এসে আবাসিক নামক এলাকায় নামতে হবে অথবা আলীকদম বাসস্ট্যান্ড থেকে টমটম, চাঁদের গাড়ি আবাসিক নামক এলাকায় আসতে হবে। এরপর পাহাড়ে সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উঠতে হবে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ। ট্রেইলের শুরু থেকে একদম চূড়া পর্যন্ত পুরোটাই খাড়া রাস্তা। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছাতে মোটামুটি ১ থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে। 

মারাইতং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে কী খাবো এমন চিন্তা সবারই থাকে। মারাইতং পাহাড়ের চূড়ায় একটি ছোট্ট দোকান রয়েছে। ওই দোকানদারের সাথে কথা বলে ঠিক করে নিবেন রাতে কী খাবেন, সকালে কী খাবেন। অথবা আবাসিক এলাকায় কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে তাদের সাথে কথা বলে ঠিক করে নিবে কী খাবেন। রাত্রিযাপনের জন্য তাঁবু বলে রাখতে হবে। এর জন্য জনপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া গুণতে হবে।

ঢাকা/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ ল ড ন ট ম পল দ র জন য এক ব ন দরব ন র র স ন দর য য় অবস থ ত ম গ ধ কর ভ রমণ র উপজ ল র ক ভ রমণ সব জ র স বর গ প রব ন এল ক য় র একট স এনজ র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত

পুরো রমজান মাসে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছিল সুনসান নীরবতা। বিশ্বের দীর্ঘতম এ সমুদ্রসৈকত ছিল অনেকটা ফাঁকা। ছিল না কোনো কোলাহল, হৈ–হুল্লোড়। হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টগুলো কক্ষভাড়ায় ছাড় দিয়েও অতিথি পায়নি। বন্ধ ছিল পর্যটকনির্ভর রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য ব্যবসা।

সেই নীরবতা ভেঙেছে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে। ঈদের দ্বিতীয় দিনে বদলে গেছে সেই দৃশ্য। সাগরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। প্রচণ্ড গরমে শরীর জুড়িয়ে নিতে অনেকেই নেমে পড়েছেন সাগরের পানিতে।

ঈদের দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার সৈকতে এসেছেন অন্তত ৬০ হাজার পর্যটক। সাগরে স্থানীয় আরও ৪০-৪৫ হাজার মানুষ নামেন। সব মিলিয়ে আজ সাগরের লোনাজলে নেমে গোসল করেন প্রায় এক লাখ মানুষ।

সৈকতে ঘোরাঘুরি শেষে বিপুলসংখ্যক পর্যটক ছুটছেন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর, হিমছড়ির ঝরণা, পাথুরে সৈকত ইনানী ও পাটোয়ারটেক, টেকনাফ সৈকত, মাথিনকূপ, রামুর বৌদ্ধপল্লি, চকরিয়ার ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক ও মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির। ঈদের তৃতীয় দিন আগামীকাল বুধবার সৈকত ভ্রমণে আরও অন্তত এক লাখ পর্যটক আসবেন বলে আশা করছেন কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলের মালিকেরা।

আজ সকাল সাড়ে ৯টায় সৈকতে সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচ থেকে ছয় হাজার পর্যটক সমুদ্রের কোমরসমান লোনাজলে নেমে শরীর ভেজাচ্ছেন। কেউ দ্রুতগতির জলযান জেডক্সিতে চড়ে গভীর সমুদ্রে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ টিউবে গা ভাসিয়ে সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মেলানোর চেষ্টা করছেন।

স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সৈকতে গোসলে নামেন ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম। তারপর বালুচরে উঠে এসে কিটকটে (চেয়ার-ছাতা) বসে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। আব্দুল আলীম বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে সমুদ্রের লোনাজলে শরীর ভেজানোর মজাই আলাদা। পানিতে ভেসে ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালি দারুণ আনন্দের।’ সকালে উড়োজাহাজে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছে সৈকত তীরের একটি তারকা হোটেলে ওঠেন আব্দুল আলীম। তারপর দ্রুত সৈকতে নেমে পড়েন। আগামীকাল সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে ঘুরে বেড়াবেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে উড়োজাহাজে ঢাকায় ফিরে যাবেন।

একইভাবে সুগন্ধা পয়েন্টের পাশাপাশি উত্তর দিকের সিগাল, লাবণী এবং দক্ষিণ দিকের কলাতলীর চার কিলোমিটারের সৈকতেও মানুষ গিজ গিজ করছে। সমুদ্রে গোসলের পাশাপাশি পর্যটকেরা বালুচরে ঘোড়ার পিঠে চড়ে কিংবা বিচবাইকে উঠে সৈকতের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মুঠোফোনে ছবি তুলছেন ইচ্ছেমতো। অনেকে ভিডিওচিত্র ধারণ করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিকমাধ্যমে।

হোটেল-মোটেল মালিকেরা জানান, রমজান মাসের আগের চার মাসে বিপুলসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার ঘুরতে এসেছেন। প্রতি সপ্তাহে গড়ে আড়াই থেকে তিন লাখ পর্যটক এসেছিলেন। আর গত বছর ঈদুল ফিতরের ছুটিতে অন্তত ১০ লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছিল। এবার অনেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনলাইন বা ফোনে যোগাযোগ করে কক্ষ বুকিং দিয়েছেন। ১ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছে। কক্সবাজার শহর ও মেরিন ড্রাইভের পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘বাইরের পর্যটকেরা ঈদের পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার থেকে কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। পর্যটকেরা ভ্রমণে এসে যাতে সমস্যার সম্মুখীন না হন; এজন্য অনলাইনে হোটেল বুকিং দিয়ে এলেই সবচেয়ে ভালো।’

কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ ইকবাল বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের আগেই রোজার মাসে বন্ধ থাকা পাঁচ শতাধিক রেস্তোরাঁ খোলা হয়েছে। হাজার হাজার পর্যটক রেস্তোরাঁয় সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার সেরেছেন। সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে খাবারের অতিরিক্ত মূল্য আদায় হচ্ছে কি না, তা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। খাবার টেবিলে মূল্যতালিকা রাখা থাকে। পর্যটকেরা তালিকা দেখেই যেন খাবারের অর্ডার দেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটকদের অতিরিক্ত চাপ বাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সমুদ্রসৈকত ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে সার্বক্ষণিক ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তৎপর রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকেরা এসে যাতে ভালো সেবা পান এর জন্য পর্যটনসংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ, অন্যান্য ক্ষেত্রে হয়রানিরোধ এবং নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সৈকতে ও আশপাশের বিনোদনকেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। কোনো অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বান্দরবানের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের ঢল 
  • কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ঢল, পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে কোনো কক্ষ খালি নেই
  • পাহাড়-নদী-ঝরনার খাগড়াছড়িতে পর্যটকের ভিড়, খালি নেই হোটেল-মোটেল
  • ঈদের ছুটিতে রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড়
  • সাতছড়ি উদ্যানে পর্যটকের ঢল 
  • পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত
  • ঈদের ছুটিতে মুখর কক্সবাজার সৈকত
  • খাগড়াছড়ির বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ভিড়
  • ঈদের ছুটিতে সিলেটে ১০ লক্ষাধিক পর্যটক সমাগমের সম্ভাবনা