শহীদ রাসেলের ছোট্ট মেয়ে এখনও বাবার ফিরে আসার অপেক্ষায়
Published: 1st, April 2025 GMT
রাজধানীর গুলিস্তানে একটি জুতার কারখানার কাজ করতেন জহিরুল ইসলাম রাসেল। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। এরপর অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে রাসেলের বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর ছোট্ট মেয়ে জুমা। রাসেল না থাকায় ঈদের আনন্দও নেই পরিবারটিতে।
রাসেলের মা মোরশেদা বেগম জানান, রাসেলের সাড়ে তিন বছরের মেয়ে জুমা এখনও অপেক্ষায় আছে তার বাবা ফিরে আসবে। তার জন্য ঈদের নতুন জামা নিয়ে আসবে, সেই জামা পরে সে বাবার সঙ্গে ঈদগাহে যাবে। অথচ অবুঝ জুমা জানে না যে, তার এই অপেক্ষার প্রহর ফুরাবার নয়। কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাসেলের মা।
ঈদের দিন সোমবার দুপুরে শহীদ জহিরুল ইসলাম রাসেলের পরিবারের খোঁজ-খবর নিতে তার বাড়িতে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে রাসেলের বাড়িতে গেলে এমন হৃদয়বিদারক মুহূর্তের সৃস্টি হয় সেখানে।
রাসেলের শিশু মেয়ে জুমাকে কোলে নিয়ে বেশকিছু সময় বসে থাকেন হাসনাত। রাসেলের মা মোর্শেদা বেগম ও স্ত্রী জান্নাত ফেরদৌসের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলার সময় তাদের হাতে নগদ অর্থ সাহায্য তুলে দেন হাসনাত।
জহিরুল ইসলাম রাসেল মহেশপুর গ্রামের মৃত শাহ আলম সরকারের একমাত্র ছেলে। সে ছৈয়দপুর কামিল মাদ্রাসার ফাযিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। বাবার অবর্তমানে সংসারের খরচ জোগাতে ঢাকায় একটি জুতার কারখানায় কাজ করতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট সকালে গুলিস্তান এলাকায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি। সোমবার হাসনাত আব্দুল্লাহ তার নিজ গ্রাম উপজেলার গোপালনগরে ঈদুল ফিতরের নামাজের পর শহীদ রাসেলের বাড়িতে যান।
এর আগে তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং ঈদগাহের পাশে গোপালনগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জিয়ারত ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। নামাজের পূর্বে হাসনাত আবদুল্লাহ সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
এসময় হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের পর নতুন বাংলাদেশে আমার এলাকাবাসীর সঙ্গে ঈদুল ফিতরের নামায আদায় করতে পেরে ভাল লাগছে। গ্রামের মানুষ যে আমাকে এতো ভালোবাসেন ঈদগাহে না আসলে বুঝতে পারতাম না। জুলাই বিপ্লবে সারাদেশের মতো এই দেবিদ্বারেও অসংখ্য মানুষ ফ্যাসিস্টদের হাতে নির্মমভাবে খুনের শিকার হয়েছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। সরকার এ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করতে কাজ করছে।’
তিনি ঐক্য ও সাম্যের দেবিদ্বার গড়ে তোলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। একইসঙ্গে তিনি একটি ফ্যাসিবাদ মুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এসময় হাসনাত আবদুল্লাহর সঙ্গে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসন থেকে হাসনাত আবদুল্লাহর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মিয়ানমারে মৃত বেড়ে ২০৫৬, ধ্বংসস্তূপ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার
মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২০০০ পেরিয়ে গেছে। সোমবার দেশটির সামরিক সরকার জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৫৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ভূমিকম্পে আহত হয়েছে আরও ৩ হাজার ৯০০। এখনও নিখোঁজ ২৭০ জন। দেশটিতে ভূমিকম্পের প্রায় ৬০ ঘণ্টার পর ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার সাগাইং অঞ্চলে ধসে পড়া একটি স্কুল ভবন থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে দেশটির ফায়ার সার্ভিস। এই বিপর্যয়ের পর দেশটিতে এক সপ্তাহের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। ৬ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। খবর- বিবিসি
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুনজানান, মান্দালয় অঞ্চলে ২৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সেখানে ভূমিকম্পে মসজিদ, সেতু এবং বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিকল হওয়ায় অনেক অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যাচ্ছে না।
গত শুক্রবার মিয়ানমারে শক্তিশালী ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে দেশটির সরকারকে। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে উদ্ধারকারীরা যখন জীবিতদের সন্ধান করছেন তখন জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে, যা ত্রাণ প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে।
সাহায্যকারী সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের ঘটনায় মিয়ানমারের রাস্তাঘাটে লাশের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিল সহায়তা চেয়ে আবেদন জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ভূমিকম্পে রাস্তাঘাট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর সঙ্গে সামরিক সরকার, বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং সশস্ত্র যোদ্ধাদের মধ্যে চলা গৃহযুদ্ধের ফলে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারে কাজ করা সাহায্য সংস্থাগুলোর পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। তবে বিরোধী ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট জোর দিয়ে বলছে, যেকোনো সহায়তা যেন স্বাধীনভাবে ও স্থানীয় নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। মিয়ানমারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর মান্দালয়ের ঐতিহাসিক অনেক ভবন এই ভূমিকম্পে মাটিতে মিশে গেছে। উদ্ধারকর্মীরা খালি হাতে ধ্বংসস্তুূপ ঘেঁটে দেখছেন।
২০২১ সাল থেকে মিয়ানমার শাসন করা সামরিক জান্তা দেশটির সাগাইং, মান্দালয়, মাগওয়ে, বাগো, ইস্টার শান রাজ্য এবং নেপিডো অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। দেশটির দুই বড় শহর, মান্দালয় ও ইয়াংগুনের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।