বৈশাখীতে ‘ট্রাক ড্রাইভার’, নাগরিকে ‘রাজু গুন্ডা’
Published: 1st, April 2025 GMT
ঈদ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করেছে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। একক নাটক, চলচ্চিত্র, ধারাবাহিক নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, গানের অনুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠানসহ নানা বৈচিত্র্যময় আয়োজনে সাজানো হয়েছে চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান। আজ ঈদের দ্বিতীয় দিন মাছারাঙা টিভি, বৈশাখী টেলিভিশন এবং নাগরিক টেলিভিশন কী কী আয়োজন থাকছে, তা নিয়ে বিনোদনের বিশেষ এই আয়োজন।
মাছরাঙা টেলিভিশন
সকাল ৭টায় ‘রাঙা সকাল’। অতিথি: চিত্রনায়িকা শাবনাজ। বেলা ১টা ৩০ মিনিটে ‘সিসিমপুর’। বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে নাটক ‘কিসমত’। অভিনয়ে ইয়াশ রোহান, তানজিন তিশা। সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে ধারাবাহিক ‘বিয়ের জ্বালা’। অভিনয়ে শামীম হাসান সরকার, সেমন্তী সৌমি, নাদিয়া মীম। রাত ৮টায় নাটক ‘বজরা’। অভিনয়ে তৌসিফ, কেয়া পায়েল। রাত ৯টা ১০ মিনিটে ধারাবাহিক ‘মধুমালা’। অভিনয়ে চঞ্চল চৌধুরী, মৌসুমী হামিদ। রাত ১০টা ২০ মিনিটে নাটক ‘হাউকাউ’। অভিনয়ে মুশফিক আর ফারহান, সাফা কবির। রাত ১১টা ৩০ মিনিটে টেলিফিল্ম ‘বান্টির বিয়ে’। অভিনয়ে জোভান, কেয়া পায়েল।
বৈশাখী টেলিভিশন
সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ‘বৈশাখীর সকালের গান’। অতিথি: কণ্ঠশিল্পী শবনম প্রিয়াংকা। বেলা ১১টায় ‘গানে গানে ঈদ আনন্দ’। অতিথি: কণ্ঠশিল্পী সাব্বির ও লুইপা। বেলা ১টায় ‘শুধু সিনেমার গান’। বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে ধারাবাহিক ‘ব্ল্যাক মানি’। অভিনয়ে কাজী হায়াৎ, ওমর সানী, ডন, অমিত হাসান, হাসান জাহাঙ্গীর। বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে ধারাবাহিক ‘মানি লোকের মান’। অভিনয়ে জাহের আলভী, ফারজানা আহসান মিহি, আবদুল্লাহ রানা। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ধারাবাহিক ‘শাশুড়ির বিয়ে’। অভিনয়ে মীর সাব্বির, আ খ ম হাসান, ফারজানা আহসান মিহি, শিল্পী সরকার অপু, মাসুম বাশার, শেলী আহসান। সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে ধারাবাহিক ‘লন্ডনি জামাই’। অভিনয়ে রাশেদ সীমান্ত, অহনা রহমান, আহসানুল হক মিনু।
রাত ৮টা ১৫ মিনিটে একক নাটক ‘প্রেম অথবা মায়া’। অভিনয়ে খায়রুল বাসার, সাফা কবির। রাত ৯টা ২০ মিনিটে ধারাবাহিক ‘ট্রাক ড্রাইভার’। অভিনয়ে শহীদুজ্জামান সেলিম, ফারহানা মিলি, ফারজানা ছবি। রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে একক নাটক ‘স্বপ্নের শেষ ঠিকানা’। অভিনয়ে জোভান, তানজিন তিশা। রাত ১১টা ৪০ মিনিটে মেগা নাটক ‘সাহেব বিবি গোলাম’। অভিনয়ে ইরফান সাজ্জাদ, নাবিলা ইসলাম।
নাগরিক টেলিভিশন
সকাল ৬টায় সংগীতানুষ্ঠান ‘গানের মেলা’। শিল্পী: কনা। সকাল ৮টায় ‘রাজু গুন্ডা’। রাত ৮টায় নাটক ‘শেষের বিন্দু’। অভিনয়ে ইরফান সাজ্জাদ, সাদিয়া আয়মান। রাত ৯টা ৩০ মিনিটে লাইভ সংগীতানুষ্ঠান ‘বাংলা বাউল’। শিল্পী: দীপ্র ও দুর্জয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০ ম ন ট ৩০ ম ন ট ক ন টক আহস ন
এছাড়াও পড়ুন:
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলবেন কি এটা কোন ‘জাস্টিস’
২২ এপ্রিল যশোরে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ‘মব জাস্টিস আর অ্যালাউ (অনুমোদন) করা যাবে না’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম, দেরিতে হলেও সরকারের হুঁশ ফিরে এসেছে এবং মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে তারা কঠোর অবস্থান নেবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যাকে ‘মব জাস্টিস’ বলছেন, সেটা আসলে মব ভায়োলেন্স। রাস্তাঘাটে ঘরে বাইরে কোনো অজুহাত পেলেই একধরনের মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারী, দুর্বলের ওপর সবলের সহিংসতা। কবি যেমন বলেছেন, বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে কিন্তু মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত মানুষগুলো এতটাই অসহায় যে থানা পুলিশ কিংবা আদালতেও যেতে ভয় পান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই ঘোষণার পরও মব ভায়োলেন্স বন্ধ হয়নি। বিভিন্ন স্থানে নারী ও সংখ্যালঘুরা সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সেদিন দেখলাম, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একদল লোক বিদ্যালয়ে ঢুকে প্রধান শিক্ষককে হেনস্তা করছেন এবং তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারতেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেই সভায় যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলেছেন, সেটি হলো ১৫ হাজার বোতল ফেনসিডিল ছেড়ে দিয়ে ৫০০ বোতল ‘রিকভার’ (উদ্ধার) দেখানো। কারা দেখাচ্ছেন? কারা মাদকদ্রব্য উদ্ধার করছেন? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কেউ পুলিশের লোক, কেউবা র্যাবের।
আওয়ামী লীগ সরকার মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখিয়েছিল, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বহু মানুষ হত্যা করেছিল। কিন্তু তারপরও দেশ মাদক ও সন্ত্রাসের নিরাপদ ভূমি হওয়ার কারণ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওই বক্তব্য। তাঁরা ১৫ হাজার বোতল ফেনসিডিল ছেড়ে দিয়ে ৫০০ বোতল ধরেছেন। অর্থাৎ ৩০ ভাগের একভাগ ধরেছেন, ২৯ ভাগই বাজারজাত হয়েছে।
গত সোমবার বরিশালের আগৈলঝাড়ায় র্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানের সময় সিয়াম মোল্লা নামে কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হয়। তার আহত রাকিব মোল্লা এখন বরিশালে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। র্যাবের দাবি অনুযায়ী তাঁরা নাকি দুর্ধর্ষ মাদকব্যবসায়ী। র্যাব সদস্যরা যেই মাদকবিরোধী অভিযানে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, অমনি তাদের ওপর হামলা করেছেন ওই দুই শিশু কিশোর। তারা শিশু কিশোরই।
জন্মনিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী নিহত সিয়ামের জন্ম ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি। মৃত্যুর দিন ২১ এপ্রিল তার বয়স হয়েছিল ১৭ বছর ১ মাস ২৮ দিন। আর রাকিবের জন্ম ২০০৭ সালের ১ আগস্ট। সেই হিসাবে তার বয়স ১৭ বছর ৮ মাস ২০ দিন। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দুজনই শিশু-কিশোর।
অবশ্য র্যাব অভিযানের ‘ন্যায্যতা’ প্রমাণ করতে নিহত সিয়াম মোল্লার বয়স ২২ ও আহত রাকিব মোল্লার বয়স ২১ বছর বলে উল্লেখ করেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, ওই দুই শিক্ষার্থী মাদক ব্যবসায়ী কিংবা মাদকাসক্ত ছিল না।
হত্যার প্রতিবাদে উজিরপুরের সাহেবের হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা। নিহত সিয়াম এই বিদ্যালয় থেকে গতবার এসএসসি পাস করে একই এলাকার আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। আর রাকিব মোল্লা এ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
সিয়াম মাদক ব্যবসা করত কি করত না, সেটি প্রমাণের পথ র্যাবই বন্ধ করে দিয়েছে। মৃত মানুষ তো আর সাক্ষ্য দিতে পারবে না। র্যাবের দাবি যদি সত্যও ধরে নেওয়া হয়, তাহলেও কি কলেজ পড়ুয়াকে এক কিশোরকে এভাবে গুলি করে হত্যা করা যায়? সিয়ামের মৃত্যুর পর তার বাবা রিপন মোল্লা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ‘আপনারা কী করবেন? আমার পোলারে ফিরাইয়্যা দেতে পারবেন? লেইখ্যা কী অইবে, আমি আল্লার কাছে বিচার দিলাম।’র্যাবের দাবি, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরার জন্য র্যাব সদস্যরা অভিযানে গেলে সেখানে মাদক ব্যবসায়ী ১০-১১ জন মিলে তাঁদের ওপর হামলা করেন। এরপর আত্মরক্ষার্থে র্যাব সদস্যরা গুলি করতে বাধ্য হন। তাদের এ সাফাই বক্তব্য আওয়ামী লীগ আমলে বন্দুকযুদ্ধে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার কথাই মনে করিয়ে দেয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে র্যাব ও পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি করার কথা বলে বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মারাকে জায়েজ করতে চায়।
গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিদায় নিলেও কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে মানুষ হত্যা বন্ধ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সেই একই আত্মরক্ষার্থে গুলি কিংবা বন্দুকযুদ্ধের বয়ান দেওয়া হয়।
পুলিশের ভাষ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় আগৈলঝাড়ার রত্নপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়ায় সাদাপোশাকে র্যাব-৮-এর মাদকবিরোধী অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়ে সিয়াম মোল্লা নিহত হয়। তাঁর খালাতো ভাই আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই মারা গেছে। এতে যতটা না কষ্ট পাচ্ছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি, তাদের দুজনকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দেওয়ায়। দয়া করে এটি আপনারা গণমাধ্যমে তুলে ধরুন। তারা শিশু-কিশোর, মাদকাসক্ত ছিল না।’
র্যাবের অভিযানে গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত ও এক শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুরে উজিরপুর উপজেলার সাহেবেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে