পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশের জনগণ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সোমবার (৩১ মার্চ) রাতে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

শুভেচ্ছা বার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেন, “পবিত্র রমজান মাসের সমাপ্তির প্রাক্কালে, আমি আপনাকে এবং বাংলাদেশের জনগণকে ঈদুল ফিতরের আনন্দময় উৎসব উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।”

তিনি বলেন, “আমি পবিত্র এই মাসে, ভারতের ২০ কোটি মুসলিম ধর্মাবলম্বী বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুসলমান ভাই-বোনদের সঙ্গে রোজা ও ইবাদতে অতিবাহিত করেছি।”

শুভেচ্ছা বার্তায় নরেন্দ্র মোদি আরো বলেন, “ঈদুল ফিতরের এই আনন্দময় মুহূর্ত উদযাপন, আত্মবিশ্লেষণ, কৃতজ্ঞতা ও ঐক্যের প্রতীক। এটি আমাদের করুণা, উদারতা ও সংহতির মূল্যবোধের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা আমাদের জাতিগুলোকে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে আমাদের পরস্পরকে সংযুক্ত করে। এই পবিত্র দিন উপলক্ষে, আমরা সমগ্র বিশ্বের মানুষের শান্তি, সম্প্রীতি, সুস্বাস্থ্য ও সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করি। আমাদের দেশগুলোর মধ্যকার বন্ধুত্বের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হোক—এই প্রত্যাশা করি।” 

ঢাকা/হাসান/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ভেড়াডহর গ্রামে উরিগানের আসরে

এক পক্ষে প্রায় ৫০০ মানুষ। আরেক পক্ষে অন্তত ৭০০। চলছে পাল্টাপাল্টি গানের লড়াই। তা দেখতে জড়ো হয়েছেন আরও হাজারো নারী-পুরুষ। মধ্যচৈত্রের চামড়াপোড়া গরমে শিল্পী-দর্শনার্থী সবাই দরদর করে ঘামছেন। কিন্তু বিরামহীনভাবে দুই পক্ষই পাল্লা দিয়ে গান গাইছে। কোনো পক্ষই অন্য পক্ষকে ‘বিনা যুদ্ধে’ ‘সূচ্যগ্র মেদিনী’ ছাড় দিতে নারাজ!

ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন গানের লড়াই চলে সুনামগঞ্জের হাওর-অধ্যুষিত শাল্লা উপজেলার ভেড়াডহর গ্রামের নতুন হাটিতে। সেদিন ছিল ১৪৩১ বঙ্গাব্দের ১৪ চৈত্র। খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে ২৮ মার্চ ২০২৫। খুব সকালে সিলেট থেকে রওনা দিই। সঙ্গী ছিলেন বন্ধু প্রদীপ রঞ্জন বৈষ্ণব ও সংবাদকর্মী দীপ্ত বৈষ্ণব। প্রদীপের গ্রামের বাড়ি মুছাপুর। তাদের গ্রামের পাশেই ভেড়াডহর। মূলত প্রদীপের আমন্ত্রণেই সেখানে উরিগান দেখতে যাওয়া।

হিন্দুধর্মীয় উৎসব দোলযাত্রাকে উপলক্ষ করে বসন্তকালে গাওয়া হয় উরিগান। এসব গান ‘হোরিগান’ বা ‘দোলের গান’ নামেও পরিচিত। বিশেষত সুনামগঞ্জের শাল্লা, দিরাই ও জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জের বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইন আর নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় উরিগানের প্রচলন বেশি। এর বাইরেও হাওরাঞ্চলের নানা গ্রামে দোল উৎসবে উরিগান গাওয়া হয়। তবে বৈষ্ণব ও কৈবর্ত সম্প্রদায়ভুক্তদের মধ্যে এ গানের চর্চা তুলনামূলকভাবে বেশি।

কবিগান কিংবা মালজোড়া গানের মতোই উরিগান হলো প্রতিযোগিতামূলক গান। পার্থক্য কেবল এটাই, কবিগান ও মালজোড়াগানের আসর বসে গ্রামীণ মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য, অন্যদিকে উরিগান পরিবেশিত হয় অনেকটা হিন্দুধর্মীয় আচার-রীতির অংশ হিসেবে। অবশ্য আরেকটু পার্থক্য রয়েছে, কবিগান ও মালজোড়া গানে মাত্র দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পী পাল্টাপাল্টি গান-কথায় বাহাস জমান, বিপরীতে উরিগানে একেকটি পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কমসে কম কয়েক শ শিল্পী থাকেন! এমন বর্ণিল আর প্রাণবন্ত গানের ধারা সংগীত-সংস্কৃতিতে কমই আছে।

উরিগানকে সংগীতের একটি পরিচ্ছন্ন ধারা বলে মনে করা হয়ে থাকে। এ গানের চারটা পর্ব রয়েছে—ঝুমুরগান, লাসগান, চাইলগান ও চলতিগান। এসব মূলত নারীবর্জিত গানের ধারা। পুরুষেরাই নৃত্যসংবলিত এ গানের শিল্পী। বাড়ির উঠানে কিংবা মাঠে সমবেতভাবে কয়েক শ শিল্পী একই সঙ্গে এ গান পরিবেশন করেন। এক পক্ষের পরিবেশনার পর অপর পক্ষ একই আঙ্গিকের পাল্টা গান পরিবেশন করেন। এভাবেই দিনভর গান শেষে উপস্থিত দর্শনার্থীদের বেশির ভাগের মতামতের ভিত্তিতে একটি পক্ষকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নারীরা উরিগানে অংশ না নিলেও শ্রোতা হিসেবে তাঁদের অংশগ্রহণ ঠিকই থাকে।

২.

ভেড়াডহর গ্রামে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমাদের দুপুর হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য গ্রামটিতে পৌঁছার আগেই প্রদীপের সুবাদে প্রাথমিক অনেক তথ্য জানা হয়ে যায়। যেমন ভেড়াডহর গ্রামবাসীর আমন্ত্রণে পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার কবিরপুর গ্রামের বাসিন্দারা উরিগান গাইতে ভেড়াডহরে এসেছেন। রীতি অনুযায়ী এক গ্রামের মানুষ আরেক গ্রামের মানুষকে উরিগান গাইতে আমন্ত্রণ জানান। সে আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট ওই গ্রামের পুরুষদের প্রায় সবাই সাতসকালে গাইতে আসেন।

পরম্পরা অনুযায়ী কবিরপুর গ্রামের মানুষেরাও সেদিন সাতসকালে ঝুমুরগান গাইতে গাইতে নিজেদের গ্রাম থেকে ভেড়াডহর গ্রামে প্রবেশ করেন। ভেড়াডহর গ্রামে ঢুকে ঝুমুরগান গেয়ে তাঁরা মূলত নিজেদের উপস্থিতি জানান দেন। দুপুরে পৌঁছার কারণে সে আনুষ্ঠানিকতা আমাদের দেখা হয়নি, তবে পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মানুষের আলাপ থেকে তা ঠিকই জেনে যাই। আমরা যখন গ্রামটিতে পা রাখি, ততক্ষণে লাসগানের পরিবেশনা শুরু হয়েছে।

হিন্দি-বাংলামিশ্রিত লাসগান মগ্ন হয়ে গাইছেন কবিরপুর গ্রামের শিল্পীরা। লাসগান শেষ করেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ঘুরে ঘুরে কয়েক শ মানুষ সমবেত কণ্ঠে চাইলগান পরিবেশন করেন। চাইলগানে নৃত্যসংবলিত শারীরিক কসরতের পাশাপাশি শিল্পীরা দুই হাত ওপরে তুলে হর্ষধ্বনিসহযোগে লাফানোর মতো করে অনবদ্য এক দৃশ্যের জন্ম দেন। তাঁদের পরিবেশনার পর একই রকমভাবে ভেড়াডহরের গ্রামবাসীও গানে গানে কবিরপুরবাসীকে পাল্টা জবাব দেন।

শিল্পীরা জানান, ভেড়াডহরের লোকেরা উরিগানের আয়োজক হওয়ায় রীতি অনুযায়ী তাঁরা রাইপক্ষ, আর কবিরপুরের মানুষ আমন্ত্রিত দল হওয়ায় তাঁরা শ্যামপক্ষ। সে ধারা মোতাবেকই গান পরিবেশিত হয়।

উরিগান উপলক্ষে এভাবেই সাজানো হয়েছিল দোলবেদি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভেড়াডহর গ্রামে উরিগানের আসরে
  • পরিদর্শনে গিয়ে মাগুরার প্রাথমিক বিদ্যালয়টিকে যে কারণে ‘মডেল’ বললেন উপদেষ্টা
  • আড়াইহাজারে কৃষকলীগের ঝটিকা মিছিল, ভিডিও ভাইরাল
  • ইস্টার সানডে আজ, মৃত্যুকে জয় করে এই দিনে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন যিশু
  • ‘ইস্টার সানডে’ আজ, মৃত্যুকে জয় করে এই দিনে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন যিশু