একটা সময় লিওনেল মেসিকে ভাবা হতো ডিয়েগো ম্যারাডোনার উত্তরসূরি। মেসি তাঁর ফুটবলজাদু দিয়ে সেটা দারুণভাবে প্রমাণও করেছেন। এরপর শুরু উঠতি ফুটবলারদের ‘নতুন মেসি’ তকমা দেওয়া। গত দুই দশকে ‘নতুন মেসি’ তকমা পাওয়া এক ডজন ফুটবলারের পরিচয় হয় ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে। কেউ খেলার ধরনে, কেউ দেহের গড়নে, আবার কেউ ফুটবলশৈলী দিয়ে ঝলক দেখিয়ে এই তকমা পেয়েছেন; কিন্তু এঁদের সবাই শুরুতে ঝলক দেখিয়ে কেমন যেন নিভে গেছেন! সেই নতুন মেসিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আটজনের কার কী হাল, সেটা জানিয়েছে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস।
বোইয়ান কিরকিচ
স্পেনের লিনিওলা শহরে জন্ম বোইয়ান কিরকিচের। ১৯৯৯ সালে বার্সার যুব দলে নাম লিখিয়েই চমক দেখান। তাঁর ড্রিবলিংয়ে অনেকটাই মেসির ছাপ ছিল। সে সময় স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমগুলোয় তাঁকে নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল। বয়সভিত্তিক দলে গোলের পসরা সাজান তরুণ কিরকিচ। সেখান থেকে বার্সার মূল দলে দ্রুতই জায়গা করে নেন। সময়টা ২০০৭–০৮ মৌসুম। ১৭ বছর ১৯ দিনের কিরকিচ ওসাসুনার বিপক্ষে নেমেই ভাঙেন মেসির রেকর্ড। সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে বার্সার জার্সিতে লা লিগায় অভিষেক হয় তাঁর। চারদিকে কিরকিচের নামডাক ছড়িয়ে পড়ে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমগুলো কিরকিচকে নতুন মেসির তকমা দেয়। কিন্তু বেশি দিন তাঁর আলো দেখার সুযোগ পায়নি স্প্যানিশরা। ছন্দহীনতার কারণে ২০১১ সালে বার্সা ছেড়ে এএস রোমাতে যেতে হয়। সেখানেও স্থায়ী হননি। মিলান, আয়াক্স হয়ে বর্তমানে তাঁর ক্লাব জাপানের ভিসেল কোবে, চলে গেছেন পাদপ্রদীপের বাইরে।
হুয়ান আরেভালো
বাঁ পায়ের কারিকুরি আর বল নিয়ন্ত্রণে নিজের মুনশিয়ানার কারণে হুয়ান আরেভালোকে মেসির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন খোদ প্যারাগুয়ের ফুটবল সমর্থকেরা। আক্রমণভাগে আলো ছড়ানো এই উইঙ্গারের সোনালি সময় ২০১১ সাল। তখন পর্তুগালের ক্লাব পোর্তোতে নাম লেখান। উইং থেকে গোলের সুযোগ তৈরি করতেই যেন বেশি পছন্দ করতেন তিনি। কিন্তু ঝড়ের বেগে আসা আরেভালো ধূমকেতুর মতোই হারিয়ে গেছেন। বুয়েনস এইরেসে জন্ম নেওয়া এই ফুটবলার প্যারাগুয়ের জার্সিতে খেলেছেন ১২ ম্যাচ; কিন্তু গোলের নাগাল পাওয়া হয়নি তাঁর। এর মধ্যে ক্লাব ক্যারিয়ারও হয়েছে অনেক লম্বা। কিন্তু কোথাও আর স্থায়ী হতে পারেননি। তাঁর বর্তমান ঠিকানা প্যারাগুয়ের ক্লাব সেরো পোর্তেনো।
দিয়েগো লাইনেজ
২০১৭ সালে তাঁকে নিয়ে তুমুল আলোচনা। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান সে বছর বিশ্বের ৬০ সেরা তরুণ ফুটবলারের একটা প্রতিবেদন ছাপায়। যেখানে জায়গা করে নেন লাইনেজ। এরপর ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত টানা তিন বছর ফুটবলবিষয়ক জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গোলডটকমের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের তালিকায়ও ছিলেন তিনি। বাঁ পায়ের দক্ষতার জন্য তাঁকে মেসির উত্তরসূরি ভাবেন অনেকেই। কিন্তু তিনিও বেশি দিন দ্যুতি ছড়াতে পারেননি। লা লিগার ক্লাব বেতিসে ২০২৩ পর্যন্ত খেলার পর বর্তমানে তাঁর ঠিকানা মেক্সিকান ক্লাব টাইগ্রেস। জাতীয় দলেও সেভাবে ধারাবাহিক নন মেক্সিকান ফরোয়ার্ড। বয়সভিত্তিক দল মাতিয়ে ২০১৮ সালে মেক্সিকোর জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া এই উইঙ্গারের গোল মাত্র তিনটি।
তাকেফুসা কুবো
২৩ বছর বয়সী তাকেফুসাকে এখনো জাপানি মেসি বলে ডাকেন অনেকে। ডান উইংয়ের পাশাপাশি আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবেও খেলতে পারা এই তরুণের শুরু আর বর্তমান মোটেও এক নয়। ২০১১ সালে বার্সার যুব দলে জায়গা পেয়েছিলেন কুবো। চার বছরের মতো সেখানে ছিলেন। তখনই মূলত তাঁর খেলার ধরণে মেসির সঙ্গে একটা মিল পাওয়া যায়। এতেই তিনি নাম পেয়ে যান জাপানি মেসি; কিন্তু সেই জাপানি মেসি নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলে তো! সিনিয়র ক্যারিয়ারে রিয়াল মাদ্রিদ তাঁকে বড় আশা করে দলে টানলেও তাদের আশার গুড়ে বালি পড়ে। এরপর ধারে মধ্যেই পার করেছেন ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল। বর্তমানে রিয়াল সোসিয়েদাদে খেলা এই জাপানি ১২৭ ম্যাচে করেছেন মোটে ২৩ গোল।
জিওভানি দস সান্তোস
বাবা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার জিজিনিও। যদিও মা মেক্সিকান হওয়ায় মেক্সিকোকে বেছে নেন ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। বেশ প্রতিভাবান ফুটবলার ছিলেন জিওভানি দস সান্তোস। বিশেষ করে মাঝমাঠ থেকে ফরোয়ার্ডদের দারুণ সহযোগিতা করে সবার নজরে এসেছিলেন। পাশাপাশি ড্রিবলিংয়েও মুগ্ধতা ছড়িয়েছিলেন। ২০১০ সালে স্প্যানিশ সাপ্তাহিক ডন ব্যালনের সেরা ১০০ তরুণ ফুটবলারের তালিকায় জায়গা করে নেন। তাঁরও চমক দেখানো বার্সার যুব দল দিয়ে। সময়টা ২০০২ থেকে ২০০৬। এই বছরগুলোয় বার্সার যুবদলে ভালো ফুটবল খেলে বার্সার ‘বি’ দলে ডাক পেয়ে যান। এর পরই শুরু হয় তাঁকে নিয়ে আলোচনা। কেউ দস সান্তোসকে মেসির উত্তরসূরি, কেউ তাঁর মধ্যেই মেসির ছায়া খুঁজে পান। কিন্তু যাঁকে নিয়ে একটা সময় এত আলোচনা ছিল, তিনি এখন অনেকটাই নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন।
আলেন হালিলোভিচ
১৯৯৬ সালে জন্ম নেওয়া এই ক্রোয়াট মিডফিল্ডারের নামের পাশে মেসির নামটা যুক্ত হয় ২০১৪ সালের দিকে। তখন দিনামো জাগরেভ ছেড়ে মাত্রই বার্সার ‘বি’ দলে যোগ দিয়েছেন। যদিও মূল দলে নিয়মিত হওয়ার সুযোগই হয়নি তাঁর। এরপর এসি মিলান, বার্মিংহাম সিটিসহ ১০টির বেশি ক্লাবে ঘুরেছেন। কিন্তু কোথাও সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দলেও বেশি দিন নিয়মিত হতে পারেননি। ২০১৩ সালে দেশের জার্সিতে মাঠে নামা এই মিডফিল্ডার এখন আর কোনো আলোচনায়ই নেই।
লি সিউং–উ
২০১১ সালে বার্সার যুব দলে জায়গা করে নেওয়া এই উইঙ্গারকে কিছুদিন মেসির সঙ্গে তুলনা করেন কাতালানরা। এর পেছনে বড় কারণ ছিল প্রতিপক্ষের গোলমুখে তাঁর ড্রিবলিংয়ের নজরকাড়া দক্ষতার কারণে। সেই দক্ষতার বলে ২০১৬ সালে বার্সার ‘বি’ দলেও জায়গা করে নেন। কিন্তু ‘বি’ দলে আর সেভাবে স্থায়ী হতে পারেননি। এক ম্যাচ খেলেই তাকে নতুন ঠিকানা হেল্লাস ভেরোনাতে নাম লেখাতে হয়। এর পরই মূলত হারিয়ে যাওয়া! দক্ষিণ কোরিয়ার বয়সভিত্তিক দলে খেলে ২০১৮ সালে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছিলেন। কিন্তু পুরোনো সেই জৌলুস যে আর দেখাতে পারছেন না। বর্তমানে কোরিয়ান ক্লাব জিওনবুক হুন্ডাই মোটরসই তাঁর ঠিকানা।
লুয়ান ভিয়েরা
শুরুটা ব্রাজিলের ক্লাব তানাবি দিয়ে। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলা এই ব্রাজিলিয়ান ২০১৪ সালেই প্রথম আলোচনায় আসেন। স্বদেশি ক্লাব গ্রেমিওতে নাম লেখানোর পরই তাঁকে নিয়ে শোরগোল শুরু হয়। প্রথম মৌসুমে বল পায়ে নৈপুণ্য দেখানোর পর তাঁকে মেসির সঙ্গে তুলনা করা শুরু করেন অনেকেই। এই গ্রেমিওতে দুই শতাধিক ম্যাচ খেলা ভিয়েরা ধীরে ধীরে নিজের শুরুর ঝলকটা হারিয়ে ফেলেন। ২০১৯ সালে তাঁকে ছেড়ে দেয় গ্রেমিও। এরপর সান্তোস হয়ে আবার ২০২৩ সালে গ্রেমিওতে ফেরেন; কিন্তু সেখানে আর বেশি দিন থাকা হয়নি। ২০২৪ সালে ব্রাজিলের আরেক ক্লাব ভিতোরিয়ায় যোগ দিলেও আগের মতো মাঠে পারফর্ম করতে পারছেন না তিনি। এর মধ্যে ২০১৭ সালে ব্রাজিলের জার্সিতে অভিষেক হওয়ার পরও একাদশে নিয়মিত হতে পারেননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র স র য ব দল জ ত য় দল নত ন ম স ফ টবল র ন ফ টবল ন অন ক প র নন
এছাড়াও পড়ুন:
জুমে ভুয়া সাক্ষাৎকারের ফাঁদ
ভিডিও সম্মেলন বা সভা করার সফটওয়্যার জুমে অভিনব কৌশলে প্রতারণা করছে ‘এলুসিভ কমেট’ নামের একটি সংঘবদ্ধ হ্যাকার গ্রুপ। জুমে ভুয়া সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবহারকারীদের কম্পিউটারে থাকা সংবেদনশীল তথ্য ও ডিজিটাল মুদ্রা চুরি করছে তারা। সম্প্রতি জুম ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে পরিচালিত এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা শনাক্ত করেছে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ট্রেইল অব বিটস।
ট্রেইল অব বিটস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে হ্যাকাররা নিজেদের ‘ব্লুমবার্গ ক্রিপ্টো’র গবেষক বা সাংবাদিক পরিচয়ে ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর এক্স (সাবেক টুইটার) বা ই-মেইলে ব্যবহারকারীদের ভিডিও সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য একটি লিংক পাঠায় হ্যাকাররা। পুরো যোগাযোগ প্রক্রিয়াটি এতটাই পেশাদার ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সন্দেহ করার সুযোগ থাকে না বললেই চলে।
নির্ধারিত সময়ে জুম মিটিং শুরু হলে প্রতারকেরা স্ক্রিন শেয়ার সুবিধা চালু করে এবং রিমোট কন্ট্রোল প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুরোধ পাঠায়। এখানেই থাকে প্রতারণার মূল ফাঁদ। হ্যাকাররা জুমে নিজেদের নাম বদলে রাখে ‘জুম’। ফলে ভুক্তভোগীর স্ক্রিনে যে অনুমতির অনুরোধটি আসে, তাতে লেখা থাকে, ‘জুম ইজ রিকোয়েস্টিং রিমোট কন্ট্রোল অব ইউর স্ক্রিন’। এতে অনেকেই মনে করেন, এটি জুম কর্তৃপক্ষ পাঠিয়েছে। এর ফলে না বুঝেই অনুমতি দিয়ে দেন তারা।
আরও পড়ুনজুম সভায় স্ক্রিন শেয়ার করবেন যেভাবে০৫ নভেম্বর ২০২৩ট্রেইল অব বিটসের তথ্যমতে, একবার অনুমতি দিলে হ্যাকাররা পুরো কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। এরপর তারা সংবেদনশীল তথ্য চুরি, ডিজিটাল মুদ্রা সংগ্রহ বা দূর থেকে ম্যালওয়্যার ইনস্টল করার মতো কাজ করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তারা ‘ব্যাকডোর’ স্থাপন করে রাখে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে যেকোনো সময় দূর থেকে গোপনে যন্ত্রে প্রবেশ করা যায়।
আরও পড়ুনজুমে যুক্ত হচ্ছে নতুন এআই ফিচার, যে সুবিধা পাওয়া যাবে২১ মার্চ ২০২৫এই প্রতারণার সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো অনুমতির চাওয়ার বার্তাটি দেখতে জুমের সাধারণ নোটিফিকেশনের মতো। এর ফলে অনেকেই অনুমতি দিয়ে দেন, বুঝতে পারেন না যে তাঁরা আসলে হ্যাকারদের হাতে নিজের যন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিচ্ছেন।
সূত্র: ব্লিপিং কম্পিউটার
আরও পড়ুনজুম মিটিংয়ে মাইক্রোফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ রাখবেন যেভাবে২৬ এপ্রিল ২০২২